সমালোচনার মুখে গণমাধ্যম কর্মী আইন
১ এপ্রিল ২০২২২৮ মার্চ প্রস্তাবিত আইনটি সংসদে উত্থাপন করা হয়৷ টিআইবি এরই মধ্যে বিবৃতি দিয়ে আইনটির বেশ কিছু ধারার সমালোচনা করেছে৷ তবে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী শুক্রবার ঢাকায় তার বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে টিআইবির সমালোচনা করে বলেছেন, ‘‘কর্মপরিধির বাইরে গিয়ে কথা বলা টিআইবির অভ্যাসে পরিণত হয়েছে৷ এই প্রস্তাবিত আইন আইন দুর্নীতির কোনো বিষয় নয়৷’’
তবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এমপি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা আইনটি পর্যালোচনা করে দেখবো৷ অংশীজনের সঙ্গে কথা বলবো৷ তারপর আমরা আমাদের মতামত দেবো৷’’
বিএফইউজের সভাপতি মো. ওমর ফারুক দাবি করেন, প্রস্তাবিত আইনটির ৫৪টি ধারার মধ্যে ৩৭টি ধারাই সাংবাদিকবান্ধব নয়৷ এই আইনটি মালিকদের সুবিধার জন্য করা হয়েছে৷ সবচেয়ে বড় কথা হলো, আইনটি পাস হলে সাংবাদিকরা রুটি-রুজি এবং অধিকার আদায়ের জন্য ট্রেড ইউনিয়ন করতে পারবেনা৷ তারা শ্রম আইনের সুবিধা পাবেন না৷’’
তিনি বলেন, ‘‘এই আইনে সাংবাদিকদের চাকরিজীবন শেষে সার্ভিস বেনিফিট অর্ধেক করে দেয়া হয়েছে৷ আগে গ্র্যাচুইটির বিধান ছিল প্রতিবছর দুইটি, এখন একটি করা হয়েছে৷ আগে বিনোদন ছুটি তিন বছরে ৩০ দিন ছিল, সেটা কেটে ১৫ দিন করা হয়েছে৷ সাংবাদিক ইউনিয়ন করার অধিকার খর্ব করা হয়েছে৷ কল্যাণ সমিতির কথা বলা হয়েছে৷ কিন্তু কোনো সাংবাদিক যদি অন্য হাউজের সহকর্মীর বিপদে ছুটে যেতে চান, তাকে ছুটি নিয়ে যেতে হবে, অন্যথায় শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে৷’’
তিনি বলেন, এই আইনে ঢাকার বাইরের সাংবাদিকদের জন্য কিছু বলা হয়নি৷ ‘সম্পাদক’ শব্দটি নেই৷ এটা একটা অসম্পূর্ণ এবং ত্রুটিপূর্ণ আইন৷
এই আইনে সাংবাদিকদের মাসের বেতন প্রথম সাত কর্মদিবসের মধ্যে দেয়ার কথা বলা হয়েছে৷ কিন্তু না দিলে কী হবে তা বলা হয়নি৷ তবে নিম্নতম হারের চেয়ে কম বেতন দিলে এক বছরের কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অথবা উভয় দণ্ডের কথা বলা হয়েছে৷ শ্রম আদালত নয়, সাংবাদিকদের জন্য নতুন ‘গণমাধ্যম আদালতের’ কথা বলা হয়েছে৷ সাংবাদিক ছাঁটাই, বরখাস্তের বিধানে সরকারকে অবহিত করার বিষয় রয়েছে৷ আর অসদাচরণের জন্য বরখাস্তের কথা বলা হলেও অসদাচরণের কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি৷ ওয়েজবোর্ড সরকার গঠন করবে বলা হলেও তা বাধ্যতামূলক করা হয়নি৷
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘‘এই আইনটি হলো সাংবাদিক এবং সংবাদকর্মীদের সুরক্ষা এবং অধিকার নিশ্চিত করার জন্য৷ কিন্তু এই আইনে কিছু ভালো দিক থাকলেও সেই অধিকার ও সুরক্ষা কতটা নিশ্চিত হবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে৷ বলা হয়েছে সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা কাজ করতে হবে৷ এটা কিসের ভিত্তিতে বলা হলো? খাবার ও বিশ্রামের সময় কোথায়? পৃথিবীর কোনো দেশেই সপ্তাহে ৩৫-৪০ ঘণ্টার বেশি কাজ করার বিধান নেই৷ সপ্তাহে একদিন ছুটির কথা বলা হয়েছে৷ কিন্তু দেশে দুইদিন ছুটি প্রচলিত৷ গণমাধ্যমকর্মীদের ৪৮ ঘণ্টার পরে ওভারটাইম করানো যাবে৷ কিন্তু সেটা সর্বোচ্চ কত ঘণ্টা আর ওভারটাইমের ভাতার হিসাব কী হবে তা-ও বলা নেই৷ এই বিষয়গুলোকে আমরা বৈষম্যমূলক বলে মনে করি৷’’
তার মতে, ‘‘সংবাদমাধ্যমের মালিক বা মালিকানা শব্দটি নেতিবাচক৷ ওয়েজ বোর্ড গঠন বাধ্যতামূলক না করায় সরকার যাতে ওয়েজবোর্ড গঠন না করতে পারে মালিকরা সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে৷’’
তিনি তাই মনে করেন, এই আইন পাস করার আগে অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলে গণমাধ্যমকর্মীবন্ধব করা দরকার৷
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ টিআইবির বক্তব্যের সমালোচনা করে শুক্রবার বলেছেন, ‘‘টিআইবি আগ বাড়িয়ে বিবৃতি দিয়ে বিষয়টিকে রাজনৈতিক করার চেষ্টা করছে৷ এর মধ্যে কোনো উদ্দেশ্য আছে৷ আইনটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে আছে৷ সাংবাদিক নেতাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে আইনটি পরিবর্ধন-পরিমার্জন করা হবে৷’’
আর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘‘আমরা প্রস্তাবিত আইনটি নিয়ে বাইরে সমালোচনা শুনেছি৷ তবে অংশীজনরা এখনো আমাদের কিছু বলেননি৷ আমরা তাদের মতামত দিতে আহ্বান জানাবো৷ তারাও আমাদের কাছে আসতে পারেন৷ সবার কথা শুনে আইনটি নিয়ে আমরা মতামত দেবো৷ আমরা চাই এই আইনটি যেন গণমাধ্যমকর্মীবান্ধব হয়৷ এটা পুরো সংবাদমাধ্যমের জন্য কোনো আইন নয়৷ এটা সাংবাদিক এবং সংবাদকর্মীদের জন্য আইন৷ সুতরাং তাদের কথাই আমাদের বিবেচনায় থাকবে৷’’
তার কথা, ‘‘আমরা কমিটির সদস্যরা এই আইনটিকে প্রথমে পর্যালোচনা করবো৷ তারপর সবার সাথে কথা বলবো৷ আমাদের হাতে ৬০ দিন সময় আছে৷ প্রয়োজনে সময় বাড়িয়ে নিতে পারবো৷ মন্ত্রীর কিছু করার নেই৷ আমাদের ওপর কোনো চাপ নেই৷’’