সমাবেশে জামায়াত নেই
২১ জানুয়ারি ২০১৪
মঞ্চে তো নয়ই, এমনকি সমাবেশেও জামায়াত-শিবিরের কোনো ব্যানার-ফেস্টুনও দেখা যায়নি৷ দেখা যায়নি তাদের নেতাদের মুক্তির দাবি লেখা প্ল্যাকার্ড৷ মঞ্চে জামায়াত নেতার জন্য নির্ধারিত আসনে এবার দেখা গেছে জাতীয় পার্টির একাংশের নেতা কাজী জাফর আহমেদকে৷ এছাড়া সমাবেশে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, বর্তমান সরকার অল্প সময়ের মধ্যেই বিদায় নেবে৷ তবুও তিনি নির্বাচনের জন্য সংলাপের আহ্বান জানান সরকারকে৷
গত ১৫ই জানুয়ারি বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ১৮ দলের পক্ষ থেকে সোমবার ঢাকায় গণসমাবেশ ও সারা দেশে প্রতিবাদ সমাবেশের কর্মসূচি দেন৷ আর ১৯শে জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনালের ডা. শফিকুর রহমান ১৮ দলের এই গণসমাবেশ সফল করতে তাদের নেতা-কর্মীসহ সবার প্রতি আহ্বান জানান বিবৃতির মাধ্যমে৷ তবে সোমবার বিকেলের এই সমাবেশে শেষ পর্যন্ত দেখা যায়নি জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের৷
এ ঘটনা বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে৷ এমনকি সমাবেশে আসা বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও এ নিয়ে পরস্পরের কাছে জানতে চান, কথা বলেন৷ কারণ গত এক বছর ধরে ১৮ দলের যে কোনো সমাবেশে জামায়াত-শিবিরের নেতারা প্রবলভাবে উপস্থিত থেকেছেন৷ নেতারা একই মঞ্চে বসেছেন আর একাধিক নেতা বক্তৃতা করেছেন৷
অথচ সাধারণত, সমাবেশের সামনের জায়গা থাকতো জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের দখলে৷ পুরো সমাবেশ স্থলে জামায়াত এবং তাদের নেতারদের মুক্তির দাবি লেখা ব্যানার, ফেস্টুন আর প্ল্যাকার্ডে ভরে যেত৷ এছাড়া ১৮ দলের সরকার বিরোধী হরতাল অবরোধে জামায়াত-শিবিরই ছিল মূল শক্তি৷
নেতারা যা বলেন
সমাবেশে জামায়াত না থাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আহমেদ আজম খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি এখন ব্যস্ত আছি, পরে কথা বলেন৷'' তবে চেয়ারপার্সনের আরেকজন উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গণসমাবেশটি ছিল বিএনপির, ১৮ দলের নয়৷ তারপরও জোটের শরীক অন্যান্য দলের নেতারা এসেছেন৷ কিন্তু জামায়াত আসেনি৷ তাদের আসায় কোনো বাধা ছিল না৷ আসলে আসতে পারতেন৷ কেন আসেননি তা জামায়াত নেতারাই ভালো বলতে পারবেন৷ তবে তাদের কিছু সমস্যা আছে, যা সবাই জানে৷'' কিন্তু কি ধরণের সমস্যা আছে, তার ব্যাখ্যা দেননি তিনি৷
এটা জামায়াতকে জোট থেকে বাদ দেয়ার কোনো ইঙ্গিত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘বিএনপির সমাবেশে যোগ না দেয়ার সঙ্গে জোটে থাকা না থাকার কোনো সম্পর্ক নেই৷'' খালেদা জিয়া তো ১৫ই জানুয়ারি কর্মসূচি ঘোষণার সময় ১৮ দলের গণসমাবেশের কথা বলেছেন৷ এর জবাবে দুদু বলেন, ‘‘রবিবার সংবাদ সম্মেলনে তা পরিষ্কার করা হয়েছে৷ বলা হয়েছে বিএনপির সমাবেশ৷ সমাবেশের ব্যানারে বিএনপির গণসমাবেশের কথা লেখা ছিল৷''
এ ব্যাপারে জামায়াতের বক্তব্য জানতে কোনো নেতাকেই পাওয়া যায়নি৷ তবে সোমবার সন্ধ্যায়ও জামায়াতের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের সমাবেশকে ‘১৮ দলের গণসমাবেশই' বলা হয়েছে৷
জামায়াত নিয়ে যত কথা
৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংলাপ এবং সমঝোতার জন্য বিএনপিকে আগে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগের আহ্বান জানান৷ বিদেশি কূটনীতিকরা সহিংসতা ছাড়তে বলেন বিএনপিকে৷ ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সন্ত্রাসী দলকে নিষিদ্ধ করার কথা বলে৷ আর বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাত্কারে বলেন, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট স্থায়ী নয়৷ বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের আদর্শিক মিল নেই৷ এটা নির্বাচনি জোট৷ এছাড়া বিএনপি নেতা শাহজাহান ওমর বলেছেন, সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করলে বিএনপি বেঁচে যায়৷ বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আহমেদ আজম খান গত সপ্তাহে ডয়চে ভেলেকে বলেন, সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করলে বিএনপির সঙ্গে তাদের আর জোট থাকবে না৷ জানা গেছে, নেতাদের মন্তব্য আর পরিস্থিতির কারণে জামায়াত সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের সমাবেশে যায়নি৷ অন্যদিকে, বিএনপিও বিষয়টি সুবিধাজনক হিসেবেই নিয়েছে৷ তবে চট্টগ্রামের সমাবেশে বিএনপির সঙ্গে জামায়াত ছিল বলে জানা গেছে৷
সমাবেশে খালেদা জিয়া
সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের গণসমাবেশে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করায় দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানান৷ তিনি বলেন, ‘‘এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে একটি কলঙ্কিত সরকার গঠিত হয়েছে৷ আগামী ২৯শে জানুয়ারি যে দশম জাতীয় সংসদ বসবে, সেখানে কোনো সংসদ সদস্য থাকবেন না, বরং থাকবে কিছু সং৷''এর প্রতিবাদে তিনি ২৯শে জানুয়ারির কালো পতাকা মিছিল সফল করার আহ্বান জানান তিনি৷
খালেদা জিয়া বলেন এই সরকার মনে করছে যে তারা নানা কৌশলে বেশি দিন টিকে থাকবে৷ তারা টিকে থাকতে পারবে না৷ অল্প সময়ের মধ্যেই তাদের বিদায় নিতে হবে৷ তখন জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে৷ তাই তিনি নির্বাচন নিয়ে সরকারকে আবারো সংলাপ এবং সমঝোতার আহ্বান জানান৷
খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, যৌথ বাহিনীর অভিযানের নামে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের আটক এবং দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে৷ তিনি নির্যাতন বন্ধ এবং সরকারকে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানান৷
সমাবেশে জামায়াত না থাকলেও ১৮ দলের শরীক জাগপা, কল্যাণ পার্টি, লেবার পার্টি, এনপিপি, ইসলামিক পার্টি, এনডিপি ও ন্যাপসহ সমমনা অন্যান্য দলের নেতারা ছিলেন৷