সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন সামাজিক ব্যবসা- ড. ইউনুস
৭ নভেম্বর ২০১০ঘড়ির কাটায় তখন দুপুর একটা৷ শনিবার৷ ডয়চে ভেলে অফিসের খুব কাছে অবস্থিত বন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ ভবন৷ সেখানকার হল ভর্তি মানুষ৷ আমন্ত্রিতরা এসেছেন দারিদ্র হটাও আন্দোলনের বতর্মান সময়ের নায়ক গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুসের বক্তব্য শোনার জন্য৷ ঘরটির ঠিক সামনে রাখা টেবিলে বসলেন ড. ইউনুস৷ গবেষণা সংস্থার কর্তাব্যক্তি যখন ঘোষণা দিলেন তখন আগতদের মাঝে আনন্দ৷
স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে বক্তব্য রাখতে শুরু করলেন তিনি৷ টানা একঘন্টা বক্তব্য রাখলেন প্রফেসর৷ এ সময় ছিল পিনপতন নিরবতা৷ এরপর আগতদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর৷ আর তারপরই একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন ডয়েচে ভেলেকে৷
জানতে চেয়েছিলাম, সামাজিক ব্যবসার যে কথা তিনি বলছেন, তার অগ্রগতি কতদূর? তিনি বললেন, ‘সামাজিক ব্যবসা সম্পর্কে আমরা নানা জায়গায় বলছি৷ খুবই আগ্রহ দেখা যাচ্ছে সর্বত্র৷ এ নিয়ে আমার একটি বই প্রকাশিত হবার পর বিভিন্ন দেশ থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে৷ সম্প্রতি বইটির জার্মান অনুবাদ প্রকাশিত হলো৷ এরপর এখানে আরও আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে৷ জার্মানির বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আমাদের সঙ্গে সামাজিক ব্যবসা সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য এগিয়ে এসেছে৷' তিনি বললেন, ‘মানুষের সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন সামাজিক ব্যবসা৷'
তিনি জানান, ‘জার্মান কোম্পানি বিএসএফের সঙ্গে নতুন একটি চুক্তি তারা করেছেন৷ চুক্তি হয়েছে আডিডাসের সঙ্গে৷ ব্যবসা হচ্ছে অটো গ্রুপকে সঙ্গে নিয়েও৷ এ সবগুলোই শুরুর পর্যায়ে আছে৷'
বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে মিলিত হয়ে এ ধরণের কোন কাজ করা যায় কি না? এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সম্ভব৷ যে কোন লোক বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এই কাজ করা যায়৷' তবে তিনি জানান, ‘এ ধরণের উদ্যোগ এখনো নেই গ্রামীণের৷' তিনি বলেন, ‘আমরা যদি একশ টাকায় মানুষকে উন্নত এক জোড়া জুতো দিতে পারি, তাহলে তারা খালি পায়ে হাঁটবে না৷ আর এর ফলে রোগ ঢুকবে না শরীরে৷ আমরা যদি নাগালের মধ্যে রাখা দামে দিতে পারি মশারি, তাহলে মশাবাহিত রোগ থেকে তারা রক্ষা পাবে৷ এসবই হচ্ছে সামাজিক ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য৷
তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল বর্তমান সময়ে গ্রামীণ ব্যাংক বা গ্রামীণ পরিবারের অগ্রগতিতে এখন, এত বছর পর, তাঁর অনুভুতিটা কেমন? উত্তরে ড. ইউনুস বললেন, ‘ভালো লাগছে৷ এত বছর পরে অনেক দূর এসেছে গ্রামীণ পরিবার৷ এর কাজের ফলে অনেক পরিবর্তন হয়েছে, মানুষের মধ্যে অনেক পরিবতর্ন এসেছে, পরিবর্তন এসেছে তাদের সন্তানদের মধ্যেও৷ পারিবারিকভাবে তারা এখন অনেক উন্নততর অবস্থায় আছেন৷ গ্রামীণ ব্যাংক সম্প্রসারিত হয়েছে৷ সবকিছু মিলিয়ে এটা নি:সন্দেহে আনন্দের বিষয়৷'
তিনি আধুনিক এই সময়ে প্রযুক্তির সহায়তায় কথা উল্লেখ করে বললেন, ‘আমাদের দেশে চিকিৎসা সুবিধার বাইরে অনেক মানুষ৷ চিকিৎসকরা গ্রামে যেতে চায় না৷ আর যদি গ্রাম থেকে প্রযুক্তি ব্যবহারে রোগীর রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষার ফলাফলগুলো শহরে ডাক্তারের কাছে পাঠিয়ে দেয়া যায়, তাহলে সে সেখানে বসেই ব্যবস্থাপত্র দিতে পারবে৷ সময় বাঁচবে, চিকিৎসার সুযোগ বঞ্চিত হবেন না গ্রামের মানুষ৷ তাই নতুন ধারণায় আমাদের প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে৷'
তাঁকে শেষ প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি কেমন আছেন? এক কথায় তিনি বললেন, ‘আমি ভালো আছি৷'
প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার
সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম