সন্ত্রাস ইস্যুতে নিশানা পাকিস্তান
৬ ডিসেম্বর ২০১৬ভারতের অমৃতসরে দু'দিনের ষষ্ঠ ‘হার্ট অফ এশিয়া' শীর্ষ সম্মেলনের শীর্ষবিন্দু ছিল সন্ত্রাস৷ সম্মেলন শেষে প্রকাশিত অমৃতসর ঘোষণাপত্রে এই অঞ্চলের, বিশেষ করে আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠিগুলির কার্যকলাপে গভীর উদ্বেগ প্রকাস করা হয়৷ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলির মধ্যে প্রথম সারিতে আছে তালিবান, আল-কায়েদা, ইসলামিক স্টেট, লস্কর-ই-তৈয়বা, জয়স-ই-মহম্মদ৷ এই প্রথম এলইটি এবং জেইএমকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷ সম্মেলনে যোগদানকারী ৪০টি দেশের মন্ত্রী ও প্রতিনিধিরা এক বাক্যে সন্ত্রাসীদের আর্থিক সাহায্য, আশ্রয়দান, রসদ জোগানোসহ সব রকমের মদত দেওয়া বন্ধ করার দাবি জানান৷ বলা হয়, এই অঞ্চলের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও পারস্পরিক সহযোগিতার পক্ষে সন্ত্রাস এক বিরাট হুমকি৷ সন্ত্রাসের লাগাতার শিকার আফগানিস্তানকে সাহায্য করতে বিশ্বের দেশগুলির প্রতি আহ্বান জানানো হয়৷
সম্মেলনে এ বিষয়ে পাকিস্তানকে সরাসরি নিশানা করেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি৷ অভিযোগ করেন, তালিবানসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলিকে মদত দিয়ে এবং পাকিস্তানের মাটিতে নিরাপদ ঘাঁটি গাড়তে সাহায্য কোরে পাকিস্তান তাঁর দেশের বিরুদ্ধে এক অঘোষিত যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে৷ আফগানিস্তানকে দেওয়া পাকিস্তানের ৫০ কোটি ডলার সাহায্যদানকে কটাক্ষ করে আফগান প্রেসিডন্ট বলেন, পাকিস্তান এই অর্থ সন্ত্রাসবাদ দমনে ব্যয় করলে আরও ভালো হতো৷ তালিবানের মতো সন্ত্রাসবাদীরা পাকিস্তানে নিরাপদ আশ্রয় না পেলে এক মাসের বেশি টিকতে পারতো না৷
একই সুরের প্রতিধ্বনি করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিশ্ব সমাজ যদি সন্ত্রাস ইস্যুতে নীরব ও নিষ্ক্রিয় থাকে, তাহলে সন্ত্রাসীদের সাহস বাড়বে, তাদের তত্পরতা বাড়বে৷ সম্মিলিত ইচ্ছাশক্তি যদি প্রয়োগ করা না হয়, তাহলে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি বিঘ্নিত হবে৷ যৌথভাবে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি৷
সম্মেলনে উপস্থিত পাকিস্তানের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা সারতাজ আজিজ সন্ত্রাস ইস্যুতে পাকিস্তানের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেন, পাকিস্তানকে আসামির কাঠগোড়ায় দাঁড় করানোর ভারত ও আফগানিস্তানের প্রচেষ্টা নেহাতই অতি সরলীকরণ৷ আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি খুবই জটিল৷ সহিংসতা বেড়ে চলার জন্য একটা দেশকে দায়ী করা যায় না৷ এরজন্য দরকার বস্তুনিষ্ঠ এবং সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি৷ ভারতের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ রেখা এবং আন্তর্জাতিক সীমান্তে উত্তেজনা সত্ত্বেও তিনি ভারতে এসেছেন ‘হার্ট অফ এশিয়া' সম্মেলনে এই বার্তাই দিতে যে, এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পাকিস্তান প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ এ বিষয়ে রাশিয়ার কাছ থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে সমর্থন পায় পাকিস্তান৷ রাশিয়া মনে করে, আফগান প্রেসিডেন্টের অভিযোগ অস্বীকার না করেও বলা যায় ‘হার্ট অফ এশিয়া' সম্মেলন এ নিয়ে আলোচনার উপযুক্ত স্থান নয়৷
সম্মেলনে সারতাজ আজিজের উপস্থিতি এবং প্রধানমন্ত্রী মোদী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালকে তাঁর সঙ্গে মিলিত হতে দেখে কূটনৈতিক মহলে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা আবার শুরু করার এক প্রাথমিক উদ্যোগ বলে মনে করা হয়৷ কিন্তু ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র দ্ব্যর্থহীনভাবে তা অস্বীকার করেন৷ বলেন, নৈশভোজের পর এক সৌজন্যমূলক সাক্ষাত ছাড়া আর কিছুই না৷ দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে কোনো কথাই হয়নি৷ এমনকি নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে সারতাজ আজিজকে অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দিরে যেতে দেওয়া হয়নি৷ এ জন্য দিল্লির পাকিস্তান হাইকমিশন থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়৷
ভারত, ইরান ও আফগানিস্তানের মধ্যে ছাবাহার পরিবহণ বন্দর সংক্রান্ত ত্রিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরকে সম্মেলনে স্বাগত জানানো হয়৷ বলা হয়, মধ্য এশিয়া তথা বিশ্ব বাণিজ্যে এই পরিবহন করিডর এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হবে৷