সঠিকভাবে ব্লাডপ্রেশার মাপুন, চিন্তামুক্ত থাকুন
শরীরে রক্তচাপ বেড়ে গেলে ব্যথা না হওয়ায় অনেকেই তা জানতে বা বুঝতে পারেন না৷ তবে এমনটা বেশিদিন চললে হৃৎপিণ্ড, মস্তিষ্ক, কিডনি এবং ধমনীর মারাত্বক ক্ষতি হতে পারে৷ জেনে নিন ‘ব্লাড প্রেশার’ নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য...
গোপন অসুখ
সাধারণত যাঁদের প্রেশার ‘লো’ তাঁদের চেয়ে, যাঁদের প্রেশার ‘হাই’ তাঁরা শারীরিকভাবে ভালো বোধ করেন৷ তাই অনেকে জানেনই না যে তাঁদের উচ্চ রক্তচাপ আছে৷ তবে এমনটা বেশিদিন ধরে চললে তা হৃৎপিণ্ড, মস্তিষ্ক, কিডনি ও ধমনীর মারাত্বক ক্ষতি করতে পারে৷ বিশেষ করে যাঁদের পরিবারে উচ্চ রক্তচাপের ইতিহাস রয়েছে বা যাঁরা কর্মক্ষেত্রে, পরিবারে বা অন্য কোনো কারণে প্রচণ্ড চাপে থাকেন, তাঁদের এই ক্ষতি এড়াতে প্রেশার মাপা উচিত৷
সঠিক ফলাফল পেতে...
প্রেশার মাপার আধঘণ্টা আগে চা, কফি পান বা ভরপেট খাওয়া উচিত নয়৷ ধূমপান, শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করলেও একই নিয়ম প্রযোজ্য৷ তাই উত্তেজনা এড়িয়ে প্রেশার মাপার পাঁচমিনিট আগে একটু শান্ত হয়ে বসুন৷ বাহুবন্ধনী যাতে বাহুতে সঠিকভাবে লাগানো যায়, সেই দিকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে৷ তা না হলে রক্তচাপের ‘রিডিং’ যথার্থ হবে না৷ আর হ্যাঁ, মাপার সময় কোনো কথা নয়৷ একমাত্র তবেই যন্ত্রে সঠিক মাপটি ভেসে ওঠবে৷
‘হাইপারটেনশন’ ও উচ্চ রক্তচাপ
রক্তচাপ যদি ১৪০/৯০-এর মধ্যে হয়, তাহলে চিন্তার কারণ নেই৷ এর বেশি হলে তাকে ‘হাইপ্রেশার’ বা উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়৷ এ সমস্যা ধরা পড়লে, অন্তত সাতদিন সকাল-সন্ধ্যা নিয়মিত প্রেশার মেপে নোট করে রাখুন এবং প্রয়োজনে ২/১ মিনিটের ব্যবধানে ২-৩ বার করে মাপুন যাতে ডাক্তারকে জানানো যায়৷ কোনো উত্তেজনায় রক্তচাপ কিছুটা বাড়তে পারে, তবে নিয়মিত উচ্চ রক্তচাপ থাকা কোনো কঠিন রোগের লক্ষণ হতে পারে৷ডাক্তারের পরামর্শ নিন৷
ছুটিতে গেলেও মাপা চাই...
ছুটিতে গেলেও নিয়মিত ব্লাডপ্রেশার মাপা উচিত৷ যেহেতু ছুটিতে মানুষ অন্য মেজাজে এবং বিশ্রামে থাকে, সে সময়ে ভালোভাবে বোঝা যায় যে, এই উচ্চ রক্তচাপ দৈনন্দিন চাপের কারণে হচ্ছে না এর পেছনে অন্য কোনো অসুখ লুকিয়ে রয়েছে৷ তাই উচ্চ রক্তচাপের আসল কারণ খুঁজে বের করতে অবশ্যই নিয়ম মেনে ছুটির মধ্যে বা বেড়াতে গেলেও নিয়মিত রক্তচাপ মাপুন৷ আজকাল কিন্তু প্রেশার মাপার নানারকম আধুনিক এবং ‘হ্যান্ডি’ যন্ত্র বেরিয়ে গেছে!
তরুণদের ক্ষেত্রে
যাঁরা প্রতিনিয়ত মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন বা যাঁদের ওজন বেশি কিংবা পরিবারে নিকট আত্মীয়দের মধ্যে কারুর উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে, তাঁরাও কিন্তু কোনোরকম অসুবিধা না হলেও মাঝে-মধ্যে প্রেশার মাপুন৷ একটি সমীক্ষার ফলাফল বলছে, জার্মানিতে ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সি তরুণদের মধ্যে ব্লাডপ্রেশার রোগীর সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে৷ অবশ্য এর প্রধান কারণ হিসেবে শরীরের বাড়তি ওজনকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
‘ইমারজেন্সি’
নিয়মিত দিনের বিভিন্ন সময়ে প্রেশার মাপার পর, উচ্চ রক্তচাপ থাকার পাশাপাশি যদি বুক জ্বালা, ব্যথা বা বুকে চাপ, নিঃশ্বাস নিতে এবং কথা বলতে কষ্ট বা অসুবিধা হওয়া, বমিভাব, নাক দিয়ে রক্তপড়া – এ ধরনের লক্ষণও দেখা দেয়, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে৷ উচ্চ রক্তচাপকে হাল্কা করে নেয়া একেবারেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়!
সচেতনতা
উচ্চ রক্তচাপ যেন না হয় বা হলেও নিয়ন্ত্রণে থাকে, সে জন্য প্রয়োজন সচেতনতা৷পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি,ই, ও আঁশযুক্ত খাবার এ সমস্যাকে দূরে রাখতে সাহায্য করে৷ যা সূর্যমুখী ফুলের বিচি, সীমের বিচি, পুঁইশাক, তরমুজ, কলা ইত্যাদি খাবারে রয়েছে৷ হাই ব্লাডপ্রেশারকে জয় করতে নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম এবং নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন প্রয়োজন৷ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে কোনো চিন্তা নয়, কারণ চিন্তাই রক্তচাপকে আরো বাড়িয়ে দেয়!