সংসদ নির্বাচনে আসছে একঝাঁক নতুন মুখ
১ নভেম্বর ২০১৭আলাপচারিতায় বেশিরভাগ তরুণ রাজনীতিবিদ এক জায়গায় একমত যে, বিভাজন দিয়ে দেশকে এগিয়ে নেয়া যাবে না৷ পুরনো ধ্যান-ধারণা নিয়ে বসে থাকলেও চলবে না৷ এখন প্রয়োজন পরিবর্তন৷ তবে একাজ করতে গিয়ে তাঁরা দলের নিয়ম-কানুন ভেঙে ফেলতে চান না৷ বরং নতুন ও পুরনোর যৌক্তিক সংমিশ্রণ ঘটাতে চান৷ ডয়চে ভেলেকে নিজেদের ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন তাঁরা৷
তরুণ এসব রাজনীতিবিদ মনে করেন শিক্ষিত, মেধাবী ও যোগ্য তরুণদের আরও অংশগ্রহণের মাধ্যমেই দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আসতে পারে৷
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার আহসান হাবীব ভুঁইয়ার সাথে কথা হয় ডয়চে ভেলের৷ আগামী নির্বাচনে নোয়াখালি ২ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী তিনি৷ বলেন, ‘‘প্রবীণ রাজনীতিবিদদের নামের সাথে নেগেটিভ লেবেল থাকে৷ মানুষ মনে করে, রাজনীতিবিদ মানেই গুন্ডা, মাস্তান, চাঁদাবাজ, বদমাশ৷ ভালো, ভদ্র, শিক্ষিক, মার্জিত ছেলেমেয়ারা রাজনীতিতে আসে না৷ এই ধারণার পরিবর্তন করতে চাই৷''
তরুণ এই রাজনীতিবিদ আরো বলেন, ‘‘তরুণদের নিয়ে এর আগে কোনো রাজনৈতিক দল বাংলাদেশে এত কাজ করেনি, দলে এতটা জায়গা দেয়নি৷ আমাদের জনসংখ্যার ৬৪ ভাগ এখন তরুণ এবং তাঁরা ভোটার৷ কাজেই এটিই ‘হাইটাইম' তাঁদেরকে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করার, তাঁদের জন্য কিছু করার৷''
তাঁর মতে, ‘‘তরুণরা সব সময়ই বিশেষ কিছু করে৷ আমাদের তরুণরা এখন আইটি ও আউটসোর্সিংয়ে খুবই ভালো করছে৷ এই সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগাতে হবে৷ স্থানীয় রাজনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণ আরও বাড়ানো্ এবং প্রযুক্তিনির্ভর কাজ আমি ভবিস্যতে করতে চাই৷''
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি মাহজাবিন খালেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পুরনোদের তো মানুষ দেখেছে, দেখেছে তাঁরা কতখানি কাজ করেছেন৷ এবার নতুনদের দেখার সুযোগ দিতে হবে৷ সংরক্ষিত আসনে থেকে কোনো কাজ করার থাকে না৷ তারপরও আমি নিয়মিত এলাকায় যাই৷ তাঁদের (জনগণের) কথা শুনি৷ তাঁদের জন্য কিছু করতে চাই৷ সেকারণেই আগামীতে সরাসরি নির্বাচন করার ইচ্ছা রাখি৷''
মাহজাবিন বলেন, ‘‘আমার দল আওয়ামী লীগের কথাই বলি, সবাই কেবল নেতাদের নিয়ে ব্যস্ত থাকে৷ কিন্তু নেতারাই তো সব নয়৷ তৃণমূলে কাজ করে যে মানুষগুলো, তাঁদের নিয়েও ভাবতে হবে৷ আমার মনে হয়, আমাদের সময়ের মানুষরা, রাজনীতিবিদরা এসব নিয়ে অনেক বেশি ভাববে৷''
গণমাধ্যমে বিএনপিপন্থি আইনজীবী হিসেবে পরিচিত মুখ ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা৷ দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করছেন তিনি৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘রাজনীতি আমার কাছে অনেকটা মানবদেহের মতো৷ মাথা, হাত, পা সবকিছুর যেমন আলাদা আলাদা কাজ আছে, কোনো জায়গাই খাটো করে দেখার মতো নয়, তেমনি দলেও মিছিলের কর্মী যেমন আছে, তেমনি পলিসি মেকিংয়ের জন্যও লোক লাগে৷ আগামী নির্বাচনের ম্যানিফেস্টো কী হবে, সেটা কীভাবে অর্জন করা যাবে, সেসব নিয়ে কেউ কেউ ভাববে৷ এসব কাজে আমার সরাসরি সম্পৃক্ততা আছে৷ আমি যেক্ষেত্রে ভালো করতে পারি সেই ক্ষেত্রেই আমি কাজ করছি৷''
রুমিন ফারহানা জানান, ‘‘সহায়ক সরকারের একটা প্রস্তাব আমরা সহসাই দেবো৷ সেটা তৈরির ব্যাপারে আমি ভূমিকা রেখে যাচ্ছি৷ এছাড়া বিভিন্ন সাংবিধানিক বিষয় অনেক সময় সামনে আসে, সেগুলোর ব্যাখ্যা তৈরির কাজ করি৷ যদি সরাসরি নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রশ্ন আসে, যদি দল মনে করে আমি যোগ্য, তাহলে নির্বাচন করব৷''
তাঁর মতে, ‘‘গত কয়েক বছরে আমাদের দেশ বিভাজনের রাজনীতিতে জড়িয়ে গেছে৷ কেবল তরুণ হলে হবে না, শিক্ষিত, যোগ্য তরুণরাই পারবে এই বিভাজন থেকে দেশকে বের করে আনতে৷ আমি সেই রকম তরুণদেরর প্রতিনিধিত্ব করতে চাই না যারা ব্যক্তি ভাগ্যের পরিবর্তন করতে না পেরে রাজনীতিতে আসে৷ ''
অন্যদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের আইন ও বিচার বিভাগীয় উপদেষ্টা শামীম হায়দার পাটোয়ারীও টেলিভিশনের চেনামুখ৷ এর আগে স্থানীয় নির্বাচনও করেছেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ভোটারদের একটা বড় অংশই হলো তরুণ৷ এদের বেশিরভাগই রাজনীতিবিমুখ৷ তাঁরা রাজনীতিবিমুখ বলেই অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী অথবা দেশপ্রেমিক নয় এমন ব্যক্তি মন্ত্রী, এমপি হয়ে যায়৷ তাই সময় এসেছে তরুণদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করা এবং তাঁদের মাধ্যমেই ভালো জনপ্রতিনিধি তৈরি করার৷ এরা সম্পৃক্ত হলে দেশে স্বাভাবিকভাবেই তারুণ্যনির্ভর রাজনীতির শুরু হবে৷ সেটি ডিজিটালাইজড হবে, ফোকাসড হবে, দেশপ্রেম থাকবে এবং এর মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে একটা পরিবর্তন আসবে৷''
শামীম হায়দার বলেন, ‘‘দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের এখানকার প্রবীণ রাজনীতিবিদরা অনেকটা প্রতিহিংসার রাজনীতি করেন৷ তাঁরা নিজেরাও নানা প্রতিহিংসার সম্মুখীন হয়েছেন, সহিংসতার শিকার হয়েছেন৷ এখন যাঁরা আওয়ামী লীগ করছেন, তাঁরা এক সময় বিএনপির দ্বারা নির্যাতিত হয়েছেন, যাঁরা বিএনপি করছেন তাঁরা আওয়ামী লীগ দ্বারা নির্যাতিত হয়েছেন৷ দেশে অনেক ঘটনা ঘটেছে, আমাদের রাজনীতিবিদরা সেগুলো ঠেকাতে পারেননি৷ তাই আমি মনে করি, আমাদের তরুণদের দেশ গড়ার রাজনীতি করা প্রয়োজন৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমাদের যে তরুণ সমাজ ইন্টারনেটকে ভালো পথে কাজে লাগাতে পারবে, তাদেরকে রাজনীতিতে আনতে হবে৷ এমপি বা অন্যান্য পদে শতকরা ১০ ভাগ তরুণকেও দেখা যাচ্ছে না৷ এতে এক ধরনের মতপার্থক্য তৈরি হচ্ছে৷ এই মতপার্থক্য থাকলে দেশ বেশি দূর এগোতে পারবে না৷''
শামীম হায়দার পাটোয়ারী জানান, তাঁর দল জাতীয় পার্টি তরুণদের এখন বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি নিজে যেমন পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছি, তেমনি দলে আরও অনেক তরুণই এখন গুরুত্পূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন৷ তরুণদের নানা ধ্যান-ধারণা ও ভাবনা গ্রহণ করছে দল, এটা খুবই ইতিবাচক৷''
জাতীয় পার্টির মতো আওয়ামী লীগ ও বিএনপির তরুণ রাজনীতিবিদরাও জানান, তাঁদের দলও এখন তরুণ ভাবনাকে বেশ গুরুত্ব সহকারে দেখছে৷ তাঁদের সমসাময়িক আরও অনেক তরুণ মাঠে ও মাঠের বাইরের রাজনীতির সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করছেন৷ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে তো একাধিক তরুণ সাংসদ ও মন্ত্রীও আছেন৷ বিএনপিতেও অনেক তরুণই এগিয়ে আসছেন বলে জানা গেছে৷
এ বিষয়ে আপনার কোন মাতমত থাকলে লিখুন নিচে মন্তব্যের ঘরে