1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শ্রীলংকায় নারীরা ‘পিরিয়ড পভার্টি' দূর করছেন

১৪ এপ্রিল ২০১৯

দরিদ্রতার জন্য স্বাস্থ্যকর স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করতে না পারার কারণে ঝুঁকিতে থাকা মেয়েদের সংখ্যা বিশ্বে কম নয়৷ এ সংখ্যা অনুন্নত দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি, তবে উন্নত দেশগুলোতেও রয়েছে এ চিত্র৷

https://p.dw.com/p/3GfuT
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Gabbert

একদিকে উচ্চ দাম, অন্যদিকে সামাজিক কুসংস্কার - এই দুইয়ে মিলে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকাসহ এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক নারীকেই ঋতুকালীন সময়ে পোহাতে হয় নানা রকমের সামাজিক যাতনা৷

এমনই এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হন শ্রীলংকার মেয়ে ফাতিমা রিফকার৷ ঋতুকালীন সময়ে ব্যবহৃত স্যানিটারি প্যাডটি ধুয়ে পরিষ্কার করতে গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হতো তাঁকে৷

শ্রীলংকার যে অঞ্চলে ফাতিমার বাড়ি, সেখানে তীব্র পানির সংকট থাকার কারণে লম্বা লাইনে দাড়িয়ে পানির জন্য অপেক্ষা করতে হতো তাঁকে৷ ‘‘ফলে সবার সামনে নিজের ব্যবহৃত প্যাডটি ধুতে গিয়ে যে অস্বস্তি লাগতো, সেটি বলে বুঝাবার নয়,'' বলেন ফাতিমা৷

এই অবস্থা এড়াতে ফাতিমা সবার সামনে স্যানিটারি প্যাড ধোয়া বন্ধ করে দেন৷ একবার ব্যবহারের পর তা শুকিয়ে আবার ব্যবহার করতেন তিনি৷ ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ছিলেন ফাতিমা৷ 

একদিন পালটে গেল ফাতিমার যাতনার এ গল্প৷ বছর কয়েক আগে কলম্বোর পাশের কিথুলওয়াট্টেতে একটি অর্গানিক স্যানিটারি প্যাড প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি পান ফাতিমা৷ সেই থেকে, নিজে যেমন বদলেছেন, পাশাপাশি এ যাতনা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করছেন প্রতিবেশীদেরও৷

ফাতেমার এ প্রতিষ্ঠানটি কম খরচে অর্গানিক স্যানিটারি প্যাড তৈরি করে৷ এ কারণে এটি ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠছেন অনেকেই৷ অর্গানিক এ স্যানিটারি প্যাডের আবিষ্কারক অরুণচালাম মুরুগানানথাম নামে একজন ভারতীয়৷

ঋতুকালীন সময়ে নিজের স্ত্রীর কষ্ট দেখে ভাবছিলেন কীভাবে লাঘব করা যায় স্ত্রীর এ কষ্ট৷ তাই নিজেই আবিষ্কার করেন কম খরচে অর্গানিক প্যাড প্রস্তুত প্রণালী৷

এ পদ্ধতিতে শ্রীলংকাতে ২০১৮ সালে প্রথম অর্গানিক স্যানিটারি প্যাড প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়৷ এক বছর পর কিথুলওয়াট্টেতে বড় আকারে একটি অর্গানিক স্যানিটারি প্যাড প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়৷ ভারত থেকে কাঠের শাঁস আমদানি করে প্রস্তুত করা হয় স্যানিটারি প্যাড৷ এখানকার প্যাডের বাজার মূল্য বর্তমানে প্রচলিত প্যাডের চেয়ে অনেক কম বলে এটি প্রান্তিক পর্যায়ের জনগোষ্ঠীর ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে৷

শ্রীলংকায় সাধারণ স্যানিটারি প্যাডের বাজার মূল্য স্থানীয় মুদ্রায় ১৪০ রুপি৷ আর আমদানিকৃত স্যানিটারি প্যাডের মূল্য প্রায় ৫০০ রুপি পর্যন্ত হয়ে থাকে৷ সেখানে ফাতিমার প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত প্যাডের বাজার মূল্য মাত্র ৬০ রুপি৷

ব্যবসায়িক ও সামাজিক উদ্দেশ্যে ‘সার্ক চেম্বার ওমেন এন্ট্রেপ্রেনিউর্স কাউন্সিল' এর উদ্যোগে চালু করা হয় এ প্রতিষ্ঠানটি৷ আস্তে আস্তে এ উদ্যোগ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে দিতে চান উদ্যোক্তারা৷

নিজের জন্য প্রয়োজনীয় স্যানিটারি প্যাড এখান থেকেই নিয়ে যান ফাতিমা৷ পাশাপাশি কিছু বাড়তিও নিয়ে যান, যা তিনি তাঁর প্রতিবেশীদের কাছে বিক্রি করেন৷ কম মূল্য হওয়ায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে এর চাহিদাও রয়েছে৷

নারীদের ঋতুকালীন স্বাস্থ্য নিয়ে খোলামেলা আলোচনার পরিবেশ নেই বিশ্বের অনেক দেশেই৷ অপরদিকে উচ্চমূল্য হওয়ায় অনেক নারীই স্বাস্থ্যকর স্যানিটারি প্যাড ব্যবহারের সুযোগ পাননা৷ ঋতুকালীন স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা ও যথাযথ নজরদারির অভাবে শারীরিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন মেয়েরা৷

ইউনিসেফের ২০১৫ সালের এক গকবষণায় দেখা গেছে, শ্রীলংকায় প্রায় অর্ধেক মেয়ে শিক্ষার্থী ঋতুকালীন সময়ে স্কুলে যায় না৷

আরআর/জেডএইচ (থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন)