শ্রমিক বিক্ষোভে বন্ধ মহাসড়ক, প্রাণ গেল এক নারীশ্রমিকের
৮ নভেম্বর ২০২৩বুধবার বিকেলে গাজীপুরের বিভিন্ন পোশাক কারখানায় ছুটির পর মহাসড়ক অবরোধ করেছেন পোশাকশ্রমিকেরা৷ ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নেয় তারা৷ এতে বন্ধ রয়েছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক দুটি৷
বেতন বাড়ানোর দাবিতে ২৩ অক্টোবর থেকে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ করে আসছিলেন শ্রমিকেরা৷ এর পরিপ্রেক্ষিতে পোশাক শিল্পমালিকেরা শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম সাড়ে ১২ হাজার টাকার যে মজুরি প্রস্তাব করেছে সেটিকেই চূড়ান্ত করেছে সরকার৷ মঙ্গলবার সচিবালয়ে পোশাকশ্রমিকদের নতুন মজুরি ঘোষণা করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান৷
কিন্তু এমন সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট হতে পারেননি শ্রমিকেরা৷ মঙ্গলবার বিকেল থেকে অসন্তোষ দেখানোর পর, বুধবার সকাল থেকেও দফায় দফায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা৷ মহাসড়কে অবস্থান নেয় শ্রমিকেরা৷
সকালে মহাসড়কের দুই পাশের বিভিন্ন কারখানায় ঢিল ছুঁড়েছেন, ভাঙচুর করেছেন শ্রমিকেরা৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিক্ষোভরত শ্রমিকদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ৷
মারা গেছেন এক নারী শ্রমিক
এদিকে, পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে গাজীপুরের কোনাবাড়ি, জরুন, বাইমাইলসহ বিভিন্ন এলাকাতেও বিক্ষোভ করেন শ্রমিকেরা৷ কোনাবাড়িতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আঞ্জুয়ারা খাতুন (৩০) নামের এক নারী পোশাকশ্রমিক মারা গেছেন৷
বুধবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনাটি ঘটে৷ গুরুতর আহত অবস্থায় ওই নারীকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন৷
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া সংবাদ মাধ্যম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, নিহত শ্রমিকের নাম আঞ্জুয়ারা খাতুন৷ কোনাবাড়ির ইসলাম গার্মেন্টসে সেলাই মেশিন অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন তিনি৷ আঞ্জুয়ারা সিরাজগঞ্জে কাজিপাড়া চরগিরিশ এলাকার মো. মন্টু মিয়ার মেয়ে৷
নিহতের ভাই মোস্তফা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ‘‘সকাল ৮টার দিকে আমার বোন বেতন বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে৷ আন্দোলনের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়৷ গাজীপুর হাসপাতাল থেকে ঢাকায় পাঠানোর জন্য রেফার্ড করেন কর্তব্যরত ডাক্তার৷ ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান তিনি৷’’
কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আশরাফ উদ্দিন বলেন, একজন শ্রমিককে ঢাকার একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ তবে তিনি মারা গেছেন কিনা এ বিষয়ে তিনি জানেন না৷
কাজে ফেরার আহ্বান জানালেন মালিকেরা
বুধবার একাত্তর টিভির একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, "আমাদের শ্রমিক আন্দোলনের উদ্দেশ্য সংঘর্ষ নয়৷ আমরা যে আন্দোলন করেছি সেটা ছিল টেবিলের আন্দোলন৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘যেহেতু জিনিসপত্রের দাম বেশি হয়েছে এবং সবকিছু ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে, তাই আমাদের দাবি ছিল রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা৷’’
শ্রমিকদের আন্দোলন পোশাকশিল্পকে শঙ্কার মুখে ফেলছে বলে দাবি করেছেন তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হোসেন৷
ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘‘চলমান এই অবস্থার কারণে আমাদের অনেক বায়ার নতুন করে আর অর্ডার করছেন না৷ এই অবস্থা চলতে থাকলে যে অর্ডারগুলো চলমান আছে, তাও অন্যদেশে শিফট করে দিতে পারে৷ আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করেছি, যেটা দেয়া হয়েছে সেটা আমাদের দেয়া ডিফিকাল্ট৷ তাও আমরা মেনে নিয়েছি৷ সুতরাং এরকম চলতে থাকলে তার প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে পড়বে৷''
ন্যূনতম মজুরি মেনে নিয়ে শ্রমিকদের কাজে ফেরার আহ্বান জানান তিনি৷ বলেন, ‘‘আমি মনে করি শ্রমিকেরা এটা বুঝবে এবং যে কয়টা ফ্যাক্টরিতে কাজ হচ্ছে না তাতে খুব তাড়াতাড়ি কাজ শুরু হবে৷’’
এমকে/কেএম