শেষ হলো ভারতের লোকসভা নির্বাচন: ফলাফল ২৩ মে
১৯ মে ২০১৯তবে প্রায় দেড়শ' কোটি জনসংখ্যার এ দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হচ্ছেন তা জানা যাবে আগামী ২৩ মে৷
স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে শুরু হওয়াভোটগ্রহণ অনেকটা শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো৷ তবে বেশ কয়েকটি নির্বাচনি এলাকায় সহিংসতার খবরও পাওয়া গেছে৷
ছয় সপ্তাহ আগে শুরু হওয়া লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়েছে মোট ৭টি ধাপে৷ শেষ ধাপে অর্থাৎ আজ রবিবার দেশটির ৫৯টি নির্বাচনি এলাকায় ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়৷ এর মধ্যে রয়েছে, উত্তর প্রদেশ ও পাঞ্জাবের ১৩টি করে আসনে, পশ্চিমবঙ্গের নয়টি, আটটি করে বিহার ও মধ্য প্রদেশের, হিমাচল প্রদেশের ৪টি, ঝাড়খন্ডের ৩টি ও কেন্দ্রশাসিত চন্ডিগড়ের একটি আসনে ভোট হচ্ছে৷
শেষ দফার এ নির্বাচন উপলক্ষে এক টুইট বার্তায় সকলকে ভোট প্রদানের আহ্বান জানান মোদি৷ ভোটারদের রেকর্ড সংখ্যক ভোটপ্রদানের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আপনার একটি ভোট ভারতের উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে আপনার মতো করে সাজাতে সাহায্য করবে৷''
ভোট চলাকালে এ অঞ্চলগুলোর বিভিন্ন কেন্দ্রে সহিংসতা ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ পশ্চিমবঙ্গের প্রভাবশালী দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, রাজ্যের বেশ কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে৷ ভাটপাড়ায় দফায় দফায় তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষের খবর দিয়েছে পত্রিকাটি৷ এদিকে বিজেপির অভিযোগ, কসবার কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে তর্ণমূল এজেন্টরা ভোটরদের হুমকি দিয়েছে৷ তৃণমূলের পক্ষ থেকে অভিযোগের তির ছোঁড়া হয়েছে বিজেপির দিকেও৷ পশ্চিমবঙ্গে গত কয়েক বছর ধরে শক্ত অবস্থানে থাকা মমতার তৃণমূল অভিযোগ করছে যে, কেন্দ্রীয়বাহিনী ভোটারদেরকে বিজেপির ব্যালটে ভোট দিতে উৎসাহিত করেছে৷ এদিকে উত্তর প্রদেশের কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে বিজেপির প্রার্থীদের বিরুদ্ধে৷
ভাগ্য পরীক্ষায় মোদি
উত্তরপ্রদেশের বারাণসী আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী৷ তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আছেন কংগ্রেস প্রার্থী অজয় রায়৷ ভোটদানের পর অজয় রায় বলেন, এ সরকারের আমলে বারাণসীতে লোক দেখানো উন্নয়কাজ হয়েছে৷ যে কারণে ভোটাররা আর মোদির উপর আস্থা রাখবে না, বলেন তিনি৷
তৃণমূলের দুর্গ পশ্চিমবঙ্গে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছিল মোদির৷ বার্তা সংস্থার এপি'র এক খবরে বলা হয়েছে, নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে শুধু পশ্চিমবঙ্গেই ১৭বার পরিদর্শন করেছেন মোদি৷ পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনি প্রচারণার সময় বেশ কিছু সহিংসতার ঘটনা খবরও পাওয়া গেছে৷
ধর্মভিত্তিক প্রচারণা!
দেশটির এ বছরের নির্বাচনের উল্লেখযোগ্য দিক ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর বিশেষ করে বিজেপির ধর্মভিত্তিক প্রচারণা৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের প্রচারণা দেশটির অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে৷ দেশটির উত্তর প্রদেশের প্রতিদ্বন্দীদের মধ্যে ধর্ম নিয়ে বাদানুবাদে লিপ্ত হতে দেখা গেছে রাজনৈতিক নেতাদের৷
নির্বাচনি এক প্রচারণায় প্রদেশটির মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেন, ‘‘কংগ্রেস যদি ইসলাম ধর্মের নবী মোহাম্মদের জামাতা আলির উপর আস্থা রাখে তাহলে বিজেপিও হিন্দু দেবতা ‘বজরং বলি'র উপর আস্থা রাখবে৷''
এর উত্তরে তাঁর প্রতিদ্বন্দী নেত্রী মায়াবতি প্রদেশটির ভোটারদের বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের ভোটারদের বিভক্ত না হওয়ার অনুরোধ জানান৷ উত্তপ্ত এ পরিস্থিতে নির্বাচন কমিশন এ দুই রাজনৈতিক নেতাকে কয়েকদিনের জন্য নির্বাচনি প্রচারণায় নিষিদ্ধ করে৷
এদিকে, বিজেপির প্রেসিডেন্ট অমিত শাহ আসামে এক নির্বাচনি প্রচারণায় বলেন তাঁর দল পুনঃনির্বাচিত হলে ভারতকে ‘অবৈধভাবে আশ্রয়ধারীদের' থেকে মুক্ত করবে৷ তবে তাঁর দেয়া এ বক্তব্যটি দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে আসা মুসলিম অভিবাসীদের উদ্দেশ্য করে দেওয়া বলে মনে করছেন বিশেজ্ঞরা৷
এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লষেক অজয় কুমার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা স্পষ্ট যে বিজেপি হিন্দুদেরকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে উস্কে দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে৷''
শেষ পর্বে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ১০ কোটি ১ লক্ষ ৭৫ হাজার ১৫৩৷ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৯১৮ জন৷
আরআর/জেডএ (এপি, এএফপি, আনন্দবাজার)