মাথা নোয়াবে আইপিএল?
১৭ এপ্রিল ২০১৬ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই) এবং মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (এমসিএ) কর্তৃপক্ষকে এমনই আদেশ আদালতের৷ তবে জল অনেক দূর গড়াবার পরই রাজ্যে জলসংকটের মোকাবিলায় ত্রাণকর্তার ভূমিকা নিতে হয়েছে মুম্বই হাইকোর্টকে৷ বিসিসিআই এবং এমসিএ-কে বলতে হয়েছে অবশিষ্ট ১৩টি ম্যাচ রাজ্য থেকে সরিয়ে নেয়ার জন্য৷ আর আদালতের নির্দেশে অবশেষে শুধু আইপিএল কর্তৃপক্ষেরই নয়, টনক নড়েছে মহারাষ্ট্র সরকারেরও৷ মহারাষ্ট্রের বিস্তীর্ণ এলাকা যেখানে খরা পরিস্থিতির কবলে, সেখানে আইপিএল ক্রিকেট ম্যাচের জন্য যে পরিমাণ জল খরচ করা হয়েছে বা হবে, তার যৌক্তিকতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে মুম্বই হাইকোর্ট৷ রীতিমত ধমক দিয়ে আদালত বলেছে, মানুষ যেখানে জল পাচ্ছে না, জলাভাবে চাষীদের যেখানে মাথায় হাত, সেখানে ক্রিকেট মাঠের পিচ সংরক্ষণের জন্য লক্ষ লক্ষ লিটার জল খরচের কোনো যুক্তি নেই৷ সেক্ষেত্রে অবশিষ্ট ম্যাচগুলি অন্য রাজ্যে স্থানান্তরিত করতে অসুবিধা কোথায়?
আইপিএল ম্যাচ পরিচালনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, যে জল মাঠে খরচ করা হচ্ছে তা পানের অযোগ্য৷ শহরের বোর-ওয়েল, কুঁয়ো এবং নর্দমার অপরিষ্কার জল শোধন করে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ পুনে ও নাগপুরের অবশিষ্ট ১৭টি ম্যাচের জন্য রয়্যাল ওয়েস্টার্ন টার্ফ ক্লাব ট্যাঙ্কারে করে জল পৌঁছে দেবে, তারজন্য টাকা দেওয়া হবে৷ মুখ্যমন্ত্রীর খরাত্রাণ তহবিলে আইপিএল-এর তরফ থেকে আলাদা আলাদাভাবে পাঁচ কোটি টাকা করে চাঁদা দেওয়া হয়েছে৷ লাটুরের মতো সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জল সরবরাহের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে৷ কিন্তু তাতেও আদালতের মন টলেনি৷
মাঠে ব্যবহার করা জল পানের অযোগ্য কিনা তার ল্যাবরেটারি পরীক্ষার রিপোর্ট খতিয়ে দেখার পর, আদালত অবশিষ্ট ম্যাচগুলির জন্য ব্যবহার করা জল পরীক্ষার দিকেও নজর রাখার কথা বলেছে৷ উল্লেখ্য, ক্রিকেট মাঠ ঠিকঠাক রাখতে রোজ জল লাগে প্রায় ৬০-৬৫ লাখ লিটার৷
জলাভাবে পীড়িত মহারাষ্ট্রে প্রচুর পরিমাণ জল খরচ করে আইপিএল-এর ম্যাচ চালিয়ে যাওয়ার যৌক্তিকতা নিয়েও ক্রিকেট খেলোয়াড়, ক্রিকেট প্রেমী ও ক্রীড়া সাংবাদিকরা দ্বিধাবিভক্ত৷ এক বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক দেবাঞ্জন বন্দোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, আইপিএল ম্যাচ মহারাষ্ট্রের বাইরে নিয়ে যাওয়াটা জলাভাব মেটানোর স্থায়ী সমাধান নয়৷ মহারাষ্ট্রের খরা কবলিত মারাঠাওয়াড়া এলাকার চিনি কলগুলিতে যে পরিমাণ জল খরচ হয়, তাহলে তাদেরকেও রাশ টানতে বলা হচ্ছেনা কেন? চিনি কলগুলি সেচের জলের ৫০-৬০ ভাগ ব্যবহার করে৷ অবশ্য অন্য রাজ্যে নিয়ে যেতে তেমন কোনো অসুবিধা হবার কথা নয়৷ ভারতীয় ক্রিকেটের বর্তমান ও অতীত তারক ভিভিএস লক্ষণ এবং ক্যাপ্টেন ধোনি মনে করেন, জল সংকটের সমাধান অবশ্যই জরুরি, কিন্তু ম্যাচ সরিয়ে নিয়ে গেলেই তার সমাধান হবে না৷ এর সমাধান হওয়া দরকার দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে৷ ধোনির প্রশ্ন, টি-টোয়েন্টি ম্যাচের সময় তো জল সংকটের কথা ওঠেনি? কলকাতা নাইটরাইডার্স বা কেকেআর টিমের অধিনায়ক গৌতম গম্ভীরের মতে, মানুষের কষ্টকে মূল্য দিতে হবে সবার আগে৷ খেলা তো আছেই৷ কুড়ি ওভারেই তা শেষ হয়ে যায় না৷ ভবিষ্যত আইপিএল-এর জন্য মাঠে জলের চাহিদা মেটাতে বৃষ্টির জল ভূগর্ভস্থ রিজার্ভারে ধরে রাখা দরকার৷ দরকার কৃত্রিম জল সিঞ্চন যাতে মাটির নীচের জলস্তর বাড়ে, ডয়চে ভেলেকে বললেন সমুদ্র বিজ্ঞানী অধ্যাপক এস হাজরা৷