1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সবার জন্য কাজ করতে চান পিংকী

১৫ অক্টোবর ২০১৯

তৃতীয় লিঙ্গের প্রথম উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সাদিয়া আখতার পিংকী মনে করেন হিজড়ারাও মানুষ৷ তাদের হেয় চোখে দেখার কিছু নেই৷ তিনি নিজে তাই সব মানুষের জন্য কাজ করতে চান৷ আর এলাকার মানুষ চাইলে আরো বড় দায়িত্ব নিতে চান ভবিষ্যতে৷

https://p.dw.com/p/3RKTo
ছবি: Nayan Khandakar

রাজনীতিতে পথ চলা এক দশকের হলেও এবারই প্রথম নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন পিংকী৷ ভোটাররাও বিমুখ করেনি তাঁকে৷ সোমবার ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন পিংকী, যিনি উপজেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি৷

পিংকীরা চার ভাইবোন৷ ভাইরা সবাই কৃষিকাজ করেন৷ হারিয়েছেন বাবাকে৷ পিংকী জানান, আর সব হিজড়াদের মতো একটা বয়সে তাঁকেও বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল৷ পরিবার বাধ্য না করলেও নিজেই চলে যান অন্য হিজড়াদের কাছে৷ তবে এক পর্যায়ে মনে হয়েছে এভাবে নয়, মানুষের জন্য কাজ করবেন তিনি৷ তাই বাড়ি ফিরে আসেন আবার৷ এগিয়ে যান মানুষের বিপদে-আপদে৷ হাসপাতালে গিয়ে অসুস্থ মানুষকে সেবা দেন৷ আর এভাবেই এক সময় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন৷ এরইমধ্যে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন৷

‘যারা আমাকে কটুক্তি করেছেন তাদের আমি এড়িয়ে চলিনি’

তবে তাঁর এই উত্তরণের পথ এত সহজ ছিলো না৷ নানা সামাজিক প্রতিকূলতা তাকে পার হতে হয়েছে৷ এমনকি নির্বাচনে দাঁড়ানোর পরও নানা কটুক্তি শুনতে হয়েছে৷ পিংকী বলেন, ‘‘যারা আমাকে কটুক্তি করেছেন তাদের আমি এড়িয়ে চলিনি৷ আমি তাদের কাছে গিয়ে বলেছি আমিওতো তোমাদের মতো মানুষ৷ তারা আমার কথা তখন শুনেছে৷ আমাকে ভোট দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷’’ পিংকী বলেন, সবার সাথে মিশে তাদের মন জয় করেছেন তিনি৷ শুধু হিজড়া হিসেবে নয়, নির্বাচনে আরো যেসব প্রতিকূলতা থাকে পার হয়েছেন সেগুলোও৷

‘‘শুধু হিজড়া নয়, সবার জন্য কাজ করাই আমার লক্ষ্য৷ কারণ আমাকে সবাই ভোট দিয়েছে৷ কিন্তু হিজড়াদের জন্য আমরা বিশেষ উদ্যোগ থাকবে৷ আমি চাই হিজড়ারা সমাজের মূল ধারায় ফিরে আসুক৷ তারা সবার সঙ্গে মিশে যাক৷ আর সমাজকে তাদের মানুষ হিসেবই গ্রহণ করতে হবে৷ সহজভাবে গ্রহণ করতে হবে,’’ বলেন পিংকী৷

ভবিষ্যত রাজনৈতিক পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘মানুষ চেয়েছে তাই আমি ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছি৷ তারা চাইলে উপজেলা চেয়ারম্যান বা এমপিও হতে পারি৷ এটা আমার ইচ্ছা নয়, জনগণের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে৷’’

এলাকার মানুষ পিংকীকে হিজড়া হিসেবে দেখেন না, মানুষ হিসেবেই দেখেন, জানান ওই উপজেলার বলুহার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন৷ তিনি বলেন, ‘‘পিংকী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত৷ মানুষের সঙ্গে সহজে মিশতে পারেন৷ সবার বিপদ আপদে দৌড়ে যান, সাধ্যমত সহযোগিতা করেন৷ তার কোনো পিছুটান নেই৷ অনেকেই নির্বাচিত হওয়ার পর সাধারণ মানুষকে ভুলে যান৷ কিন্ত ভোটাররা মনে করেছেন পিংকী তাদের সাথেই থাকবেন৷ তাই তাঁকে ভোট দিয়েছেন৷’’

‘পিংকী তার আচার আচরণ দিয়ে এলাকার মানুষকে জয় করেছেন’

আর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার তাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘পিংকী তার আচার আচরণ দিয়ে এলাকার মানুষকে জয় করেছেন৷ সে তাঁর নির্বাচনী প্রচারে বলেছে, আপনারাতো আমাকে হিজড়া বলেন, আপনারা আমাকে মানুষ হতে দিন৷ দূরে রাখবেন না, আপনাদের সাখে রাখুন৷ তাঁর এই আবেদনে সাড়া দিয়ে এলাকার মানুষ তাকে বিপুল ভোটে জয়ী করেছে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘সামাজিকভাবে হিজড়াদের হেয় চোখে দেখা হয় সত্য৷ কিন্তু পিংকী প্রমাণ করেছে তাদের হেয় করে দেখার কিছু নেই৷ তারাও মানুষ এবং মানুষের জন্য কাজ করেন৷’’

পিংকী এলাকায় অনেক সামাজিক কাজের সঙ্গেও জড়িত৷ তিনি একটি প্রাইমারি স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটিরও সদস্য৷

২০১৪ সালে বাংলাদেশে হিজড়াদের সাংবিধানিক এবং আইনগতভাবে স্বতন্ত্র লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়৷ তাদের ভোটাধিকারসহ সকল নাগরিক অধিকারও দেয়া হয়৷ এরপর স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচনে হিজড়ারা প্রার্থী হয়েছেন৷ কিন্তু উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদে এই প্রথম কোনো হিজড়া নির্বাচিত হলেন৷ বাংলাদেশে ১০ হাজারেরও বেশি হিজড়া রয়েছেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য