‘জামায়াতেরও বিচার করতে হবে’
২২ জানুয়ারি ২০১৩মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গড়া আদালতে বিচার চলার সময় পেছনের দরজা দিয়ে আইনজীবী পরিচয়ে ঢুকে পড়েন মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুডের ১৪ সদস্য! ঘাতক, দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির ভেবে পান না ট্রাইবুনালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা দুর্বল হলে এমনটি সম্ভব৷ তিনি মনে করেন, ট্রাইবুনালের সঙ্গে জড়িত সবার উপযু্ক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করলে, বিচারক না বাড়ালে, সরকারের বর্তমান মেয়াদকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাবে না৷ অবশ্য আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের চলতি মেয়াদের বাকি সময়ে যে অভিযুক্ত সব অপরাধীর বিচার শেষ করা এমনিতেও সম্ভব নয়, তা তিনি মানেন৷
তাঁর আশঙ্কা, ৮-১০ জনেরও যে বিচার হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে সতর্কভাবে না এগোলে সেটাও হয়ত সম্ভব হবে না৷ কথাগুলো শাহরিয়ার কবির ডয়চে ভেলেকে বললেন এমন এক দিনে যেদিন একাত্তরের গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের কারণে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক রুকন আবুল কালাম আযাদের ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত৷ আবুল কালাম আযাদ একাত্তরে তার ভূমিকার জন্য ‘বাচ্চু রাজাকার' নামে পরিচিত৷
সোমবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-২ ১১২ পৃষ্ঠার রায় ঘোষণা করে৷ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইবুনালে এটাই প্রথম রায়৷
আযাদ মামলা শুরুর আগে থেকেই পলাতক৷ আটটি অভিযোগের মধ্যে সাতটিতে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেন ট্রাইবুনাল প্রধান৷ প্রমাণিত অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে বোয়ালমারী থানার কলারন গ্রাম, সালথা থানার (সাবেক নগরকান্দা) পুরুরা নমপাড়া গ্রাম এবং বোয়ালমারী থানার হাসামদিয়া গ্রামে লুটপাট-অগ্নিসংযোগের পর গণহত্যা৷
এর বাইরে ফরিদপুর শহরের খাবাশপুরে এক ব্যক্তিকে নির্যাতন, নতিবদিয়া গ্রামে দুই নারীকে ধর্ষণ এবং সালথা থানার উজিরপুর বাজারপাড়া গ্রামের এক হিন্দু তরুণীকে অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনায় অপরাধ প্রমাণিত হলেও অন্য চার অভিযোগে ফাঁসির আদেশ হওয়ায়, এসব ঘটনায় আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে আদালত নতুন কোনো শাস্তির আদেশ দেয়নি৷ অন্য একটি মামলায় এক ব্যক্তির ওপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে না পারায় অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় আযাদকে৷ এমনিতে রায়ের এক মাসের মধ্যে আপিল করা যায়, তবে ‘বাচ্চু রাজাকার' আত্মসমর্পণ না করলে বা ধরা না পড়লে সে সুযোগ পাবেন না৷
ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ‘বাচ্চু রাজাকার'-এর ফাঁসির আদেশ হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন শাহরিয়ার কবির৷ তাঁর মতে, এটা একাত্তরের সব শহিদ, মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার এবং মুক্তিযু্দ্ধের পক্ষের প্রতিটি মানুষের হয়ে ১৯৯২ সালে শহিদজননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গড়া ঘাতক, দালাল নির্মূল কমিটির জয়৷ তবে কাজ শেষ হতে এখনও অনেক বাকি৷ তিনি মনে করেন, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের প্রকৃত বিচার শুধু জামায়াত নেতা গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, আবদুল কাদের মোল্লা, মো. কামারুজ্জামান, বিএনপি'র সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের মতো কয়েকজন ব্যাক্তির বিচার করলেই হবে না, জামায়াতে ইসলামীর বিচার না করলে গণহত্যার আশঙ্কা থেকেই যাবে৷
সাক্ষাৎকার: আশীষ চক্রবর্ত্তী
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ