‘রায় কার্যকর দেখতে চাই’
৯ মে ২০১৩১৯৭১ সালের ২৫শে জুলাই তার পরিকল্পনা এবং নির্দেশেই সোহাগপুর ও আশেপাশের এলাকায় ১৮৭ জনকে হত্যা করা হয়৷ ১৭০ জন নারী শিকার হন ধর্ষণ ও নির্যাতনের৷
সোহাগপুরের সেই হত্যাযজ্ঞে বহু নারী স্বামী হারিয়ে বিধবা হন৷ তাই সোহাগপুরের বেণুপাড়া এখনও বিধবা পল্লী নামে পরিচিত৷ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন সেই সোহাগপুর গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী৷ তিনি সেই গণহত্যায় তাঁর বাবা, ভাই এবং চাচাসহ আট জনকে হারিয়েছেন৷ মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর বয়স ছিল ১৯ বছর৷ তিনি মানবতা বিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষীও দিয়েছেন৷ বৃহস্পতিবার কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় শুনে তাই তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন৷ অবশ্য তাঁর কথায়, একমাত্র রায় কার্যকর হলেই শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে৷
শেরপুর জেলার নালিতাবড়ি উপজেলা থেকে আরো ১১ কি.মি. ভিতরে সোহাগপুর৷ জালালউদ্দিন জানান, একাত্তরে সোহাগপুরসহ ঐ এলাকার বেণুপাড়া ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি৷ আর পাশের উপজেলা ঝিনাইগাতির আহম্মদ নগরে ছিল আলবদর ক্যাম্প৷ সেই ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন তখনকার ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা কামারুজ্জামান৷ কামারুজ্জামানের বাড়ি বাজিতপুরে৷ ২৫শে জুলাই ভোরে তার পরিকল্পনা এবং নির্দেশে নালিতাবাড়ির তেলিখালি সেনা ক্যাম্প থেকে আলবদর রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সোহাগপুরে হামলা চলোয়৷ তারা সোহাগপুর ও আশেপাশের এলাকায় নির্বিচারে ‘ব্রাশ ফায়ার' করে ১৮৭ জনকে হত্যা করে৷ পুরো সোহাগপুর আর বেণুপাড়ায় হত্যাকাণ্ড চালিয়ে পুরুষ শূন্য করা হয়৷ নির্যাতন এবং ধর্ষণ করা হয় নারীদের৷ বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়৷ চালায় লুটপাট৷ জালাল উদ্দিন একটি পরিত্যক্ত ঘরের মাচায় আত্মগোপন করে প্রাণে রক্ষা পান৷
পাক সেনা আর আলবদররা চলে যাওয়ার পর তিনি দেখতে পান তাঁর বাবা, ভাই এবং চাচাসহ তাঁদের পরিবারের আট জনকে হত্যা করা হয়েছে৷ এরপর তিনি সেহাগপুর এবং বেণুপাড়ায় গণহত্যার ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করেন৷ জালাল উদ্দি জানান, তিনি ও আশপাশের গ্রামের লোকজন নিহত সবাইকে ৬৪টি কবরে মাটি চাঁপা দেন৷ একাজ করতে গভীর রাত হয়ে যায়৷ বলা বাহুল্য, হত্যাকাণ্ড চালিয়ে বেণুপাড়া পুরোপুরি পুরুষ শূণ্য করা হয়৷ এ কারণে বেণুপাড়াকে বলা হয় বিধবা পল্লি৷ এখনও স্বামী হারা ৩৪ জন বিধবা নারী বেঁচে আছেন সেখানে৷
সোহাগপুর আর বেণুপাড়ায় একাথিক গণকবর এখানও সেই গণহত্যার সাক্ষ্য হয়ে আছে৷ সেখানে আছে স্মৃতিসৌধ৷ সোহাগপুরের মানুষ তিন যুগ ধরে এই গণহত্যার বিচারের অপেক্ষায় ছিলেন৷ জালাল উদ্দিন জানান, কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায়ে তাঁদের মধ্যে এখন আনন্দ৷ তবে তাঁদের মধ্যে আতঙ্কও আছে৷ জালাল উদ্দিন জানান, ট্রাইব্যুনালে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেয়ায় জামায়াত-শিবিরের লোকজন তাঁকে ভয় দেখাচ্ছে৷
এদিকে, রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, এই রায়ের মধ্য দিয়ে কমান্ড রেসপনসিবিলিটি প্রমাণ হয়েছে৷ আর তা প্রমাণ করে জামায়াতে ইসলামী সাংগঠনিকভাবে একাত্তরে গণহত্যার সঙ্গে জড়িত৷ অন্যদিকে, কামারুজ্জামানের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক দাবি করছেন যে, এটি ন্যায়ভ্রষ্ট রায়৷ তাই এই রায়ের বিরুদ্ধে তারা আপিল করবেন৷