শিশুশ্রম নিষিদ্ধকরণ প্রসঙ্গ
২ জুন ২০১৪বাসড্রাইভারের সহকারী এক ১৩ বছর বয়সি কিশোর৷ বিভিন্ন স্টপেজের নাম জোরে ঘোষণা করা ও যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করা তার দায়িত্ব৷ ‘‘আমিও এই কিশোরটির মতো অল্পবয়সে মিনিবাসে সহকারী হিসাবে কাজ করেছি৷ ভাড়া আদায় করেছি৷ স্টপেজের নাম ঘোষণা করেছি'', বলেন আজকের ২৫ বয়সি যাত্রী ডেভিড মামানি৷ যতদূর মনে পরে সেই ছোটবেলা থেকেই কাজ করে আসছেন তিনি৷ এরপর সমমনাদের সঙ্গে নিয়ে তিনি বলিভিয়ায় শিশুশ্রমিকদের সর্বপ্রথম এক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন৷ শিশুশ্রম তাঁর স্বদেশ ও প্রতিবেশী দেশ পেরুতে দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ৷
প্রতি চারজনে এক শিশু কাজ করে
ল্যাটিন অ্যামেরিকার সবচেয়ে দরিদ্র দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে ১৮ বছরের নীচে ৮৫০,০০০ শিশু-কিশোর নিয়মিত কাজ করে থাকে৷ পরিবারকে সাহায্য করার জন্য বলিভিয়ার প্রতি চার জনে এক জন শিশুকে কাজ করতে হয়৷ ‘‘এটাই বলিভিয়ার বাস্তবতা'', বলেন মানবাধিকার সংস্থা ‘ত্যার দেজ অম'-এর শিশু অধিকার বিশেষজ্ঞ এলিজাবেথ পাটিনো ডুরান৷
তাঁর মতে, ‘‘আমরা এই বিষয়টির দিক থেকে চোখ বন্ধ করে রাখতে পারবো না৷ কেননা এরা তো কর্মরত শিশু ও কিশোর, যারা আইনকে খাপ খাওয়ানোর জন্য রাস্তায় নেমেছে৷''
সম্প্রতি বলিভিয়ায় নতুন শিশুশ্রম প্রতিরোধক আইন প্রণয়নের ব্যাপারে সংসদে আলাপ আলোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠে শিশু শ্রমিকরা৷ এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের মতামত নেওয়া হচ্ছে না৷ অভিযোগ করেন মামানি৷ তিনি বলিভিয়ার শিশু শ্রমিকদের ছাতা সংগঠন ইউএনএটিএসবিও-এর সক্রিয় কর্মী৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘শিশু শ্রমিকরা সাংসদদের সংবেদনশীল করতে সমর্থ হয়েছে৷ এর কারণ সাংসদদের অধিকাংশই একাডেমিক পরিবার থেকে আসেননি৷ পরিবারকে সহায়তা করার জন্য কাজ করতে হয়েছে অনেককেই৷''
সাংসদদের বেশিরভাগই শিশু শ্রমিক ছিলেন
শিশু শ্রমিকদের প্রতিনিধিরা সাংসদদের প্রশ্ন করেছিল তাঁদের অল্পবয়সে কাজ করতে হয়েছে কিনা৷ বেশিরভাগের উত্তর ছিল ‘হ্যাঁ' সূচক৷ এইভাবে শিশুশ্রমিকরা সাফল্যের পথে এগিয়ে যায়৷ অবশেষে তাদের একটি প্রতিনিধিদল বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেস-এর সঙ্গে দেখা করারও সুযোগ পায়৷ তিনি নিজেও ছোটবেলায় আখ ও কোকো খেতে কাজ করেছেন৷ তাই তিনি শিশুদের এই দাবিটা বুঝতে পারেন৷ পরিবারকে সাহায্য করার জন্য কাজ করা বলিভিয়ার সামাজিক সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে৷
একটি কমিশন এখন সিদ্ধান্ত নেবে ১৪ বছরের নীচে বাচ্চাদের কাজ করা নিষিদ্ধ করা উচিত কিনা৷ ল্যাটিন অ্যামেরিকার অন্যান্য দেশের শিশু শ্রমিকরাও এই বিষয়ে জানতে আগ্রহী৷ এপ্রিল মাসে প্যারাগুয়ে ও ভেনেজুয়েলার শিশুশ্রমিকদের এক প্রতিনিধিদল বলিভিয়ায় এসেছিল৷ ১৩ বছর বয়সি গেরাল্ড ভিনো ভিদাল-ও এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে৷ স্কুলের ক্লাস ও কর্মজীবনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করে চলতে পারছে সে৷ ছোটবেলায় মামানিও পেরেছিলেন৷ এল আলটোয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি৷ এখন শিক্ষাবিদ হিসাবে শিশু শ্রমিকদের একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন৷
তবে আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থা আইএলও-র গুইয়ের্মো দেমা বলেন, সবাই এটা পারে না৷ ‘‘আমরা মনে করি ছোটবেলায় কাজ করলে বৈষম্য ও দারিদ্রের আবর্তেই থাকতে হয় মানুষকে৷'' এছাড়াও এই কর্ম অধিকার বিশেষজ্ঞ আরো জানান যে, আইএলও-র চুক্তিতে বলিভিয়াও স্বাক্ষর দিয়েছে৷
অন্যদিকে এলিজাবেথ পাটিনো ডুরান বলেন, বাস্তবের সঙ্গে আইএলও চুক্তির মিল কমই রয়েছে৷ তিনি কিছুটা নমনীয় আইনের প্রস্তাব রাখেন৷ অন্যথায় শিশুশ্রমকে আন্ডারগ্রাউন্ডে নিয়ে যাওয়া হবে৷ সেখানে শিশুরা আরো শোষণের শিকার হবে৷
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন ইউরোপে কয়েক দশক আগেও শিশুশ্রম প্রচলিত ছিল৷ বলিভিয়া, ভারত, নাইজেরিয়া, আইভরি কোস্টের মতো ইউরোপের ছেলে-মেয়েরাও মা-বাবাকে কৃষিকাজে সাহায্য করতো৷ তাই এক্ষেত্রে কার্যকরি নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন৷ কয়লাখনি, পাথরখনি কিংবা আখ খেতে কাজ করা নিষিদ্ধ করতে হবে৷ এই নীতিমালা ২০০৭ সাল থেকে বলিভিয়ার সংবিধানে যুক্ত, বলেন মামানি৷ তিনি সংসদের শিশুশ্রম আইনের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন এবং জানেন কিছু কিছু অংশ বিতর্কিত৷ তবে শিশু শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বয়স কত হওয়া উচিত, তা নিয়ে মতৈক্যে পৌঁছানো যায়নি এখনও৷