আমরা আজও শিশুবান্ধব হতে পারিনি
৪ জানুয়ারি ২০১৬ঝিনাইদহের শৈলকুপার কবিরপুর গ্রামে পারিবারিক বিরোধের জের হিসেবে শিশু আমিন হোসেন (৬), শিবলু হোসেন (১০) ও মাহিম হোসেনকে (১২) ঘরের মধ্যে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া যায় রবিরবার৷ এদের মধ্যে আমিন এবং শিবলু সহদর৷ এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করা হচ্ছে তাদেরই আপন চাচা ইকবাল হেসেনকে৷
শৈলকুপা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইমদাদ হোসেনের জানান, ‘‘পারিবারিক কলহের কারণে প্রতিশোধ নিতেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে৷''
তিনি জানান, ‘‘ইকবাল হোসেন তার ভাই দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে কলহের জের ধরে ঘরে ঢুকে প্রথমে তিনটি শিশুকে মারধর করে৷ ঐ সময় ঘরের অন্যান্য লোকজন পাশের বাড়িতে ছিলেন৷ এক পর্যায়ে ঘরের মধ্যে থাকা গ্যাস সিলিন্ডারের গ্যাস ছেড়ে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে দরজায় তালা বন্ধ করে দেন ইকবাল৷ সেই আগুনে পুড়েই নিহত হয় তিনটি শিশু৷ এই ঘটনায় ঝিনাইদহসহ সারা দেশের মানুষ স্তম্ভিত৷
এর আগেও বাংলাদেশের সিলেটে শিশু রাজন এবং খুলনায় রাকিব হত্যার ঘটনা দেশের মানুষকে আলোড়িত করেছিল৷ অথচ এরপরও থামছে না শিশুর প্রতি সহিংসতা৷
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত এক হাজার ৭৩০টি শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে বাংলাদেশে৷
র্যাব-এর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালে তিন মাস মিলিয়ে সারা দেশে শতাধিক শিশু হত্যার শিকার হয়েছে৷ এর মধ্যে ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে ৩৫, সেপ্টেম্বরে ৪০ এবং অক্টোবর মাসে ২৫ জন শিশু হত্যার তথ্য জানায় র্যাব৷ এই শিশুরা মূলত পারিবারিক কলহ, মুক্তিপন আদায় এবং চুরিসহ নানা অপবাদে হত্যার শিকার হয়৷
বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোটে এলিনা খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা আমাদের দীর্ঘ দিনের পর্যবেক্ষণে দেখেছি যে, শিশুর প্রতি আমাদের মানসিকতায় কোনো পরিবর্তন আসেনি৷ আমরা এখনও শিশুবান্ধব হয়ে উঠতে পারিনি৷ পরিবার বা পরিবারের বাইরে – দু'জায়গাতেই এক অবস্থা৷''
তিনি বলেন, ‘‘শিশুরা অসহায়৷ তারা প্রতিবাদ করতে পারে না৷ একই সঙ্গে তারা প্রলোভনের ফাঁদেও পা দেয় সহজে৷ এছাড়া বিকৃত মানসিকতা সম্পন্ন মানুষ তাদের শিকারে পরিণত করে৷ শিশুরা যার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত না, সে সব বিষয়েও জড়িয়ে পড়ে৷ তাদের হত্যা করে বা নির্যাতন করে সুবিধা নিতে চায় অপরাধীরা৷''
এলিনা খান বলেন, ‘‘দেশে শিশু নির্যাতনবিরোধী কঠোর আইন আছে৷ কিন্তু মানসিকতার পরিবর্তন না হলে এই আইনে কাজ হবে না৷ এর জন্য প্রয়োজন ব্যাপক প্রচারণা এবং সামাজিক আন্দোলন৷''
তাঁর কথায়, ‘‘শিশুর প্রতি কেমন আচরণ করতে হবে, তাদের সঙ্গে কিভাবে কথা বলতে হবে – এটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও পড়াতে হবে৷ এর চর্চা করতে হবে৷ এ সংক্রান্ত নীতিমালা ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে সংবাদমাধ্যমে৷''
আমাদের শিশুবান্ধব না হয়ে ওঠার মূল কারণ কী বলে আপনার মনে হয়? জানান নীচের ঘরে৷