শিশুকে বাঁচাতে চাই সচেতনতা, সাবধানতা
১২ নভেম্বর ২০২১গতকালও ঢাকার যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালীতে ১৪ মাস বয়সি এক শিশু বালতির পানিতে ডুবে মারা গেছে৷ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিনিয়ত ঘটছে এমন ঘটনা৷
বাংলাদেশে প্রতিবছর পানিতে ডুবে প্রায় ১৮ হাজার মানুষ মারা যায় বলে গত এপ্রিল মাসে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়৷ আর গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর নামে এক এনজিওর সমীক্ষা বলছে, গত ১৯ মাসে ১,৫১২ জন পানিতে ডুবে মারা গেছেন, তার মধ্যে ১,৩৩২ জনই ছিল শিশু এবং তাদের বয়স পাঁচ বছরের কম৷ বলা হচ্ছে, এখন বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের মৃত্যুর প্রধান কারণ পানিতে ডুবে মারা যাওয়া৷
শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যুর বিষয়ে করা বাংলাদেশের সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ (সিআইপিআরবি)-র গবেষণায় দেখা গেছে , প্রতি বছর প্রায় ১৪ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়৷ অর্থাৎ. প্রতিদিন সারা দেশে গড়ে ৪০টি শিশু মারা যাচ্ছে এভাবে এবং এ হার প্রতিবছরই বাড়ছে৷ মা-বাবা, পরিবার এবং সমাজেরও অসেচতনতার কারণে এত শিশু প্রতিবছর প্রাণ হারায়, ভাবলে শরীর শিউরে ওঠে!
এখানেই শেষ নয়৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, পানিতে ডুবে বাংলাদেশে অন্তত এক লাখ শিশু আহত হয় এবং তাদের মধ্যে প্রায় ১৩ হাজারই পরে পঙ্গু হয়ে ঘরে পড়ে থাকে৷
গণমাধ্যমের তথ্যগুলোতে দেখা গেছে, যেসব শিশু পানিতে ডুবে মারা গেছে, তাদের অনেকেই বাড়ির বালতিতে জমিয়ে রাখা পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে৷
বাথরুম কিংবা রান্নাঘরে বালতির পানিতে ডুবে যারা মারা গেছে তাদের সকলেরই বয়স এক থেকে আড়াই বছর, অর্থাৎ তারা নিজেরাই হেঁটে হেঁটে পানির কাছে গিয়েছে এবং অসাবধানতাবশত পানিতে পড়ে ডুবে গেছে৷ শিশুরা মারা যাচ্ছে ঘরের বালতির পানিতে ডুবে, মারা যাচ্ছে বাড়ির পাশের পুকুরে ডুবে৷ রাস্তা পার হতে গিয়ে শিশুসহ বড়রাও জীবন দিচ্ছেন প্রায় প্রতিদিন৷
জাতিসংঘ এ বছর বাংলাদেশের প্রস্তাবে ২৫ জুলাই আন্তর্জাতিকভাবে ‘পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ' দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ বলা হচ্ছে, পানিতে ডুবে মারা যাওয়াই নাকি এখন বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর প্রধান কারণ৷
আসলে নিজেরা যদি সচেতন না হই তাহলে এসব দিবস পালন করে কী লাভ? সবকিছুর দায়ভার তো আর সরকারের নয়৷ শিশুর লালন-পালনের প্রধান দায়িত্ব শিশুর মা-বাবার৷এক্ষেত্রে সন্তানের দেখভালের দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে৷
সন্তানের মৃত্যুর চেয়ে বড় কষ্টের আর কী হতে পারে কোনো মা-বাবার কাছে? রান্নাঘর বা বাথরুম যেখানেই বালতিতে পানি জমিয়ে রাখা হোক না কেন তা ভারি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখলে কিংবা সে ঘরের দরজা বন্ধ করে রাখলে হয়ত শিশুটি সহজে সেখানে ঢুকতে না পারতো না৷ প্রয়োজনে দরজায় এমন কিছু আটকে রাখা যেতে পারে যেন শিশুরা সেখানে ঢুকতে গেলে কোনো শব্দ হয়৷
দিনের একটি সময়ে বাবা কাজে বাড়ির বাইরে, মা সংসারের কাজে ব্যস্ত আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঠিক সেসময়ই পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর ঘটনাগুলো ঘটেছে৷ শিশু মৃত্যুহার ঠেকাতে দ্রুত প্রয়োজন শিশুর মা-বাবা, পরিবার এবং সমাজের সকলের সচেতনতা বৃদ্ধি করা৷ সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাড়ালে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু এড়ানো সম্ভব বলে মনে হয়৷
তাছাড়া সচেতনতা বাড়াতে আজকাল সোশাল মিডিয়ায় কত কি নিয়েই না আলোচনা হয়! শিশুরাইজাতির ভবিষ্যৎ৷ শিশুদের জীবন রক্ষায় সমাজকে সচেতন করার লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে উঠে আসতে পারে৷