শিশুকে বকবেন না কিন্তু!
সকালে শিশুকে কিন্ডারগার্টেনে পৌঁছে দিয়ে মা-বাবা দু’জনই অফিসে যাবেন৷ বের হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে শিশুটি কার্পেটের ওপর দুধ বা অন্য কিছু ফেলে দিলো– এরকম প্রায়ই ঘটে৷ শিশুকে বকা না দিয়েও কিভাবে পরিবর্তন আনা সম্ভব, জেনে নিন৷
বাচ্চারা মোটেই দায়ী নয় !
সন্তান, সংসার, চাকরি সামলানো যে কত কঠিন কাজ তা আজকের যুগের কর্মজীবী মা, বাবা খুব ভালো করেই জানেন৷ তাই সারাদিন কাজের পরে তাঁরা অনেক সময় অল্পতেই রেগে যান৷ এর জন্য কিন্তু বাচ্চারা মোটেই দায়ী নয়৷ কারণ, শিশুর চিন্তা ও বোঝার ক্ষমতা পুরোপুরি অন্যরকম৷ তেমনটাই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা৷
শিশুর মস্তিষ্ক কাজ করে অন্যভাবে
যেমন ধরুন, আপনার শিশুটি ‘খাবার' মুখে দেওয়ার বদলে এদিক-সেদিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে খানিকটা খাচ্ছে আর তা দে্খে আপনি রেগে গিয়ে বললেন, ‘‘ভালো’ করে খাও৷’’ কিন্তু এই দুই-আড়াই বা তিন বছরের বাচ্চা সে তো জানেই না যে ‘ভালো করে খাওয়া’র অর্থ কী? এর বদলে ওকে যদি বলা হয় খাবার ‘মুখের ভেতরে’ ঢুকিয়ে দাও, তবেই না সে ঠিক মতো বুঝবে আপনি কী বলছেন৷ বলা বাহুল্য, জার্মান বাচ্চাদের একেবারে ছোট থেকে নিজে নিজে খাওয়া শেখানো হয়৷
শিশুদের মন বুঝতে হবে
সকালে তাড়াহুড়ো করার বিষয়টি আসলে শিশুরা বোঝে না৷ তাছাড়া ছোট শিশুরা তো বুঝতেই পারেনা যে, ওদের মা বা বাবা ঠিক কী চায়৷ যদিও প্রতিদিন সকালে ওদের একই কাজ করতে হয়, তারপরও শিশুদের একই রুটিনে অভ্যস্ত করানো বেশ কঠিন৷ নিজের মতো করে হেসে-খেলে সময় কাটাতে চায় শিশুরা৷ তাই শিশুদের বোঝাতে হলে ওদের মতো করে জানাতে হবে এবং কিছুটা সময় ওদের সাথে কাটাতে হবে৷
যেভাবে শান্ত রাখবেন
শিশু অকারণে কান্নাকাটি বা রাগ করলে, একটি পত্রিকা নিয়ে একটু জোরে জোরে পড়তে শুরু করুন এবং পত্রিকার ভেতর থেকে ‘শিশুদের পাতা’টি বের করে ওর হাতে দিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দিন৷ দেখবেন, আপনার শিশুটিও ঠিক আপনার মতো করে বসে পড়তে শুরু করবে৷ এতে শিশু যেমন শান্ত থাকবে তেমনি ধীরে ধীলে তার পড়ার অভ্যাসও তৈরি হবে৷
ছবি এঁকে বুঝিয়ে দিন
মুখে বলার চেয়ে শিশুকে ‘ছবি’ এঁকে বুঝিয়ে দিন সকালে ওকে কী কী করতে হবে৷ আমরা বলছি, দুই থেকে চার বছরের শিশুদের কথা৷ সকালে প্রথমে দাঁত ব্রাশ, ফ্রেশ কাপড় পরা, খাওয়া এবং সাথে কি নিতে হবে– সেসব রঙিন পেন্সিল দিয়ে এঁকে দিতে পারেন৷ দেখবেন এতে আপনার শিশু অনেক সহজে রুটিনে চলে আসবে৷
খেতে না চাইলে জোরাজুরি নয়
শিশুরা অনেক সময় সবজি বা ফল খেতে চায়না, এক্ষেত্রেও বাচ্চারা আনন্দ করে ফল বা সবজি খাচ্ছে এরকম ছবি দেখাতে পারেন বা নিজেই এঁকে দিতে পারেন৷ দেখবেন পরিবর্তন আসবে৷
শিশু যখন ইচ্ছে করে রাগায়
বাবা-মায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য অনেক শিশু ইচ্ছে করেই এমন কিছু কাজ করে যাতে তাঁরা রেগে যান৷ এরকম পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হলো, একদম চুপচাপ থাকা৷ আবার একটু জোরে জোরে নিজের সাথে নিজে কথা বললেও শিশু অবাক হয়ে থেমে যাবে৷
শিশুকে মারলে বা মানসিক কষ্ট দিলে যা হয়
শিশুকে শীরিরিক নির্যাতন করলে বা মানসিকভাবে কষ্ট দিলে পরবর্তীতে সেটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে৷ ইউনিসেফের এক গবেষণাতেও এ কথা বলা হয়েছে৷ শিশুরা সহজে এসব কষ্টের কথা ভুলতে পারে না৷
দাম্পত্যকলহ এড়িয়ে চলুন
প্রতিটি দম্পতির মধ্যেই একটু-আধটু ঝগড়া হওয়া স্বাভাবিক৷ তবে তা যেন দাম্পত্য কলহে রূপ না নেয়৷ বিশেষ করে সন্তানের সামনে যেন কখনো না হয়৷ ছোট বাচ্চারা তখন অসহায় বোধ করে এবং অন্যভাবে তার প্রকাশ ঘটায় কিংবা জেদী হয়ে ওঠে৷ মা-বাবার ঝগড়া শিশু মনে এমনই নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যা হয়তো কোনোদিনই ওরা ভুলতে পারে না৷ এই পরামর্শগুলো দিয়েছেন জার্মানির পরিবার ও শিশু লালনপালন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আনেটে ফ্রাংকেনবের্গার৷