শিল্পীর ভাবনায় আরজি কর 'দ্রোহ', উদ্যোক্তাদের ভয়
কলকাতার পুজোর থিমেও আরজি কর বিতর্ক। শিল্পীদের ভাবনায় উঠে আসছে প্রতিবাদ। মানছেন না উদ্যোক্তারা।
মেরুদণ্ড বিতর্ক
লালবাজার অভিযানে গিয়ে জুনিয়র চিকিৎসকেরা নিজেদের মেরুদণ্ডের জোরে ‘ভেঙে’ ফেলেছিলেন পুলিশের ‘লৌহকপাট’। কলকাতা পুলিশের নগরপালকে উপহার দিয়ে এসেছিলেন প্রতীকী শিরদাঁড়া। সেই শিরদাঁড়াই এবার পুজোর থিমে প্রতিফলিত।
কেষ্টপুরে আরজি কর
কেষ্টপুরের মাস্টারদা স্মৃতি সংঘ। তাদের এবারের থিম মানবসভ্যতার রক্ষা কবচ। মণ্ডপের সিলিং-এ শিরদাঁড়ার ইন্সটলেশন নজরকাড়ার মতো। সেই শিরদাঁড়ার গায়ে ফুটে উঠেছে অক্ষর। উদ্যোক্তাদের কথায়, শিক্ষাই মেরুদণ্ডকে সোজা রাখতে শেখায়।
বিতর্কে বেলেঘাটা
তবে শহরের আরও একটি পুজো কমিটি শিরদাঁড়া সংবলিত মণ্ডপ করেও বিতর্ক এড়াতে মণ্ডপে শিরদাঁড়া না রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। বেলেঘাটা গান্ধী মাঠ ফ্রেন্ডস সার্কলের পুজোর মণ্ডপেও এবার শিরদাঁড়ার ইনস্টলেশন করার কথা ছিল। সেই মোতাবেক মধ্য কলকাতার রামবাগানে তৈরিও করা হয়েছিল বিশালাকার এক মেরুদণ্ড।
শাসকের চাপে?
উদ্যোক্তারা জানালেন, কারো ভাবাবেগে আঘাত করা তাদের উদ্দেশ্য নয়। তাদের থিম ‘বাবারা বরাবর থেকে যান অন্তরালে’, মেরুদণ্ড সোজা রেখে। সেই ভাবনা থেকেই তারা ফেব্রুয়ারি মাসে ঠিক করেন মণ্ডপের প্রবেশপথে বিশালাকার শিরদাঁড়া স্থাপন করবেন। কিন্তু সাম্প্রতিক অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনার সঙ্গে তা মিলে যায়, তাই তারা মণ্ডপ সজ্জায় বদল আনার সিদ্ধান্ত নেন। প্রশ্ন উঠছে, মুখে যা-ই বলুন, আসলে শাসকের চাপেই তাদের এই সিদ্ধান্ত!
সনাতনের ভাবনায় আরজি কর
শিল্পী সনাতন দিন্দা এবার দুটি দুর্গামূর্তি গড়ছেন। একটি ভবানীপুর ৭৫ পল্লি এবং অন্যটি বিদ্যাসাগর সেন্ট্রাল ক্লাবের জন্য। সনাতনের তৈরি এই বছরের দুটি মূর্তিতেই প্রতিবাদ ধরা পড়েছে।
শিল্পীর কথা
বিদ্যাসাগর সেন্ট্রাল ক্লাবের মূর্তিতে দেখা যাচ্ছে চিরাচরিত প্রথা মেনে দেবী দুর্গা সিংহবাহিনী নন। এই মূর্তিতে দুর্গাকেই সিংহ হৃদয় দেখানো হয়েছে। শিল্পীর কথায়, সাম্প্রতিক কালে আমাদের শহর নারীশক্তির যে ছবি দেখেছে তাই ফুটে উঠেছে মূর্তিতে। দুর্গা এখানে সকল নারীর প্রতিনিধিত্ব করছেন। শিল্পী বললেন, “আমি দুর্গাকে কোনওদিনও অস্ত্র ধরাইনি, তবে এইবার ধরিয়েছি।”
উদ্যোক্তাদের বক্তব্য
তবে সনাতনের এই ভাবনার বিপরীত পথে হেঁটেছেন বিদ্যাসাগর সেন্ট্রাল ক্লাবেরই এক পুজোকর্তা সোমনাথ মুখোপাধ্যায়। তার বক্তব্য, তাদের এই বছরের পুজোর সঙ্গে সাম্প্রতিক কালের জনজাগরণের কোনও সম্পর্ক নেই। এই ভাবনা তাদের একবছর আগে থেকে ভেবে রাখা। তিনি বলেন, “আমরা উৎসব করছি, এই নির্লজ্জ প্রতিবাদের মধ্যে আমরা নেই। আমরা আগামী প্রজন্মকে একটা সুন্দর পৃথিবী দিতে চাই।''
শিল্পীর ভাবনায় অসুর
সনাতনের ভাবনায়, অসুরকে তিনি শুধু নৃশংসই দেখাননি, ঘৃন্যও দেখাতে চেয়েছেন। দাঁত নখ বের করা ধর্ষকের আদলে তৈরি করেছেন অসুরকে। তাই বিদ্যাসাগর সেন্ট্রাল ক্লাবের অসুরের মূর্তি অন্যান্য সময়ের অসুরের থেকে অন্যরকম সৃষ্টি করেছেন তিনি। কিন্তু বিদ্যাসাগর সেন্ট্রাল ক্লাবের কর্মকর্তাদের কথায়, আরজি কর কাণ্ড একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এমন ঘটনা সারা দেশ জুড়ে অহরহ ঘটে চলেছে।
দ্রোহকালের দুর্গা
ভবানীপুর ৭৫ পল্লির মূর্তির ভাবনাতেও প্রতিবাদের ছোঁয়া রয়েছে। শিল্পী জানালেন, দ্রোহকালের মধ্যেই এই সৃষ্টি, তাই স্বভাবিক ভাবেই বিদ্রোহের আঁচ সৃষ্টিতে প্রতিফলিত হয়েছে। এই দুর্গামূর্তিতে দেখা যাচ্ছে অসংখ্য নারীর পা। অনেকেই মনে করছেন, প্রতিবাদ মিছিলে হাজার হাজার নারীর পা মেলানোর ছবি এই সৃষ্টিতে ধরা পড়েছে।
উদ্যোক্তাদের ভিন্ন মত
৭৫ পল্লির সাধারণ সম্পাদক জানালেন, এই বছর হীরক জয়ন্তী বর্ষে তাদের থিম, ‘কলকাতা একদিন কল্লোলিনী তিলোত্তমা হবে’। তাদের এই ভাবনার সঙ্গে আরজি কর কাণ্ডের ‘তিলোত্তমার’ কোনও যোগ নেই।