শিম্পাঞ্জিদের অধিকার
২০ মে ২০১৪বার্লিনের চিড়িয়াখানায় বিশ্বের দ্বিতীয় প্রবীণতম গরিলা ৫৭ বছর পূর্ণ করছে৷ চিড়িয়াখানাটির জন্য এটা একটা উত্সবের বিষয় বৈকি৷ শিম্পাঞ্জি, গরিলা, ওরাং-ওটাংকে এইপ বলা হয়৷ হোমো গ্রুপের মধ্যে না পড়লেও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে মানুষের সঙ্গে অদ্ভুত মিল রয়েছে তাদের৷
জিনের মধ্য অনেক মিল
মানুষ ও শিম্পাঞ্জির জিনের মধ্যে ৯৩.৫ থেকে ৯৯.৪ শতাংশ মিল রয়েছে৷ এছাড়া শিম্পাঞ্জিদের চিন্তা করার ক্ষমতা রয়েছে৷ রয়েছে আগে থেকে পরিকল্পনা করার দক্ষতা ও দুঃখের অনুভূতি৷
গবেষক জেইন গুডঅল হলেন একমাত্র মানুষ, যিনি শিম্পাঞ্জি সমাজে গৃহীত হয়েছিলেন৷ ১৯৬০ থেকে ১৯৭০-এর দশক পর্যন্ত তিনি তাদের জীবনযাত্রা লক্ষ্য করেছেন৷ তারাও চুম্বন দিয়ে থাকে৷ আলিঙ্গন করে থাকে৷ পারস্পরিক সম্পর্কের দিক দিয়ে মানুষের সঙ্গে আশ্চর্য রকমের মিল রয়েছে৷
কিন্তু চিড়িয়াখানাগুলিতে তাদের যেভাবে রাখা হয় তা রীতিমত দুঃখজনক৷ জার্মানির ৩৮টি চিড়িয়াখানায় ৪৩০টি এইপ রয়েছে৷ পশুপালন আইন অনুযায়ী তাদের রাখার কথা৷ কিন্তু এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ করা খুব সহজ কাজ নয়৷
বাইরের চত্বরের বেড়াটা ৫০০ বর্গমিটার হওয়ার কথা৷ কিন্তু প্রায় ক্ষেত্রেই এটা ২০০ বর্গমিটার৷ এছাড়া ভেতরের খাঁচায়, অনেক সময় আলাদা খাঁচায়, মানসিক সমস্যাগ্রস্ত কোনো কোনো গরিলাকে রাখা হয়৷ অনেকটা ‘একক সেলে' আবদ্ধ করে রাখার মতো৷
অবস্থা অত্যন্ত করুণ
মনস্তত্ত্ববিদ ও পশু অধিকারবাদী ড. কলিন গল্ডনার এক বছর ধরে (৬০০ ঘণ্টা) জার্মান চিড়িয়াখানায় এইপগুলিকে কীভাবে রাখা হয়েছে, তা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন৷ মাঝে মাঝে ছদ্মবেশেও এই কাজটি করতে হয়েছে তাঁকে৷ কেননা পরিচয় জানতে পারলে সবসময় একজন চিড়িয়াখানার কর্মী থাকতেন তাঁর সঙ্গে৷ একবার তো এক চিড়িয়াখানা থেকে বেরও করে দেওয়া হয় এই গবেষককে৷
তাঁর গবেষণার ফলাফল – বেশিরভাগ চিড়িয়াখানায় এইপদের অবস্থা ‘মন্দ থেকে চরম দুর্দশাগ্রস্ত'৷ ‘যাবজ্জীবন কারাদণ্ড' বইটিতে বিশদভাবে এ সম্পর্কে লিখেছেন ড. কলিন৷ একটি চিড়িয়াখানায় এমনভাবে ৪১টি শিম্পাঞ্জিকে ঠাসাঠাসি করে রাখা হয়েছে, যা কল্পনা করা যায় না৷ তাদের জন্য বরাদ্দ করা খাঁচাটির আয়তন মাত্র ২২০ বর্গমিটার৷
ওষুধ দিয়ে শান্ত রাখা হয়
আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করেছেন এই মনস্তত্ত্ববিদ৷ আর তা হলো অনেক প্রাণীকে ওষুধ দিয়ে শান্ত করে রাখার প্রবণতা৷ ক্লিনিক্যাল মনস্তাত্ত্বিক হিসাবে ড. কলিন অভিজ্ঞ চোখ দিয়ে লক্ষ্য করেছেন এসব ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া৷ ডিপ্রেশন নিরাময়ক ওষুধ অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস দিয়ে রাখা হয় এইপগুলিকে৷ অথচ এটা আসলে মানুষের জন্য তৈরি ওষুধ৷
চিড়িয়াখানায় অনেক পশুই বিষন্নতা, আক্রমণাত্মক মনোভাব, নিজেকে আঘাত করার প্রবণতা ইত্যাদিতে ভোগে৷ ‘‘আর তাই চিড়িয়াখানায় তাদের টিকিয়ে রাখার জন্য অধিকাংশ প্রাণীকেই ওষুধ দিয়ে রাখা হয়,'' বলেন ড. কলিন৷
‘গ্রেট এইপ' প্রকল্প
এইসব প্রাণীর দুরবস্থা দূর করার ব্যাপারে পশু অধিকারবাদীরা উদ্যোগ নিয়েছেন৷ ২০১১ সালে জার্মানিব্যাপী একটি ‘গ্রেট এইপ প্রকল্প' যাত্রা শুরু করেছে৷ এতে বলা হয়েছে মানুষের মৌলিক অধিকার এইপদের অধিকার পর্যন্ত বিস্তৃত করতে হবে৷ মূল দাবি হলো, ‘‘এইপদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, বাঁচার অধিকার ও শারীরিক অখণ্ডতা সংরক্ষিত করতে হবে৷''
গবেষণার প্রয়োজনে এই প্রাণীদের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা, হত্যা করা কিংবা তাদের আবাসস্থল ধ্বংস করা নিষিদ্ধ করতে হবে৷ অবশ্য পশু অধিকারবাদীরা এব্যাপারে সচেতন যে, মানুষ ও বনমানুষের মধ্য পার্থক্য রয়েছে৷ কিন্তু তবু তাদেরও সম্মানজনকভাবে বাঁচার অধিকার রয়েছে৷