শিক্ষার্থীরা জামিন পেলেও শহীদুল, নওশাবা কারাগারে
২০ আগস্ট ২০১৮রবিবার নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের ঘটনায় আটক ৪২ জন শিক্ষার্থীকে আদালত জামিন দেয়৷ আরো পাঁচজনকে জামিন দেয়া হয় সোমবার৷ সোমবার দুপুরের পর কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঘটনায় আটক ১৭ জনকে জামিন দেয়া হয়৷ তাঁদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকায় জামিন দেয়া হয়েছে বলে আদালতের কয়েকজন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে৷ নিরাপদ সড়কের আন্দোলনের সময়ের ঘটনায় আটকদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা আছে৷ আর বাকিদের ধানমন্ডিসহ ঢাকার কয়েকটি থানায় ভাংচুরের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে করা মামলায় আটক করা হয়েছিল৷
তাঁদের আইনজীবীদের একজন অ্যাডভোকেট আইনুন নাহার সিদ্দিকা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা আদালতের কাছে জামিন চেয়েছি৷ তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকায় তাঁরা জামিন পেয়েছেন৷ তাঁদের মূলত সন্দেহের বশে আটক করা হয়েছিল৷ তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো তথ্য-প্রমাণ ছিল না৷ আইনগত প্রক্রিয়ার বাইরে আর কোনো প্রক্রিয়া এই জামিনে কাজ করেছে বলে আমাদের জানা নেই৷ তবে আমরা ঈদকে গুরুত্ব দিয়েছি৷ আমরা আদালতে বলেছি, এই বাচ্চারা যেন ঈদের আগে জামিন পায়, কারাগারে না থাকে৷ আদালত আমাদের আবেদন আমলে নিয়েছেন৷''
কিন্তু নিরাপদ সড়ক আন্দেলনের সময় গ্রেপ্তার আলোকচিত্রী ড. শহীদুল আলম এবং অভিনেত্রী নওশাবা এখনো জামিন পাননি৷ ঈদের আগে তাঁদের জামিন পাওয়ার সম্ভাবনাও দেখছেন না তাঁদের আইনজীবীরা৷
ড. শহীদুল আলমের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের নিরাপদসড়ক আন্দোলনের সময় ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা হয়েছে৷ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাঁর জামিনের আবেদন নাকচ করেছে৷ মামলার পরবর্তী তারিখ সেপ্টেম্বরে৷ তাঁর আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন জানান, ‘‘আমরা রবিবার শহীদুল আলমের জামিন শুনানির জন্য মামলার তারিখ এগিয়ে আনার অবেদন করেছিলাম, কিন্তু আদালত আমাদের আবেদনে সাড়া দেননি৷''
তিনি বলেন, ‘‘একই ঘটনায় অন্য সবাইকে জামিন দেয়া হলেও তাঁকে দেয়া হচ্ছে না৷ এটা উদ্বেগজনক ও দুঃখজনক৷ তাঁকে একটা বক্তব্যের কারণে আটক করা হয়েছে৷ আর যে বক্তব্যের কথা বলা হচ্ছে, সেটা তিনি পুরোপুরি দেন নাই৷ আমাদের এর আগে আদালত থেকে বলা হয়েছে, আইন সবার জন্য সমান৷ কিন্তু এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি সবার ক্ষেত্রে আইন সঠিকভাবে প্রয়োগ হচ্ছে না৷ ওনার ব্যক্তিস্বাধীনতা এভাবে কেড়ে নেয়া গ্রহণযোগ্য নয়৷''
শহীদুল আলমের মুক্তির দাবিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লেখক, বুদ্ধিজীবী, শিল্পীরা সোচ্চার৷ সর্বশেষ তাঁর মুক্তির দাবিতে বিবৃতি দিয়েছেন ১০ নোবেলজয়ীসহ ২৩ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি৷ তাঁরা শহীদুল আলমের গ্রেপ্তার ও রিমান্ডকে ‘বিধিবহির্ভূত ও বেআইনি' আখ্যা দিয়ে এ ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন৷ তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলাকে ‘নিপীড়নমূলক' আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে তাঁর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন৷
এদিকে অভিনেত্রী নওশাবা আহমেদকে রিমান্ড শেষে জামিন না দিয়ে সোমাবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে৷ তাঁকে মাফ করে দিয়ে মুক্তি দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন অভিনয়শিল্পী ও সহকর্মীরা৷
শিক্ষার্থীদের জামিন প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘‘আটক শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে সরকার সহানুভূতি দেখিয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী চেয়েছেন তারা যেন ঈদের আগে জামিনে মুক্তি পায়৷ আমরা প্রসিকিউশনকে বলেছি, জামিন আবেদনের বিরোধিতা না করে যেন সহযোগিতা করা হয়৷ সেটাই করা হয়েছে৷অনেকের আইনজীবী ছিল না, আমরা তাদের সেদিক দিয়েও সহযোগিতা করেছি৷''
শহীদুল আলম ও নওশাবার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘‘তাঁদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আছে, মামলা আছে৷ তাঁদের জামিন পেতে হলে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে৷ আইন যে সিদ্ধান্ত নেবে, আদালত যে সিদ্ধান্ত নেবে, তা-ই হবে৷''
সরকার এইসব বিষয় নিয়ে কোনো চাপে আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘কিসের চাপ! কোনো চাপের প্রশ্ন আসে না৷ আমরা গণতান্ত্রিক সরকার৷ আমরা মনে করি, এইসব বাচ্চারা মা-বাবার সঙ্গে ঈদ করবে, এটাই হিউম্যানেটেরিয়ান অ্যাপ্রোচ৷ তাই শিক্ষার্থীরাদের মানবিক কারণে ঈদের আগে জামিন দেয়া হয়েছে৷''