1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দ্বিমুখী সংকট

২১ সেপ্টেম্বর ২০২০

করোনার কারণে অভিভাবকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের সন্তানদের বেতন দিতে পারছেন না৷ আবার টিউশন ফি না পাওয়ায় বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষকদের বেতন না দিতে পেরে মহাসংকটে৷ দ্বিমুখী এই সংকটের সমাধান কী?

https://p.dw.com/p/3inbr
ছবি: DW/M. Mamun

বাংলাদেশে করোনার কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ৷ অনলাইনে ক্লাস চললেও কোথাও কোথাও তা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে টিউশন ফি না পাওয়ার কারণে৷ বেশ কিছু কিন্ডারগার্টেন বন্ধই করে দিতে হয়েছে৷
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘ছুটি’ ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে৷ বেসরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদ বলছে, এরপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না খুললে শিক্ষকরা বড় ধরনের সংকটে পড়বেন৷ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হবে৷ তবে অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অমানবিকভাবে টিউশন ফি আদায় করার পাঁয়তারা করছে৷ তারা টিউশন ফি আদায়ের জন্য এই করোনার মধ্যেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ৷

বাংলাদেশ কিন্ডার গার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, এ পর্যন্ত ২০টি কিন্ডার গার্টেন পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ ওই স্কুলগুলো আর চালু হবে না৷ আরো একশ’র মতো স্কুল বন্ধের পথে৷ এই প্রতিষ্ঠানগুলো বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয় এবং আয়ের একমাত্র উৎস টিউশন ফি৷ করোনায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন আদায় সম্ভব হয়নি৷ ফলে তারা শিক্ষকদের বেতন দিতে পারেনি৷ ভাড়া বাড়িতে যেসব স্কুল, সেসবের ভাড়াও দিতে পারেনি স্কুল কর্তৃপক্ষ৷ ফলে স্কুল স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিতে হয়েছে৷ বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘এই টিউশন ফি আর পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছি না৷ কারণ, অনেকে কাজ হারিয়ে পরিবার নিয়ে গ্রামে চলে গেছেন৷ এখন যদি অটো প্রমোশন দেয়া হয়, তাহলে কেউ স্কুলের বেতন দেবে বলে মনে হয় না৷ অভিভাবকরা অন্য স্কুলে নিয়ে তাদের সন্তানদের ভর্তি করাবেন৷’’

যদি অটো পাস দেয়া হয় তাহলে কেউ স্কুল বেতন দেবে বলে মনে হয় না: মিজানুর রহমান

মিজানুর রহমানের নিজের মালিকানাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির নাম রোজ গার্ডেন হাইস্কুল৷ এটি যাত্রবাড়ি এলাকায়৷ ওই স্কুলটি তার নিজের বাড়িতে৷ এ কারণে তিনি এখনো স্কুলটি বন্ধ করেননি বলে জানান৷ কিন্তু শিক্ষকদের বেতন দিতে পারছেন না৷

অন্যদিকে এমপিওভুক্ত এবং উচ্চ টিউশন ফি’র ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অভিভাবকরা টিউশন ফি কমানোর জন্য আন্দোল করছেন৷ তাদের কথা- এই সময়ে টিউশন ফি অর্ধেক নেয়া হোক৷ কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ তা মানছে না৷ এমনকি বেতন না দেয়ায় অনলাইন ক্লাস বন্ধ করে দেয়া এবং শিক্ষার্থীদের স্কুল থেকে নাম কেটে দেয়ার অভিযোগও উঠেছে৷

ঢাকার মাস্টারমাইন্ড স্কুলের অভিভাবকরা এ নিয়ে সোমবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন৷ তারা অভিযোগ করেছেন, টিউশন ফি বকেয়া থাকায় অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করা হচ্ছে না ৷ শুধু তাই নয়, ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দুই মাসের টিউশন ফি পরিশোধ না করলে অনলাইনে প্রবেশ বন্ধসহ রেজিস্টার থেকে নাম বাদ দেওয়ার নোটিশও দেয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের৷

সংবাদ সম্মেলনে অভিভাবকদের পক্ষে উপস্থিত সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা জানান, ‘‘এ নিয়ে হাইকোর্টে একটি রিটও হয়েছে৷ সেখানে ১৪ দিন সময় দিতে বলা হয়েছে৷ স্কুল কর্তৃপক্ষ তা-ও মানছে না৷’’ এ নিয়ে মাস্টরমাইন্ড স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কাউকে পাওয়া যায়নি৷

টিউশন ফি না দিতে পারার কারণে শিক্ষার্থীকে অনলাইন ক্লাশ থেকে বিরত রাখা যাবেনা: অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম মো. ফারুক

জামিউল আহসান নামের একজন অভিভাবকের সন্তান পড়ে ওয়াইডাব্লিউসিএ স্কুলে৷ তিনি বলেন, ‘‘করোনার জন্য আমরা সন্তানদের টিউশন ফি দিতে পারছি না৷ কিন্তু আমাদের প্রায় প্রত্যেক দিন এর জন্য ফোন করা হয়৷ আমরা টিউশন ফি অর্ধেক করার জন্য আন্দোলন করছি৷’’

তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় টিউশন ফি'র ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত দিচ্ছে না৷ ফলে পরিস্থিতি আরো জটিল হচ্ছে৷ অভিভাবকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় দুই পক্ষকেই মানবিক আচরণ করতে বলেছে বলে জানান অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু৷ তার কথা, ‘‘করোনায় সব পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত৷ তাই টিউশন ফি'র ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত আমরা আশা করছি৷’’

মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম মো. ফারুক বলেন, ‘‘আমার জানা মতে, টিউশন ফি নিয়ে বাংলা মাধ্যম স্কুলে তেমন সমস্যা হচ্ছে না৷ তবে বেশ কিছু ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে সমস্যা হচ্ছে৷’’

‘‘তবে ইংরেজি বা বাংলা যে মাধ্যমই হোক না কেন, টিউশন ফি না দিতে পারার কারণে কোনো শিক্ষার্থীকে অনলাইন ক্লাশ থেকে বিরত রাখা যাবে না, তাদের ভর্তি বাতিল করা যাবে না বলে নির্দেশ দেয়া হয়েছে,’’ জানান তিনি৷

তিনি বলেন, ‘‘আর বেতন নিয়ে যে সমস্যা তা স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকরা মিলে যৌথ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান বের করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে৷ তাদের কেস টু কেস দেখতে বলা হয়েছে৷ এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর বাইরে কোনো ভূমিকা নেবে না৷’’