শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়...
১৫ আগস্ট ২০১৬কিন্তু দুঃখের বিষয়, এ সব আলোচনার বেশিরভাগই ভুল পথে যাচ্ছে৷ অনেকক্ষেত্রেই একে-অপরের উপর দায় চাপানোর যে দীর্ঘদিনের সংস্কৃতি আমাদের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে রয়েছে, তার এক ধরনের পুনরাবৃত্তি আমরা খেয়াল করছি৷ বাংলাদেশের প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জঙ্গিবাদ বিস্তারের জন্য দায়ী করে বক্তব্য রেখেছেন৷ আমার কাছে মনে হয়, এ অভিযোগ নিয়ে আরো আলোচনা ও বিতর্ক প্রয়োজন৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জঙ্গিবাদের জন্ম দিতে পারে কিনা, জঙ্গিবাদের কতটুকু বিস্তৃতি ঘটাতে পারে বা জঙ্গিবাদ দমনে কী ভূমিকা রাখতে পারে – এ সব প্রশ্ন সামনে রেখেই এ আলোচনা চলতে পারে৷
বাংলাদেশে ধর্মকে আশ্রয় করে যে জঙ্গিবাদ – তার শুরু গত শতকের নব্বই দশকের শুরুর দিকে, আফগানিস্তান ফেরত যোদ্ধাদের হাত দিয়ে৷ পরবর্তীতে নানা পর্বে জঙ্গিবাদের যে বিস্তার ঘটেছে, তাতে মোটা দাগে কয়েকটি পরিবর্তন খেয়াল করা যায়৷ প্রথমদিকে জঙ্গিবাদ বলতেই মাদ্রাসা ছাত্র, বিশেষ করে কওমি মাদ্রাসার কথা বলা হতো৷ এখন যেভাবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একতরফা দোষারোপ করা হচ্ছে, তেমনি তখন কওমি মাদ্রাসা মানেই ‘জঙ্গির আখড়া' – এমনটা শোনা যেত৷
নতুন পর্বের জঙ্গিদের অনেকেই বেশ ধনী বা অবস্থাপন্ন পরিবার থেকে আসা, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ও নামি-দামি, দেশি-বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা৷ পরিবারের অবস্থা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার পরিবর্তনের সাথে যোগ হয়েছে প্রযুক্তির ব্যবহারের পার্থক্য৷ নতুন পর্বের জঙ্গিরা টেক-স্যাভি, অর্থাৎ প্রযুক্তি ব্যবহারে বেশ পারদর্শী৷ নতুনদের প্ররোচনা, প্রচার, অর্থ জোগাড় ও যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে তারা ইন্টারনেটকে ব্যবহার করছে৷
তবে নতুন পর্বের এই জঙ্গিদের নিয়ে বিশ্লেষণ করতে গেলে আরেকটি বিষয় আমাদের বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন৷ গুলশানের ক্যাফেতে হত্যাকাণ্ড ও কল্যাণপুরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহত জঙ্গিদের মধ্যে যেমন নিবরাস ইসলাম, রোহান ইমতিয়াজ বা মীর মোবাশ্বেরের মতো সমাজের উঁচু স্তরের ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া তরুণরা ছিল, তেমনি তাদের সাথে মাদ্রাসা পড়ুয়া খায়রুল ইসলাম পায়েল বা সরকারি কলেজ থেকে পাশ করা শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বলও কিন্তু ছিল৷ জঙ্গিবাদের সাথে জড়িত হিসেবে নাম এসেছে পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা নির্বিশেষে সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের৷ নিজের পরিবার-পরিজন নিয়ে চিকিৎসক বা ইঞ্জিনিয়ারের মতো উচ্চ শিক্ষিত ও সমাজে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা দেশে ছেড়ে সিরিয়ায় জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এ যোগ দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে৷ অর্থাৎ শুধু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে জঙ্গিবাদের সূতিকাগার হিসেবে চিহ্নিত করা বড় ধরনের ভুল হবে বলে আমি মনে করি৷ এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একাই জঙ্গিবাদ দমনে ও নিয়ন্ত্রণে আলাদাভাবে ভূমিকা রাখতে পারে কিনা – সে নিয়েও সন্দেহ রয়েছে৷ জঙ্গিবাদ একটি সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যা৷ তাই তা নিয়ন্ত্রণ ও দমনেও আমাদের সমন্বিত পদক্ষেপের কথা ভাবতে হবে৷ আর এই সমন্বিত পদক্ষেপ নেবার জন্য প্রথমেই আমাদের বুঝতে হবে জঙ্গিবাদের কারণ ও জঙ্গি হয়ে ওঠার পেছনে ধাপগুলো কী কী৷
জঙ্গিবাদের কারণ
জঙ্গিবাদের কারণের তিনটি পর্যায় রয়েছে বলে আমি মনে করি৷ প্রথমত, ব্যক্তি পর্যায়ে নানা কারণে একজন জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে৷ হতাশা, নিজেকে তুচ্ছ মনে করা ও নিজের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা, নিজের একটি আলাদা পরিচয় নির্মাণ করা ও জীবনের মানে খোঁজার চেষ্টা থেকেও অনেকের জঙ্গিবাদের প্রতি আকর্ষণ শুরু হয়৷ আইএস বা আল-কায়েদার মতো সংগঠন তরুণদের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি, ভ্রান্ত মতবাদ দিয়ে তারা একটি ‘মহান' কাজের অংশ হতে যাচ্ছে, এই অনুভূতি দেয়৷ অনেক সময় ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি, রাষ্ট্রের নিপীড়নও একজনকে জঙ্গিবাদের পথে ঠেলে দিতে পারে৷ এছাড়া প্রযুক্তির এই যুগে ইন্টারনেটে নানা উগ্রবাদী মতবাদের উপকরণও রয়েছে৷ এসব অনুসরণ করে নিজে নিজেও অনেকে জঙ্গি হয়ে ওঠে৷ তারুণ্যের সাথে উত্তেজনা ও অ্যাডভেঞ্চারের সন্ধানের একটি যোগাযোগ রয়েছে৷ সেই উত্তেজনার বশে এ সব জঙ্গি সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে ধার্মিক না হয়েও ধর্ম প্রতিষ্ঠা করার ব্রত নিয়ে হত্যাকাণ্ড ও নিষ্ঠুরতাকে বৈধতা দেয় এ সব জঙ্গিরা৷
দ্বিতীয় পর্যায়টি সামাজিক৷ কেউ যদি মূলধারার সমাজ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন মনে করে, তবে সে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হতে পারে৷ বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা রয়েছে, দুইটি রাজনৈতিক জোট একে-অপরের প্রতি যে হিংসাত্মক ও সহিংস মনোভাব পোষণ করে, তা গণতন্ত্রের প্রতি অনেকের অনাস্থা পোষণের কারণ হয়ে ওঠে৷ জঙ্গি সংগঠনগুলো একটি ‘স্বপ্নের দেশের' প্রতিশ্রুতি দেয়৷ তাই শরিয়া প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমনটা মনে করে জঙ্গিরা সহিংস কাজে জড়িয়ে পড়ে৷
তৃতীয় পর্যায়টি আন্তর্জাতিক৷ পশ্চিমা-বৈদেশিক নীতি, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক ও আফগানিস্তানে দীর্ঘমেয়াদি অবস্থান ও মানবিক বিপযর্য়ের নানা উদাহরণ অনেকের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে৷ ফিলিস্তিন, সিরিয়া ও কাশ্মীরে মুসলমানদের উপর নির্যাতনের বিভিন্ন খবর নানাভাবে বাংলাদেশে প্রচার করা হয়৷ বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের ধর্মীয় পরিচয় এক ধরনের হুমকির মধ্যে রয়েছে৷ শুধু মুসলমান হওয়ার কারণে সে নিগৃহীত হতে হচ্ছে – এই অনুভূতি অনেককেই উগ্রপথে টেনে নিয়ে যেতে পারে৷ তখন পশ্চিমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার একটি উপায় খুঁজতে গিয়ে জঙ্গি সংগঠনগুলোর দেখানো সহিংস পথ বেছে নেয় এবং হামলায় অংশ নেয়াকে একটি জিহাদি দায়িত্ব বলে মনে করে এ সব জঙ্গিরা৷ অনলাইনে এবং অফলাইনে এ সব বিষয়ে জঙ্গিপন্থি হাজার রকমে বক্তৃতা শুনে ও বিভিন্ন ফোরামে আলোচনায় অংশ নিয়েও অনেকে জঙ্গিতে পরিণত হয়৷
জঙ্গিবাদের পাঁচটি ধাপ
একজন আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ তরুণ যখন জঙ্গি হামলায় অংশ নেয়, তখন অনেককেই অবাক হতে দেখা যায়৷ বাংলাদেশে সাম্প্রতিকতম হামলায় অংশ নেয়া জঙ্গিদের পরিবার ও বন্ধুরা হামলাকারীদের ‘স্বাভাবিক' হিসেবে বর্ণনা দিয়েছে৷ কেউ গিটার বাজিয়ে গান গাইতো, কেউ ফুটবল খেলতো, কেউ বা বলিউডের কোনো অভিনেত্রীকে পছন্দ করতো৷ প্রশ্ন হলো, এ ধরনের ‘সহজ', ‘স্বাভাবিক' তরুণ থেকে তারা কীভাবে জঙ্গিতে পরিণত হয়?
জঙ্গি হবার পেছনে আসলে কয়েকটি ধাপ থাকে৷ বেশিরভাগ সময় কারো সহযোগিতায় বা প্রভাবে একজন জঙ্গি সংগঠনের সাথে যুক্ত হতে পারে৷ আবার নিজেই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জঙ্গি হামলা চালানোর ঘটনাও ঘটার সম্ভবনা আছে৷ আর সবাই চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছে জঙ্গি হামলকারী নাও হতে পারে৷ অর্থাৎ প্রথম কয়েকটি ধাপ থেকে আবারো স্বাভাবিক জীবনে ফিরেও আসতে পারে কেউ কেউ৷
প্রথম ধাপ: হতাশা, বৈষম্য ও অবিচার অনুভব করা
দ্বিতীয় ধাপ: এর সমাধান কী হতে পারে তা খোঁজা এবং তার বিরুদ্ধে লড়াই করার ইচ্ছা
তৃতীয় ধাপ: উগ্র হয়ে মৌলবাদের দিকে ঝুঁকে পড়া
চতুর্থ ধাপ: উগ্র মতবাদে আরো শক্তিশালী হয়ে ‘আমরা' বনাম ‘তারা' পরিচয় নির্মাণ ও শত্রু চিহ্নিতকরণ
পঞ্চম ধাপ: হামলায় অংশ নেয়া
তাই আমার মতে, জঙ্গিবাদকে নিয়ন্ত্রণ ও দমন করতে হলে শুধু শেষ ধাপটি প্রতিরোধ করলে হবে না৷ বরং প্রথম থেকেই এর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে৷
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও জঙ্গিবাদ
দুঃখের বিষয় হলো জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করতে বাংলাদেশে শুধু ‘হার্ড পাওয়ার' ব্যবহার করা হচ্ছে৷ এর অংশ হিসেবে নিরাপত্তা ও নজরদারি জোরদার করা হয়েছে৷ ঢাকায় ও ঢাকার বাইরে অস্ত্র উদ্ধারের নামে মারা যাচ্ছে সন্দেহভাজন জঙ্গিরা৷ প্রশ্ন হলো, এই বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা, অব্যাহত নজরদারি ও নিরাপত্তার বাড়াবাড়ি কি জঙ্গি দমনের জন্য যথেষ্ট? আমাদের মনে রাখতে হবে, জঙ্গিরা কিন্তু বেশ সাফল্যের সাথেই ‘সফট পাওয়ার' ব্যবহার করছে৷ তারা তাদের উগ্র মতবাদ, ‘প্রপাগান্ডা' ও ‘ন্যারেটিভস' অনলাইন ও অফলাইনে ছড়িয়ে দিচ্ছে৷ জঙ্গিবাদের সাথে যেখানে মনোজাগতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও ইমোশনাল সংযোগ রয়েছে, সেখানে শুধু নিরাপত্তা ও নজরদারির মাধ্যমে তা মোকাবিলা করা কি আদৌ সম্ভব?
সম্প্রতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোনো শিক্ষার্থী পরপর তিনটি ক্লাস বা পরপর দশদিন অনুপস্থিত থাকলে শিক্ষকদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলা হয়েছে৷ এছাড়া শিক্ষকদের ও কর্তৃপক্ষকে শিক্ষার্থীদের উপর কড়া নজরদারি চালানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড চালানো শুরু হবে এ মন কথাও শোনা যাচ্ছে৷ অতীতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ছাত্র সংগঠনগুলোর নানা উজ্জ্বল অবদান রয়েছে৷ কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এ সব ছাত্র সংগঠন রাজনৈতিক আদর্শ ও ছাত্রদের কল্যাণের চেয়ে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, কোন্দল ও সন্ত্রাসেই তাদের ভূমিকা রেখেছে বেশি৷ তাই ছাত্রলীগ, ছাত্রদল বা ছাত্রশিবির – যে ছাত্রসংগঠনই হোক না কেন, তারা জঙ্গি দমনে ভূমিকা রাখবে না সন্ত্রাসের নতুন পরিসর তৈরি করবে – তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে৷
উপরের আলোচনায় আমরা দেখেছি যে, জঙ্গিবাদের কারণ বিভিন্ন ও নানা দিকে বিস্তৃত৷ এটি কোনো সহজ-সাধারণ বিষয় নয়৷ তাই শুধু একটি চালক বা কারণ দিয়ে জঙ্গিবাদকে বিশ্লেষণ করা যাবে না৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে যাঁরা জঙ্গিবাদের সম্পর্ক খুঁজে পাচ্ছেন, তাঁদের মনে রাখতে হবে যে শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একা জঙ্গিবাদের জন্ম দেয় না৷ তাই তারা একা তা দমনও করতে পারে না৷ যেসব বুদ্ধিজীবী ‘বড় মাঠের অভাব' অথবা ‘দেশপ্রেম আর দেশের ইতিহাস সম্পর্কিত শিক্ষার' অভাবের সাথে জঙ্গিবাদের উত্থান মিলাচ্ছেন, তাঁদের মনে রাখতে হবে শিক্ষা দুই ধরনের৷ ‘ফর্মাল' বা আনুষ্ঠানিক শিক্ষা আমরা পাই স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা অথবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে৷ আবার ‘ইনফর্মাল' বা অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা আমরা পাই বিভিন্ন আলোচনা, টেলিভিশন অনুষ্ঠান, সংবাদপত্র, বই, ম্যাগাজিন, পরিবার ও সোশ্যাল মিডিয়া থেকে৷ তাই জঙ্গিবাদের বিস্তারের পেছনে যদি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় দায়ী থাকে, তবে ইনফর্মাল শিক্ষার আধার, যেমন বিভিন্ন মিডিয়া ও সুশীল সমাজও এই দায় এড়াতে পারে না৷
আমি মনে করি, শিক্ষা একটি ‘ডাবল এজড সর্ড' – যা জঙ্গিদের পক্ষে যেমন কাজে লাগানো যায়, তেমনি বিপক্ষেও কাজে লাগানো যায়৷ শিক্ষার মাধ্যমে কাউকে ‘ইনডকট্রিনেট' করে উগ্রপন্থায় ঠেলে দেয়া সম্ভব, একটি নির্দিষ্ট মতবাদের প্রতি তীব্র আকর্ষণ তৈরি করা সম্ভব৷ আবার ঠিকমত প্রস্তুতি নিলে শিক্ষা দিয়েই জঙ্গিবাদকে কমানো যায়৷ জঙ্গিবাদের ন্যারেটিভের বিরুদ্ধে শক্ত কাউন্টার ন্যারেটিভও দাঁড় করানো যায়৷ এই লড়াই মনোজাগতিক৷ তাই নিরাপত্তা ও নজরদারির পাশাপাশি দরকার জঙ্গিবাদের কারণগুলো নির্মূল করা৷ সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিরতা তৈরি করা যেন বৈষম্য, হতাশা ও অবিচারের ঘটনা কম ঘটে৷
তবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই নাগরিক অধিকার, বৈচিত্রের প্রতি সম্মান, অন্য জাত, মত ও পথের প্রতি সম্মান করা শেখাতে হবে৷ বিশেষ করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচিত লাভজনক ব্যবসা ও বাণিজ্য শিক্ষা শুধু নয়, সামাজিক বিজ্ঞান ও লিবারেল আর্টসের প্রতি জোর দেয়া৷ ট্রেনিং, স্কিল ডেপেলপমেন্ট বা শুধু কেরিয়ারের জন্য শিক্ষা পয়সা কামাতে শিখায়, জীবন সম্পর্কে ধারণা দেয় না, ক্রিটিক্যাল থিংকিং বা প্রশ্ন করতে শেখায় না৷ তাই সাধারণ শিক্ষা জঙ্গিবাদ দমন করতে পারবে না৷ শিক্ষাব্যবস্থা সেক্যুলার হলেও ততক্ষণ তা উগ্রপন্থা দমনে সাহায্য করতে পারবে না, যতক্ষণ না তা শিক্ষার্থীদের উদারতা ও বৈচিত্রের সাথে সন্ধি করতে শেখায়৷ আমাদের সময় এসেছে শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে, ‘পেডাগজি' নিয়ে চিন্তা করার৷ শিক্ষককেন্দ্রিক নয়, শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার৷ নিজের পরিচয় নির্মাণ, ক্রিটিক্যাল থিংকিং বাড়ানো ও শিক্ষার্থীদের ‘প্রশংসার' জায়গা শিক্ষা কার্যক্রমে রাখতে হবে৷ আর সেই প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের দর্শক বা শ্রোতা নয়, অংশগ্রহণকারী করে তুলতে হবে৷
জঙ্গিবাদ দমন একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া৷ সমন্বিত ব্যবস্থার মাধ্যমে আমাদের তা দমন করতে হবে৷ আমাদের মনে রাখা উচিত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একাই সব সমস্যার মূলেও নয়, সর্ব রোগের ওষুধ বা প্যানাশিয়াও নয়৷
আপনি কিছু যোগ করতে চাচ্ছেন? লিখুন মন্তব্যে৷