1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শাহরুখ, আমির আপনাদের সমর্থন করতে পারছি না

১ মে ২০১৭

আপনারা দু’জনেই সারোগেসি, অর্থাৎ অন্য নারীর গর্ভ ভাড়া নিয়ে সন্তানের অভিভাবক হয়েছেন৷ এর মাধ্যমে আপনারা একজন নারীর জীবন হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছিলেন৷ যদিও শেষ পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক মতোই হয়৷

https://p.dw.com/p/2c7IP
Bollywood Schauspieler Shah Rukh Khan mit Frau Gauri
ছবি: picture-alliance/Dinodia Photo Library

সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে সারোগেট মায়েদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে৷ তাছাড়া তাঁরা নানারকম অসুখে পড়তে পারেন বলে গবেষণায় জানা গেছে৷ শুধু তাই নয়, সারোগেসির মাধ্যমে জন্ম নেওয়া নবজাতকরা জন্মের সময় ছাড়াও, পরবর্তী জীবনে সমস্যায় পড়তে পারে বলেও গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে৷

তাত্ত্বিক আলোচনা ছেড়ে এবার কয়েকটি গবেষণার ফলাফল উল্লেখ করা যাক৷

  •  নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণা বলছে, সারোগেসির মাধ্যমে জন্ম নেয়া নবজাতকদের ওজন কম, এমনকি অনেক কম, হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে৷
  • ২০১৪ সালে ‘জার্নাল অফ প্যারিন্যাটোলজি’-তে প্রকাশিত আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, সারোগেসি সহ অন্যান্য ‘অ্যাসিস্টেড রিপ্রোডাকটিভ টেকনোলজি'-র মাধ্যমে জন্ম নেওয়া নবজাতকদের গর্ভেই মৃত্যুবরণের সম্ভাবনা স্বাভাবিক গর্ভধারণের মাধ্যমে জন্মানো নবজাতকদের চেয়ে চার-পাঁচ গুণ বেশি হয়ে থাকে৷
  • সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান পাওয়ার সাফল্যের হার বাড়াতে অনেক সময় ভাড়া করা নারীর গর্ভে একাধিক ভ্রূণ প্রবেশ করানো হয়৷ এতে করে গর্ভে একসঙ্গে একাধিক ভ্রূণ বেড়ে ওঠার সম্ভাবনা বাড়ে৷ ব্রিটিশ জার্নাল অফ মেডিসিন বলছে, মাল্টিপল প্রেগনেন্সির কারণে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, ভ্রূণের আকার বৃদ্ধিতে সমস্যা, প্রি-একলামশিয়া ও নির্দিষ্ট সময়ের আগে বাচ্চা প্রসবের মতো ঘটনা ঘটতে পারে৷
  • গর্ভের সন্তানের সঙ্গে প্রাকৃতিক উপায়ে গর্ভধারী মায়ের যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে সারোগেসির ক্ষেত্রে সেটি সম্ভব হয় না৷ এর একটি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় সন্তানের মধ্যে৷ ‘জার্নাল অফ চাইল্ড সাইকোলজি অ্যান্ড সাইকিয়াট্রি’-তে প্রকাশিত গবেষণা বলছে, সারোগেসির মাধ্যমে জন্ম নেয়া সন্তানদের পরবর্তীতে সামাজিক রীতি-নীতির সঙ্গে মেনে চলতে সমস্যায় পড়তে হয়৷

সারোগেসির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এ সব স্বাস্থ্যগত সমস্যার কথা জানার পর শাহরুখ ও আমিরের সিদ্ধান্ত সমর্থনের কোনো কারণ আমি দেখি না৷ উল্টো অবাক হচ্ছি এই ভেবে যে, এই তথ্যগুলো জানার পরও তাঁদের মতো তারকারা কেন ঐ পথে হাঁটলেন? নাকি তাঁরা এ সব জানতেনই না? সবাই নিচ্ছে আমিও একটা নিই – বিষয়টিকে কী এভাবেই দেখেছেন তাঁরা? কিন্তু শাহরুখ আর আমির খানকে যতটুকু চিনি, তাঁদেরকে যথেষ্ট সচেতন বলেই মনে হয়েছে৷ আমির খান তো সামাজিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ‘সত্যমেব জয়তে’ নামে খুবই জনপ্রিয় একটি অনুষ্ঠানও করেছেন৷

এমন যদি হতো তাঁরা দু'জনেই নিঃসন্তান ছিলেন, তাহলেও না হয় সারোগেসির পক্ষে যুক্তি দিতে পারতেন তাঁরা৷ বিশেষ করে শাহরুখ খানের তো অন্য নারীর জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলে তৃতীয় সন্তানের অভিভাবক হওয়ার প্রয়োজন ছিল না৷ আমার তো মনে হচ্ছে, শুধু টাকা আছে বলে এবং তাঁর ইচ্ছে হয়েছে বলেই তিনি এমনটা করেছেন৷ সারোগেসি তো আসলে একটা বড় ব্যবসা৷ আর সেখান থেকে টাকা কামাতে ব্যস্ত ডাক্তার থেকে শুরু করে একদল দালাল শ্রেণির লোক৷

অবশ্য সারোগেসির পক্ষের মানুষরা বলে থাকেন, গর্ভ ভাড়া দেওয়ার মাধ্যমে ভারতের অনেক দরিদ্র নারী আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন৷ এটা তাঁদের জীবনমান উন্নয়নে সাহায্য করছে৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো, দরিদ্র মায়েদের গর্ভ ভাড়া নেওয়ার সময় কি তাঁদের এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ঝুঁকির কথা ঠিকভাবে জানানো হয়? অর্থাৎ দরিদ্র নারীরা কি সব জেনেশুনেই গর্ভ ভাড়া দিতে আগ্রহী হন?

DW Bengali Mohammad Zahidul Haque
জাহিদুল হক, ডয়চে ভেলেছবি: DW/Matthias Müller

ভারত বাদ দেন, উন্নত দেশ যুক্তরাষ্ট্রেও নাকি সেটি হয় না৷ রুডি রুপকের বক্তব্য তার প্রমাণ৷ যুক্তরাষ্ট্রের মেডিকেল টুরিজম এজেন্সি ‘প্ল্যানেট হসপিটাল'-এর প্রতিষ্ঠাতা তিনি৷ তাঁর কোম্পানি অনেকদিন ধরে মার্কিন নিঃসন্তান দম্পতিদের ভারত থেকে সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান লাভে সহায়তা করেছে৷ ২০১৪ সালে রুপক বলেছিলেন, আইভিএফ/ফার্টিলিটি/সারোগেসির সঙ্গে অনেক বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রতারণা জড়িয়ে আছে, কারণ এই খাত সংশ্লিষ্টরা অনেক অর্থ রোজগার করতে চান৷ এছাড়া ২০১৪ সালে ‘জার্নাল অফ ল, মেডিসিন অ্যান্ড এথিকস’-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, ‘‘সারোগেসি বিষয়টি এখন এতই বাণিজ্যিক হয়ে গেছে যে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সারোগেট মায়েদের শুধু লাভের কথাই জানানো হয়৷ এর সঙ্গে যে অনেক ধরনের ঝুঁকিও জড়িয়ে আছে তা তাদের বলা হয় না৷’’

সারোগেসি বিষয়টা এখন এতটাই বাণিজ্যিক হয়ে উঠেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে অনেক এজেন্সি তাদের ওয়েবসাইটে সন্তান নিতে আগ্রহীদের ‘ক্লায়েন্ট’, গর্ভ ভাড়া দেওয়া মায়েদের ‘ক্যারিয়ার’ আর সারোগেসির মাধ্যমে গর্ভধারণ ব্যবস্থাপনাকে ‘সেলস’ হিসেবে উল্লেখ করে থাকে৷

বাণিজ্যিক হওয়ার কারণে সারোগেসিকে সন্তান বেচা-কেনা বিষয়টির থেকে আলাদা করা যায় না বলে মনে করে নিউ ইয়র্ক স্টেট ‘টাস্কফোর্স অন লাইফ অ্যান্ড দ্য ল’৷ এর ফলে শিশুদের ক্ষতির মুখে পড়ার সম্ভাবনা থাকে বলে আশঙ্কা করেছে তারা৷

লেখা শেষ করবো ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের ২০১১ সালের একটি রেজুলিউশন উল্লেখ করে৷ সেখানে বলা হয়েছে, সারোগেসি হচ্ছে ‘নারীর দেহ ও তাঁর প্রজনন অঙ্গের শোষণ৷’

সুতরাং শাহরুখ, আমির – এখন কী বলবেন?

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য