‘শান্তিপূর্ণ নির্বাচন’
৬ জুলাই ২০১৩তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপির আন্দোলন যখন তুঙ্গে ঠিক তখনই কিছুদিন আগে অনুষ্ঠিত হয়েছে চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন৷ ওই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে শেষ হওয়ায় জাতীয় নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার আর প্রয়োজন নেই, এমন দাবি করে আসছিলেন সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতারা৷ তবে ওই চার সিটি কর্পোরেশনেই বিএনপির প্রার্থী জয়ী হওয়ায় দারুণ চাপে পড়েছে আওয়ামী লীগ৷ তাই দলের মধ্যে অনেকে বলেছেন, ‘‘চার সিটি নির্বাচনে সরকার জিতলেও হেরেছে আওয়ামী লীগ৷ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভয়াবহভাবে এর প্রভাব পড়বে৷''
এমন আলোচনার মধ্যে শনিবার অনুষ্ঠিত হলো গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন৷ বিশাল এলাকার এই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলাকালে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘‘প্রথম পরীক্ষায় পাস করেছে সরকার৷ এখন আওয়ামী লীগ পাস না ফেল করে তা দেখার বিষয়৷ কারণ দলীয় প্রার্থী পাস না করলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যে চাপে থাকবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ আর গাজীপুরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হলে ঢাকা পড়ে যাবে চার সিটিতে পরাজয়ের সব গ্লানি৷'' শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার জন্য বিএনপির চলমান আন্দোলন প্রশ্নের মুখে পড়েছে৷ কারণ বর্তমান সরকারের অধীনেই যে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে তা আরো একবার প্রমাণিত হলো বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা তোফায়েল আহমেদ৷
গাজীপুরের নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, বিএনপির তত্ত্বাধায়কের দাবি ম্লান হয়ে গেছে৷ শনিবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর প্রভাবশালী এই সদস্য বলেন, বিএনপির অফিস থেকে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে৷ ভোট কেন্দ্র ও বিএনপি অফিসের চিত্র ভিন্ন৷ বিএনপি প্রার্থী, দলের মহাসচিব ও জনগণের কথাও ভিন্ন৷ তিনি বলেন, ২৯২টি কেন্দ্রের মধ্যে দুই একটি কেন্দ্রে টুকিটাকি কিছু গোলমাল তো হতেই পারে৷ তাদের উল্টা-পাল্টা বক্তব্যে মনে হচ্ছে বিএনপি নির্বাচনে হেরে গেছে৷ বিএনপিকে সুবিধাভোগী দল হিসেবে উল্লেখ করে তোফায়েল বলেন, তারা কখনো সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, আবার কখনো করে না৷
এদিকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ফলাফল পাল্টানোর ‘নীল নকশা' চলছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি৷ ভোট গ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই অভিযোগ করেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷ এর আগে দুপুরে কিছু অভিযোগের বিষয়ে জানাতে এম কে আনোয়ারের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে যায়৷ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘সরকার গাজীপুর নির্বাচনে জনমতকে বদলিয়ে দেয়ার নীল নকশার ষড়যন্ত্র করছে৷ আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, এই নির্বাচনে কোনো কারচুপি হলে তার দায়-দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে৷'' গাজীপুর নির্বাচনে ফলাফল বদলের চেষ্টা হলে সরকারের ‘মৃত্যুঘণ্টা' বাজবে বলে হুঁশিয়ারি দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি সেখানে টেলিভিশন প্রতীকের পক্ষে যে গণজোয়ার দেখেছি, তাতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খানের বিজয়ী হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই৷ আমরা আশাবাদী ন্যূনতম নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমাদের প্রার্থী এক থেকে দেড় লাখ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবেন৷'' তবে ভোট গ্রহণ নিয়ে শক্ত কোনো অভিযোগ তাঁরা দাঁড় করাতে পারেনি৷ ফলে বিকেলে এসে বিএনপির দাবি ফল পাল্টানোর চেষ্টা চলছে৷
আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লা খান ভোটগ্রহণ শেষে বলেছেন, ‘‘জনগণের রায় আমি অবনত মস্তকে মেনে নেব৷'' তিনি বলেন, ‘‘উৎসবমুখর পরিবেশে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে৷'' আর বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী এম এ মান্নান ভোট গ্রহণ শেষে কিছু অভিযোগ করে বলেছেন, ‘‘সরকার-সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে প্রশাসন, পুলিশ ও স্থানীয় নেতা-কর্মীরা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছেন৷ বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের অন্যায়ভাবে আটক করা হয়েছে৷ তারপরও ভোট যেভাবে হয়েছে তাতে তিনি সন্তুষ্ট৷''