শান্তি আলোচনায় ‘লুকোচুরি’
২১ এপ্রিল ২০১৪মার্চ থেকে শুরু হয়ে গত ১০ এপ্রিল পর্যন্ত নওয়াজ শরিফ সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে গেছে তালেবান৷ আলোচনার উদ্দেশ্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে শান্তি ফিরিয়ে আনা৷ গত এক দশক ধরে ইসলামি শাসন কায়েমের দাবিতে জঙ্গি হামলা চালিয়ে আসছে ইসলামি জঙ্গি সংগঠন তালেবান৷ হামলা বন্ধ রাখার শর্তে গত ১ মার্চ থেকে নওয়াজ শরিফ সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে তারা৷
আলোচনায় দু'পক্ষ কিছু বিষয়ে একমতও হয়েছে৷ তালেবানের দাবি মেনে ইতিমধ্যে দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের কারাগার থেকে ১৯ জন তালেবান সদস্যকে মুক্তি দিয়েছে নওয়াজ শরিফের সরকার৷ কিন্তু তাতে আলোচনায় সফল পরিসমাপ্তির সম্ভাবনা একটুও বাড়েনি৷ বরং হঠাৎ যুদ্ধবিরতিতে ইতি টানার ঘোষণা দিয়েছে তালেবান৷ তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) জানিয়েছে, সরকার যুদ্ধবিরতির শর্ত মেনে না চলার কারণেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হলো৷
যুদ্ধবিরতির শর্ত তালেবানও মানছে না৷ সাধারণ মানুষ এবং সেনাবাহিনীর ওপর কয়েকদিন পরপরই হামলা চালাচ্ছে তারা৷ সেনাবাহিনীও অভিযান চালিয়ে আসছে তালেবানের গোপন আস্তানায়৷ তালেবানের ওপর আপাতত শুধু ‘ড্রোন' হামলাই বন্ধ রয়েছে৷ ২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বরের পর থেকে তালেবানের ওপর হামলায় একবারও চালকবিহীন বিমান ব্যবহার করেনি যুক্তরাষ্ট্রের সেনাসদস্যরা৷
পাকিস্তানের শান্তিকামী মানুষ এখন তালেবানের সঙ্গে সরকারের ‘নিষ্ফল' আলোচনা দেখতে দেখতে ক্লান্ত৷ ব্যবসায়ী তাহির আহমেদ মনে করেন এ আলোচনায় স্বচ্ছতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব রয়েছে৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ‘‘আলোচনার নামে সরকার আর তালেবান যথেষ্ট লুকোচুরি খেলেছে৷ এ আলোচনা নিয়ে আমি কখনোই আশাবাদী ছিলাম না৷ কিন্তু এখন তো আমি আলোচনাটা কী নিয়ে হচ্ছে তা-ই বুঝতে পারছি না৷ আমার তো মনে হয় দু'পক্ষই জানেনা তারা আসলে কী কী বিষয়ে সমঝোতা চায়৷''
ইসলামাবাদের মনোবিজ্ঞানী এবং সমাজকর্মী হামিদ সাত্তি মনে করেন, প্রধনামন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সরকার বুঝেশুনেই তালেবানের সঙ্গে নিষ্ফল আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে৷ তাঁর মতে, ‘‘তারা (সরকার) পরিস্থিতি এমন এক জায়গায় নিয়ে যেতে চায় যখন সরকারের যে কোনো সিদ্ধান্তই জনগণ মেনে নিতে বাধ্য হবে৷''
করাচির সাংবাদিক এবং তথ্যচিত্র নির্মাতা সাবিন আগার সন্দেহের দৃষ্টিটা আবার তালেবানের দিকে৷ তাই ব্যবসায়ী তাহির আহমেদের বক্তব্যের বিরোধীতা করেছেন তিনি৷ সাবিন মনে করেন, আলোচনার নামে সময় নষ্ট করে তালেবান আসলে নিজেদের গুছিয়ে নিচ্ছে৷
তাহলে ‘কোনো সুফলই বয়ে আনছে না' এমন আলোচনা কি শুধু কালক্ষেপণের জন্যই চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান সরকার? বিশ্লেষকদের আশঙ্কা সেরকমই৷ জার্মানির হাইডেলব্যার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সিগফ্রিড ও ভুল্ফের দৃষ্টিতে নওয়াজ শরিফের সরকার তালেবানবিরোধী নয়, বরং তালেবানবান্ধব৷ তাঁর মতে, ‘‘তাঁর (নওয়াজ) কিছু কাজে এমন ইঙ্গিত স্পষ্ট যার কারণে মনে হচ্ছে তিনি ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের সহানুভূতিশীল৷''