শব্দদূষণ স্বাস্থ্যের যেসব ক্ষতি করে
শব্দদূষণ দেশ, কাল, স্থান ভেদে অন্য সমস্যার পাশাপাশি স্বাস্থ্য সমস্যাটিও বড় করে তুলছে৷ যেমন একটানা গাড়ির শব্দ কিংবা উচ্চ শব্দের গান হৃদরোগের ঝুঁকি, শ্রবণশক্তি হ্রাস, মানসিক চাপ বাড়ানো ছাড়াও নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ায়৷
গানের শব্দ
প্রতিটি মানুষ যেমন আলাদা, তেমনি তার কাছে শব্দের মাত্রার গ্রহণযোগ্যতাও ভিন্ন৷ উচ্চ শব্দের গান কারো কারো জন্য ভীষণ বিরক্তিকর৷ অন্যদিকে সেই গান খুব জোরে বাজালেও যথেষ্ট জোরে নয় বলেও কেউ কেউ মনে করেন৷ আসলে শব্দের মাত্রার ব্যাপারটি অনেকটাই ব্যক্তিগত পছন্দ বা ভালোলাগার ব্যাপার৷
যানবাহনের শব্দ
যানবাহনের শব্দও কারো কাছে কষ্টের বা বিরক্তিকর, আবার কারো কারো হয়ত তেমন খারাপ লাগে না৷ যদিও জার্মানিতে গাড়ি চলার মৃদু শব্দ হলেও হর্ণ শোনা যায় না বললেই চলে৷ তারপরও নাকি জার্মানিতে প্রতি তিন জনের দু’জনই এ দেশের ৪০ মিলিয়ন গাড়ির শব্দে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত৷ এই তথ্য জানা গেছে জার্মানির পরিবেশ বিষয়ক এজেন্সির করা এক জরিপ থেকে৷
শব্দের মাত্রা
জার্মানির খুব ব্যস্ত রাস্তার শব্দ মাত্রার স্তর ৭০ থেকে ৮০ ডেসিবেল, আর ট্রাক চললে তা হয় গড়ে ৯০ ডেসিবেল৷ আর বিমান যাত্রা শুরু করার সময় শব্দের মাত্রা হয় সাধারণত ১২০ থেকে ১৩০ ডেসিবেল৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, শব্দের এই মাত্রা মানুষের সহ্য ক্ষমতার মধ্যে৷
কানের ক্ষতি
শব্দের মাত্রা ১২০ ডেসিবেলের বেশি হলেই নাকি মানসিকভাবে অস্থির হতে পারে যে কেউ৷ কানের ক্ষতি বা শ্রবণশক্তি কমে যেতে পারে ৷ তাছাড়া কানের দু’ পাশের চুলের কোষগুলো নষ্ট হয়ে কানে কম শোনার ঝুঁকি বাড়ায়৷ আর ধীরে ধীরে শব্দ খুব ভালো করে বোঝার শক্তি কমিয়ে দেয়৷ তবে নিয়মিত হেডফোন ব্যবহারেও এমনটা হতে পারে কিন্তু !
টিনিটাস
নিয়মিত কানে জোরে জোরে শব্দ গেলে ‘টিনিটাস’ বা কানে ভো ভো শব্দ হয় এ রকম অসুখও হতে পারে৷ যাঁরা নিয়মিত প্লেনে লম্বা ভ্রমণ করে থাকেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে৷
হৃৎপিণ্ড
তীব্র শব্দ শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে দূর্বল করে দেয়৷ আর সেকারণেই হৃদরোগ, মাথা ঘোরার মতো অসুখের ঝুঁকিও বাড়ে৷ এবং রাতে যদি শব্দ ৫৫ ডেসিবেলের বেশি হয়, তাহলে ঘুমের সমস্যা হয়৷ আর নিয়মিত এমনটা হলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও বেড়ে যায়৷
ডাক্তারের পরামর্শ
যাঁদের বড় রাস্তার পাশে বাড়ি, তাঁরা যদি শব্দের কারণে রাতে ঘুমাতে না পারেন, তাঁদেরকে কানে তুলো বা শব্দ না শোনার জন্য বিশেষ ধরনের ইয়ার প্লাগ পাওয়া যায়, সেটা লাগিয়ে রাখার পরামর্শ নাক, কান গলার রোগ বিশেষজ্ঞ পেটার রেনারের৷
কানের জন্য ‘অ্যাপ’
কান কতটা খারাপ বা কান সম্পূর্ণ সুস্থ কিনা তা জানতে চাইলে যে কেউ স্মার্ট ফোনের ‘মিমি’ অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন৷ অ্যাপটি যে কেউ ডাউনলোড করে নিতে পারেন বিনা মূল্যে৷ স্বাস্থ্য বিষয়ক অ্যাপটি তৈরিতে সহায়তা করেছে জার্মানির স্বাস্থ্য বীমা কোম্পানী বার্মার জিইকে৷
জার্মানিতে যখন-তখন শব্দ করা যায় না
বাড়ির ভেতরে ড্রিল মেশিন বা বাগানে ঘাস কাটার যন্ত্র বা জোরে শব্দ হয় এমন কোনো মেশিন জার্মানিতে রবিবার বা ছুটির দিনে নিজের বাড়িতেও ব্যবহার করা নিষেধ৷ তাছাড়া প্রতিদিন দুপুর ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত আবাসিক এলাকায় জোরে শব্দ করা যায় না৷ রাত দশটার পরে তো একেবারেই শব্দ করা যাবে না৷ যদি কেউ করে, তাহলে অন্য প্রতিবেশীদেরও পুলিশকে ডাকার অধিকার রয়েছে৷
সকলে মিলে আনন্দ
তরুণ প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের জন্মদিন বা সেরকম কোনো পার্টির আয়োজন করা হলে, অনেক সতর্ক জার্মান আগে থেকে প্রতিবেশীদের সেকথা জানিয়ে রাখেন৷ অনেকে আবার এরকম পরিস্থিতিতে পুলিশের ঝামেলা এড়াতে প্রতিবেশীদেরও দাওয়াত দেন৷