শপথগ্রহণের দিনই মধ্যরাত পর্যন্ত বৈঠক করলেন মমতা
২১ মে ২০১১রাজভবন থেকে মহাকরণ৷ সামান্য এই পথ পার হতেই তাঁর লেগে গেল ১৮ বছর৷ একদিন এই মহাকরণ থেকেই ধর্নারত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চুলের মুঠি ধরে টেনে হিঁচড়ে সরিয়ে দিয়েছিল পুলিশ৷ সেদিনই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, একদিন মাথা উঁচু করে ফিরে আসবেন৷ শুক্রবার বিকেলে সেই ঐতিহাসিক ফিরে আসাই প্রত্যক্ষ করলেন হাজার হাজার মানুষ, যাঁরা ভিড় জমিয়েছিলেন রাস্তার দুপাশে৷ উচ্ছ্বাসে আত্মহারা সেই জনজোয়ারের চাপে এক সময় ব্যারিকেড ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল৷ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পর রীতিমাফিক আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে চা চক্রের পর রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের সঙ্গে একান্তে দীর্ঘ বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তার পরই দলীয় কর্মী-সমর্থকদের ভিড় ঠেলে পায়ে হেঁটে মহাকরণে৷ এসেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায়ের মূর্তিতে মালা দেন৷ মহাকরণের বারান্দায় দাঁড়িয়ে হাসি মুখে হাত নাড়েন বাইরে অপেক্ষমান জনতার উদ্দেশে৷ এরপর এক সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ সেখানে তিনি জানান, নতুন সরকার পাহাড় এবং জঙ্গল মহলের সমস্যার সমাধান করবে তিন মাসের মধ্যে৷ দুই এলাকার জন্যই বিশেষ অর্থনৈতিক প্যাকেজ তৈরি হবে৷ উত্তরবঙ্গের জন্য আলাদা সচিবালয় থাকবে৷
সিঙ্গুরে অনিচ্ছুক কৃষকদের ৪০০ একর জমি আইন অনুযায়ী ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্তও এদিনই ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ বলেন, বাকি ৬০০ একরে টাটা শিল্পগোষ্ঠী চাইলে কারখানা গড়তে পারে৷
রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার কথাও এদিন আরও একবার ঘোষণা করেন তিনি৷ জানান. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম সার্ধ শতবর্ষ পালনে বিশেষ কমিটি তৈরি হবে৷ এছাড়া তাঁর ইচ্ছে প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ ভাবে সার্ধ শতবর্ষ উৎসব উদযাপনের৷
সাংবাদিক বৈঠকের পরই নতুন মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে বৈঠকে ব্যস্ত হয়ে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী৷ মধ্যরাত পর্যন্ত বৈঠক চলে৷ শেষ পর্যন্ত নতুন মন্ত্রীদের যে তালিকা সংবাদমাধ্যমের হাতে এসেছে, তা এই রকম -
স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ, ভূমি ও ভূমি সংস্কার, কৃষি, তথ্য-সংস্কৃতি, বিদ্যুৎ,পার্বত্য পরিষদ, সংখ্যালঘু উন্নয়ন, কর্মী নিয়োগ ও প্রশাসনিক সংস্কার দপ্তর মুখ্যমন্ত্রী রাখছেন নিজের হাতে৷ অর্থ ও আবগারি মন্ত্রক পেলেন অমিত মিত্র৷ শিল্প-বানিজ্য, তথ্য-প্রযুক্তি ও পরিষদীয় মন্ত্রকের দায়িত্ব পেলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ মনীশ গুপ্তকে দেওয়া হল উন্নয়ন ও পরিকল্পনা দপ্তর৷ পরিবহণ ও পূর্ত দপ্তরের ভার পেলেন সুব্রত বক্সি৷ এছাড়া কারিগরি ও জনস্বাস্থ্য মন্ত্রক পেলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়, জাভেদ খান হলেন অসামরিক প্রতিরক্ষা ও দমকল মন্ত্রী৷ পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের ভার দেওয়া হল ফিরহাদ হাকিমকে৷ উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী হলেন ব্রাত্য বসু, স্কুলশিক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্ব পেলেন রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, পর্যটন মন্ত্রী হলেন রচপাল সিং, যুবকল্যাণ দপ্তরের দায়িত্ব পেলেন ঊজ্জ্বল বিশ্বাস, মহিলা ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী হলেন সাবিত্রী মিত্র৷ পূর্ণেন্দু বসু পেলেন শ্রম মন্ত্রক, পরিবেশ মন্ত্রক পেলেন ডাঃ সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার৷ ক্রীড়া-প্রতিমন্ত্রীর স্বাধীন দায়িত্ব পেলেন মদন মিত্র৷ কংগ্রেসের মানস ভুঁইঞা পেলেন কৃষি মন্ত্রক এবং আবু হেনাকে দেওয়া হল মৎস্য দপ্তর৷ বিধানসভার স্পিকার হিসেবে বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ডেপুটি স্পিকার পদে সোনালী গুহ-র নাম মনোনীত হয়েছে তৃণমূল পরিষদীয় দলের পক্ষ থেকে৷
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্য প্রশাসনের কাজকর্ম বুঝে নিতে তাঁর সাত দিন সময় লাগবে৷ আগামী সাত দিন তিনি সেই কাজই করবেন৷ এই সাত দিনে বহিরাগত দর্শনার্থীদের তিনি সময় দিতে পারবেন না৷ আর মন্ত্রিসভার সদস্যদের এবং সচিবালয়ের অফিসারদের আপাতত শনিবারের ছুটির দিনেও অফিসে আসতে হবে৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁর পূর্বসূরির ‘ডু ইট নাউ' নির্দেশনামাটি তিনি প্রথম দিন থেকেই রপ্ত করিয়ে দেবেন সহকর্মীদের৷
প্রতিবেদন: শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা
সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম