1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লড়াই থেমে নেই

রেশমী নন্দী
১৩ নভেম্বর ২০১৭

জগতে সবচেয়ে বেশি আত্মপরিচয় সংকটে ভোগা প্রাণীর নাম সম্ভবত ‘নারী'৷ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা আর আত্মত্যাগের মহিমার বিচিত্র এক ফাঁদে পড়ে ক্রমাগত আত্মবিশ্বাস হারানো জীব হয়ে উঠতে থাকেন অনেক নারী৷

https://p.dw.com/p/2nUBM
ছবি: Getty Images/S. Rahman

চারপাশের বদলের সাথে মানিয়ে গুছিয়ে চলতে চলতে পর্বতপ্রমাণ প্রত্যাশার ভার কাঁধে ওঠে তাঁর৷ মেয়ে হয়ে বেড়ে উঠে একসময় ঘরণী হয়ে বদলাতে হয় নিজ পরিচয়ের গণ্ডি৷ সমাজের প্রত্যাশার বোঝা তো কম নয়! ঘর সামলে বাইরে পা রাখো মেয়ে, এ সতর্ক বার্তা সবচেয়ে কাছের জন থেকে শুরু করে সবার৷ বিয়ের পর সে চাপ বাড়ে আরও৷ এর মধ্যে কেউ কেউ বেছে নেয় ‘গৃহিণী' নামক সমাজ স্বীকৃত এক পেশা, যাতে অর্থনৈতিক মুক্তি মেলে না, পরিচয়ের সংকট ঘোচে না৷

বদলের পালা আসে প্রকৃতির নিয়মেও৷ মাতৃত্ব তাঁকে দেয় নতুন পরিচয়৷ কিন্তু যাঁরা পৃথিবীকে প্রাণ দিচ্ছে শরীরের ভেতর থেকে, কৌটা বন্দি হয়ে তাঁদেরই প্রাণবায়ু আটকে যায় একটা গণ্ডিতে৷

কিন্তু আঁকুপাঁকু করলেই কি মেলে মুক্তি?  এ বঙ্গদেশে এমন গৃহিণী খুব কমই আছে, যাঁদের শুনতে হয়নি, ‘‘সারাদিন ঘরে বসে করো কী?'' বা ‘‘বসেই তো থাকো, রান্নাটাও ঠিক করে করতে পারো না'', বা ‘‘বাচ্চাকে ঠিকমতো দেখাশুনা করতে পারছো না'' ইত্যাদি ইত্যাদি৷ প্রিয়জনের মঙ্গলাকাঙ্খার আড়ালে গৃহিণী হিসেবে জীবনযাপন করা নারী অনেকক্ষেত্রেই হয়ে পড়েন বান্ধবহীন৷ অর্থনৈতিক ভিত গড়তে না পারা নারী যেন নুইয়ে পড়তে পড়তে মিশে যায় মাটিতে আর সেই মাটিতে দাঁপিয়ে বেড়ানো পুরুষ বাজায় নিজেদের জয়ঢাক৷

এরই মধ্যে ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি' ভাবতে ভাবতে বিকল্প পথের সন্ধান করেন কোনো কোনো নারী৷ পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নির্ধারিত সংসার সামলানোর দায় ঝেড়ে না ফেলেও নিজের পায়ের নীচের মাটি খুঁজতে থাকেন অনেকে৷ অর্থনৈতিক মুক্তির আড়ালে মর্যাদা পাওয়ার আকাঙ্খা নিয়ে লড়াই চালিয়ে যান নানা উপায়ে৷ ঘরকেই বানিয়ে নেন কাজের ক্ষেত্র৷

অনলাইনে নানা ধরনের ব্যবসা, রান্নার ক্লাস বা ঘরের কোণে পার্লার – এরকম নানা কাজ এখন অনেক গৃহিণীর মুক্তির দিশা৷ কখনো পরিবারের সম্মতিতে, কখনো আবার সংসারের দায়িত্ব অবহেলা না করার চু্ক্তিতে৷

এ যেন এক যুদ্ধ৷ সংসারের খুঁটিনাটিতে ছাড় পাবার জো নেই, কারণ, কাজ করে আয় করাটাকে নেহায়েত ফ্যাশন মনে করে অনেক পরিবার৷ তবু এরই মধ্যে নিজের মেধা, যোগ্যতা আর লড়াই করার দৃঢ়তাকে পুঁজি করে অনেকেই এগিয়ে যাচ্ছেন৷

রেশমী নন্দী
রেশমী নন্দী, ডয়চে ভেলেছবি: privat

চট্টগ্রামের শিমু যেমন৷ পড়াশুনা শেষ হওয়ার আগেই বিয়ে, বাচ্চা এবং এসবের ফাঁকে এক সময় উপলব্ধি করেন, নিজের পরিচয় গড়ার প্রয়োজনীয়তা৷ শুরু করেন ‘কিচেন আর্ট বাই শিমু' নামের ফেসবুক পাতা৷ আর্থিক প্রয়োজন যতটা না, তার চেয়ে বেশি পরিচয় গড়তে চাওয়ার তাগিদ থেকে৷ অন্যদিকে, ঢাকার ঊর্মির গল্প ভিন্ন৷ ব্যাংকে কাজ করতে থাকা ঊর্মি সন্তানের দেখভালের জন্য চাকরি ছেড়ে দেন৷ কিন্তু সংসারের ভার নিজের কাঁধেও নিতে চাওয়া মেয়েটি শুরু করেন অনলাইন বুটিক ‘রেগা', যার প্রসার হচ্ছে ক্রমাগত৷

চারপাশে তাকালে এমন অনেকের গল্পই নজরে পড়বে৷ প্রাপ্য সম্মান পেতে নারীর এ নীরব সংগ্রামের পথ কখনো মসৃণ, কখনো বন্ধুর৷

বাধার ভেতর দিয়ে দেখা, বাধা পার হয়ে দেখা – যেখানে ঘর, সেখানে থেকেই দেখার চেষ্টা জানলার ওপারে থাকা পৃথিবীর মায়া, বাতাসের খেলা, আকাশের রং, স্বাধীনতার স্বাদ৷ তবু মোদ্দা কথা, লড়াই জারি আছে৷

আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তবের ঘরে৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য