লোভ সামলান, নইলে বিপদ
১ অক্টোবর ২০২১এই গল্পটা প্রায়ই শোনা যায়৷ কোনো এক বিদেশি সুদর্শনা ফেসবুকে বাংলার কোনো এক যুবকের প্রেমে পড়েছেন৷ সেই প্রেম দ্রুত এত গভীরে পৌঁছে যায় যে, বিদেশিনী দেশি যুবককে উপহার পাঠাতে চান৷
দামী সে উপহার আবার বিমানবন্দর অবধি এসে আটকে যায়৷ তখন দেশের কোনো নম্বর থেকে ফোন আসে দামী উপহার আসার কথা জানাতে৷ সেটা ছাড়াতে হলে লাখখানেক টাকা ডাক মাশুল, শুল্ক বা কর দিতে হবে৷
পুরো ঘটনাটা এমনভাবে সাজানো হয় যে, সবকিছু বিশ্বাস করতে মন চাইবে৷ আর মনের মধ্যে দামী উপহার পাওয়ার লোভও ক্রমশ বাড়তে থাকবে৷ কেউ কেউ সেই লোভের বশে লাখ টাকা হয়ত পাঠিয়েও দেবেন ফোনে পাওয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে৷
ব্যস, তারপরই বিদেশিনী যোগাযোগ বন্ধ করে দেবেন৷ দেশের যে নম্বর থেকে ফোন এসেছিল, বন্ধ হয়ে যাবে সেটাও৷ আর উপহার? সেটা কোনোদিনই মিলবে না৷ কারণ, পুরোটাই এক প্রতারণা৷
হতাশার কথা হচ্ছে, বারংবার মানুষকে সতর্ক করার পরও অনেকে এমন প্রতারকদের খপ্পড়ে পড়ছেন৷ শুধু দেশি যুবকরাই নয়, যুবতীরাও এমন ফাঁদে পা দিয়ে টাকা খোয়াচ্ছেন৷
অন্য গল্পটাও সবার জানা৷ হঠাৎ করে অস্বাভাবিক কম মূল্যে পণ্য বিক্রির ঘোষণা দিয়ে দেয় কোনো একটি অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান৷ আর তখন রাতারাতি অসংখ্য মানুষ সেসব পণ্য কিনতে ভিড় করেন৷ বিকাশ, রকেট, ব্যাংক একাউন্ট নানা উপায়ে সেই পণ্য কেনার জন্য টাকা দেন৷
অথচ একটু মাথা ঘামালেই কিন্তু বোঝা যায় ব্যাপারটা৷ কেন একটি প্রতিষ্ঠান লাখ টাকার পণ্য পঞ্চাশ হাজার টাকায় দিতে যাবে? এতে তার লাভ কী? আর কত পণ্যই বা এভাবে লোকসান দিয়ে বিক্রি করা যায়?
না, এসব অনেকে ভাবতে পারেন না৷ কারণ, লোভে পড়ে যান সস্তায় জিনিস কেনার৷ আর এই লোভের কারণে রাতারাতি অনেক টাকার মালিক হয়ে যায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটি৷ এরপর যখন পণ্য ডেলিভারির সময় আসে, তখনই শুরু হয় বিপত্তি৷
নানা বাহানায় পণ্য দেয়ায় দেরি হতে থাকে৷ দুয়েকজন হয়ত পণ্য পান৷ বাকিরা থেকে যান বঞ্চিত৷ এক পর্যায়ে সেই প্রতিষ্ঠান হয়ে যায় বন্ধ কিংবা দেউলিয়া৷ ক্রেতার দেয়া টাকা কোথায় গেছে তার হদিশ আর পাওয়া যায় না৷ ফলে অর্থ হারান লোভে পড়ে অতিসস্তায় পণ্য কিনতে টাকা দেয়া ক্রেতা৷
লোভ সামলানো কঠিন ব্যাপার৷ আর সেটা প্রতারকরা জানে বলেই নানাভাবে লোভনীয় সব উপায়ে সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলতে চায়৷ কখনো কখনো সেই ফাঁদ এতই নিঁখুত হয় যে শুরুতে বিষয়টি বোঝাও কঠিন হয়ে যায়৷
ক'দিন আগেই পরিচিত একজনের সঙ্গে কথা হচ্ছিল৷ জানালেন, ইদানিং ফেসবুকে ভালোভালো ডেটিংয়ের প্রস্তাব আসে৷ সুন্দর নারীরা আরো সুন্দর করে চ্যাটের আহ্বান জানায়৷ তাদের অবস্থান আবার আশেপাশের শহরেই৷ কিন্তু সমস্যা একটাই, সবাই কিছুক্ষণ কথা বলে হোয়াটসঅ্যাপে যুক্ত হতে চায়, আর নতুন নতুন ছবি চায়৷ তারাও নতুন নতুন ছবি পাঠায়৷
আমি তার খুশি খুশিভাব দেখে আনন্দিত হই৷ বুঝতে পারি, তিনি এক চক্রের মধ্যে পড়ছেন৷ এই চক্রের কাজ হচ্ছে প্রেমের ফাঁদে ফেলে একজন মানুষের ব্যক্তিগত বিভিন্ন তথ্য, যেমন মোবাইল নম্বর, বাড়ির ঠিকানা, ছবি ইত্যাদি সংগ্রহ করা৷ এরপর সেসব তথ্য ব্যবহার করা হবে তার জন্য নতুন কোনো প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করতে৷ আর সেই ফাঁদে পা দিলে নানাভাবে অর্থ খোয়াবে সেই মানুষটি৷
বলছি না ফেসবুকে, বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটে যা দেখেন সবই প্রতারণা৷ না, বিষয়টি সেরকম নয়৷ তবে, অনলাইনে বিচারণেরক্ষেত্রে সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই৷ কেউ যদি হঠাৎ আপনাকে অতিদামী কিছু উপহার দিতে চায় তাহলে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করবেন৷ কেন তিনি আপনাকে এই উপহার দিতে চাচ্ছেন? আপনি কি সেই উপহারের উপযুক্ত? যিনি উপহার দিতে চান তাকে কি আপনি ভালোভাবে চেনেন? আর যখন মোটা অংকের টাকা দিয়ে উপহার ছাড়াতে বলবে, তখন অবশ্যই সেটা করবেন না৷
আর কেনাকাটারক্ষেত্রেও বিচক্ষণ হোন৷ কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই কোনো পণ্য প্রকৃত মূল্যের অর্ধেক বা তারচেয়েও কম মূল্যে বিক্রি করে ব্যবসা করা সম্ভব নয়৷ আর যখন ঢালাওভাবে এরকম অফার দেয়া হয় তার অর্থ হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ সেসব পণ্য কিনতে আগ্রহী হতে পারে৷ এ ধরনের কেনাকাটা করতে চাইলে তাই ভালোভাবে যাচাইবাছাই করুন৷ যে পণ্য কিনতে চাচ্ছেন সেটা আপনার দেশে আদৌ সহজলভ্য কিনা, যে প্রতিষ্ঠান বিক্রি করছে সে কতদিনের মধ্যে সেসব পণ্য সরবরাহ দেবে, সেটি কোনো সরকারস্বীকৃত প্রতিষ্ঠান কিনা সেসব যাচাইবাছাই করে নিন৷ কোনোরকম সন্দেহ থাকলে কেনাকাটা বাদ দিন৷