লোকসভা নির্বাচন ২০২৪: নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ
পশ্চিমবঙ্গে এসে লোকসভা ভোট নিয়ে দুই দিন ধরে বৈঠক করলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য কর্তারা।
স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে
পশ্চিমবঙ্গে স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ ভোটের স্বার্থে একগুচ্ছ ব্যবস্থা নেয়ার কথা ঘোষণা করলো নির্বাচন কমিশন। দুই দিন ধরে একগুচ্ছ বৈঠকের পর মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার সাংবাদিক সম্মেলন করে ঘোষণা করেছেন, ''পশ্চিমবঙ্গে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করাতেই হবে পুলিশকে। তারা দায়িত্ব পালন না করলে কমিশন তাদের বাধ্য করবে।''
দায়ী থাকবেন ডিজি
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার(সিইসি) রাজীব কুমার জানিয়েছেন, ''পুলিশকেই শান্তি বজায় রাখতে হবে। কোনো গণ্ডগোল হলে তার জন্য দায়ী থাকবেন রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল(ডিজি)।'' কাকতালীয় হলেও রাজ্য পুলিশের ডিজির নামও রাজীব কুমার। সিইসি বলেছেন, ডিজিকে পুলিশ সুপার, থানার ওসি-দের এই ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশ দিতে হবে।
'সব রিপোর্ট আছে'
সাংবাদিক সম্মেলনে সিইসি রাজীব কুমার বলেছেন, ''আমাদের কাছে সব রিপোর্ট আছে। পশ্চিমবঙ্গে সহিংসতা ও অর্থশক্তিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।'' তিনি জানিয়েছেন, ''মুখ্যসচিব ও ডিজিদের স্পষ্টভাবে বিষয়টি বলেছি। তারাও বলেছেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য তারা বদ্ধপরিকর।''
বিরোধীদের নালিশ
সিইসি-সহ কমিশনের কর্তারা রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। তণমূল, বিজেপি, কংগ্রেস, আপ, সিপিএম, ফরোয়ার্ড ব্লক-সহ কয়েকটি দলের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। সিইসি রাজীব কুমার বলেছেন, ''একটি বাদে সব দল বলেছে, পর্যাপ্ত পরিমাণ কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে।'' তাদের অভিযোগ, ''আমলাতন্ত্র নিরপেক্ষভাবে কাজ করে না। তারা ভয় দেখানোর অভিযোগও করেছেন।''
'নির্বাচন হলো ১৪ পার্বণ'
সিইসি রাজীব কুমার বলেছেন, ''বাংলায় একটা কথা আছে, বারো মাসে তেরো পার্বণ। নির্বাচন হলো ১৪তম পার্বণ। সেখানে উৎসবের মাজাজ থাকতে হবে। ভয়ের বাতাবরণ সহ্য করা হবে না। মানুষ আসবেন, আনন্দ করে ভোট দেবেন। সহিংসতা ও ভয়মুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসন করতে না পারলে আমরা ওদের দিয়ে করাব। গোলমাল হলে পুলিশ দায়ী থাকবে।''
অ্যাপ চালু হবে
সিইসি জানিয়েছেন, তারা একটা অ্যাপ চালু করবেন। সেখানে সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক দল, কোনো সংগঠনের তরফ থেকে অভিযোগ জানানো যাবে। ভোটে সহিংসতা, বেনিয়ম দেখলেই যেন সেখানে অভিযোগ করা হয়। অভিযোগ পাওয়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করা হবে। তারপর কমিশনের সিদ্ধান্তও জানিয়ে দেয়া হবে। নির্বাচন উপলক্ষে তিনটি অ্যাপ চালু করছে নির্বাচন কমিশন।
সীমান্ত এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থা
পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে তিনটি দেশের সীমান্ত আছে। সবচেয়ে বড় সীমান্ত বাংলাদেশের সঙ্গে। এছাড়া নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত আছে। সিইসি রাজীব কুমার জানিয়েছেন, সীমান্তে কড়া প্রহরা থাকবে। বিএসএফ-সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কথা হয়েছে এবং তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে
সিইসি রাজীব কুমার জানিয়েছেন, ''পশ্চিমবঙ্গে পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে।'' কেন্দ্রীয় বাহিনী কোথায়, কীভাবে মোতায়েন করা হবে, সেটাও জানিয়েছেন তিনি। রাজীব কুমার জানিয়েছেন,, ''রাজ্য পুলিশ, নোডাল অফিসার ও সিইও আরিফ আফতাব এবং কমিশনের এক পর্যবেক্ষক মিলে সিদ্ধান্ত নেবে, কোন কোন এলাকা স্পর্শকাতর। জেলায় যখন বাহিনী পৌঁছে যাবে, তখন সিদ্ধান্ত নেবে ডিএম, এসপি ও কমিশনের জেলা পর্যবেক্ষক।''
মোট ভোটদাতা সাড়ে সাত কোটি
পশ্চিমবঙ্গে মোট ভোটদাতার সংখ্যা ৭ কোটি ৫৮ লাখ। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা, ৩ কোটি ৮৫ লাখ ও নারী ভোটারের সংখ্যা ৩ কোটি ৭৩ লাখ।