স্কার্টের নীচের ছবি তোলা অপরাধ নয়?
২৮ আগস্ট ২০১৯এর আগে মাদ্রিদে ৫৩ বছর বয়সি এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে সাড়ে পাঁচশো নারীর ‘আপস্কার্ট' ছবি তোলার অভিযোগ উঠেছিল৷ গত বছর আপস্কার্টিংকে আইনের আওতায় আনার জন্য ব্রিটিশ সংসদে তুমুল তর্ক-বিতর্কের পর নতুন আইন পাস হয়৷ কিন্তু তারপরও এখনও জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় না৷
জার্মানির দুই নারী- ২৫ বছরের ইডা মারি সাসেনব্যার্গ এবং ২৮ বছর বয়সি হান্না সাইডেল-- সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে চান৷ ডয়চে ভেলেকে সাইডেল বলেন, ‘‘আপস্কার্টিং-এর সবচেয়ে জঘন্য ব্যাপার হলো আপনি জানতেও পারবেন না যে এমন একটি ঘটনা ঘটে গেছে৷ আপনি হয়তো চলন্ত সিঁড়িতে, সুপারমার্কেটে, মেট্রোতে বা কনসার্টে দাঁড়িয়ে আছেন, এমন সময় কেউ একজন ছবি তুলে ফেললো৷ এই ছবিগুলো কী কাজে ব্যবহার করা হবে, তাও আপনি জানেন না৷ হয়তো কোনো পর্ন সাইটে তা আপলোড করা হবে৷''
সাইডেল নিজেই প্রথম এমন ঘটনার শিকার হন মাত্র ১৩ বছর বয়সে৷ অন্য এক স্কুলের শিক্ষক একটি শিক্ষাসফরের সময় তার আপস্কার্ট ছবি তোলেন৷ ১৬ বছর বয়সে এক অপরিচিত ব্যক্তি তার আপস্কার্ট ছবি তুলে ভিড়ের মধ্যে পালিয়ে যান৷ এসব ঘটনা তাঁর মনে গভীর প্রভাব ফেলে৷
জার্মান আইনের ফাঁক
দুই নারীর করা পিটিশনের ফলে এ নিয়ে বড় ধরনের আইনি বিতর্ক তৈরি হয়েছে৷ আইনজীবী ক্রিস্টিয়ান সলমেকে বলছেন, জার্মান দণ্ডবিধির ১৮৪-আই অনুচ্ছেদ অনুসারে যৌন হয়রানির বিচারের কথা বলা হয়েছে৷ অনুচ্ছেদটি অপেক্ষাকৃত নতুন৷ ২০১৬ সালে জার্মানির কোলন শহরে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে এক রাতে শত শত যৌন হয়রানির ঘটনার পর দণ্ডবিধি সংশোধন করে এ অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হয়৷
কিন্তু এই আইনেও ফাঁক রয়েছে৷ এর মাধ্যমে কেবল কেউ শরীর স্পর্শ করার চেষ্টা করলেই বিচার করা সম্ভব৷ আপস্কার্টিং ঠিক এই সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না৷
২০১৪ সালে আরেকটি সংশোধন হয়েছিল৷ সেখানে স্পর্শকাতর অঙ্গের ছবি তোলা ও বিতরণের জন্য শাস্তির বিধান রাখা হয়৷ কিন্তু সেটা শুধু টয়লেট বা বেডরুমের মতো একান্ত ব্যক্তিগত স্থানের জন্য প্রযোজ্য৷ ফলে প্রকাশ্যে উন্মুক্ত স্থানে কেউ এমন ছবি তুললে, এই আইনেও তাকে সাজা দেয়া অসম্ভব৷
সলমেকে জার্মানির স্ট্যার্ন টিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বাভারিয়া রাজ্যের ছোট এক শহরের মেয়রের উদাহরণ তুলে ধরেন৷ তিনি মেয়র থাকাকালেই চলন্ত সিঁড়িতে মেয়েদের আপস্কার্ট ছবি তুলতেন৷ পরবর্তীতে তার কাছে থাকা এমন শতাধিক ছবি উদ্ধার করে পুলিশ৷ কিন্তু শাস্তি হিসেবে ‘জনগণকে বিরক্ত' করার অপরাধে তার কেবল ৭৫০ ইউরো জরিমানা হয়েছিল৷
অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের মতো কিছু দেশে আপস্কার্টিং-এর বিরুদ্ধে কড়া আইন রয়েছে৷ এক অনলাইন পিটিশনের ফলে এ বছরের শুরুতে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসও আইনে পরিবর্তন আনে৷ ফলে আপস্কার্টিং-এর সাজা হতে পারে দুই বছরের কারাদণ্ড৷
মূলত ইংল্যান্ডের ঘটনাটিই নাড়া দিয়েছে সাসেনব্যার্গ ও সাইডেলকে৷ তাঁরাও ইংল্যান্ডের ২৭ বছর বয়সি জিনা মার্টিনের আন্দোলনে অনুপ্রাণিত হয়ে জার্মানিতে একটি পিটিশন শুরু করেছেন৷ এরই মধ্যে তাঁদের পিটিশনে প্রায় ৯০ হাজার ব্যক্তি স্বাক্ষরও করেছেন৷ ‘অবস্থার পরিবর্তনে আরো বেশি জনগণকে আমাদের পাশে দরকার', বলছিলেন সাসেনব্যার্গ ও সাইডেল৷
ভিক্টর ভাইৎস, ইউলিয়া লাসিকা/এডিকে/জেডএইচ