লিবিয়ায় ক্রীতদাস বাণিজ্য
২৪ নভেম্বর ২০১৭সর্বোচ্চ দরদাতা কে? আটশ' দিনার! ১,০০০ দিনার! ১,১০০ দিনার! সবশেষে ১,২০০ লিবিয়ান দিনার বা ৮০০ মার্কিন ডলার দাম হাঁকা ব্যক্তি জয়ী হন৷ না, কোনো গাড়ির নিলামের কথা বলা হচ্ছে না৷ সাব-সাহারান আফ্রিকার একদল ভীতসন্ত্রস্ত তরুণকে এভাবে নিলামে বিক্রি করা হয় লিবিয়ায়৷
২০১৭ সালের শুরুর দিকে লিবিয়ার একটি বাজারে এভাবে ক্রীতদাস বিক্রির ভিডিও গতসপ্তাহে প্রকাশ করে মার্কিন টেলিভিশন নেটওয়ার্ক সিএনএন৷ গণমাধ্যমটি এই বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছে, লিবিয়ায় ক্রীতদাস বেচাকেনার বেশ কয়েকটি বাজার রয়েছে, যেখানে ইউরোপে আসতে আগ্রহী আফ্রিকার শরণার্থীদের বিক্রি করছে মানবপাচারকারীদের চক্র৷
আফ্রিকায় ব্যাপক নিন্দা
শরণার্থীদের ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রির খবর প্রকাশ হওয়ার পর আফ্রিকায় নিন্দার ঝড় উঠেছে৷ বিশেষ করে পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলো তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে৷ নাইজারের প্রেসিডেন্ট মাহামাদু ইসোফাউ সেদেশে লিবিয়ার রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছেন এবং আন্তর্জাতিক বিচার আদালতকে লিবিয়ার বিরুদ্ধে দাসবিক্রির অভিযোগ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন৷
এদিকে, বুর্কিনা ফাসোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলফা বেরি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, তিনিও লিবিয়ার রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছেন৷ আগামী সপ্তাহে আইভরি কোস্টে অনুষ্ঠেয় আফ্রিকান ইউনিয়নের বৈঠকেও এই বিষয়টি আলোচনা করা হবে বলে জানা গেছে৷
ক্রীতদাস বেচাকেনা নিয়ে আইভরি কোস্টে আলোচনা নতুনমাত্রা পেয়েছে, কেননা, গতসপ্তাহে সেদেশের ১৫৫ জন শরণার্থী ইউরোপীয় ইউনিয়নের পুর্নবাসন কর্মসূচির আওতায় দেশে ফিরে গেছেন৷ আইভরিয়ান সরকার জানিয়েছে, লিবিয়া থেকে ফিরে যাওয়া এই মানুষরা শারীরিকভাবে অত্যন্ত দুর্বল৷ তাদের মধ্যে কেউ কেউ দাসত্বের শিকার হয়েছিলেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে৷
লিবিয়ার তদন্তের আশ্বাস
সপ্তাহান্তে আফ্রিকার কয়েকটি দেশে লিবিয়ার দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করেছে কয়েক হাজার মানুষ৷ এমনকি লন্ডনেও এই বিষয়ে প্রতিবাদ হয়েছে৷ ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে এরকম এক বিক্ষোভ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীকে৷
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস নিউ ইয়র্কে সোমবার বলেছেন, ‘‘আমাদের বিশ্বে দাসপ্রথার কোনো স্থান নেই৷'' এ ধরনের চর্চাকে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ' হিসেবে আখ্যা দিয়ে তিনি লিবিয়া সরকারের প্রতি দাসবিক্রির ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন৷
জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দিয়ে লিবিয়া সরকার জানিয়েছে যে, ক্রীতদাস বেচাকেনার বিষয়ে তদন্ত করার হবে৷ লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ ওমর মাইতিক এ সংক্রান্ত এক কমিশন গঠন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন৷ আর দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে লিখেছে, ‘‘দাসবিক্রির অভিযোগগুলো সত্য হলে, দোষীদের সবার শাস্তি নিশ্চিত করা হবে৷''
‘লিবিয়া ছিল এক জাহান্নাম'
লিবিয়ায় আটকে পড়া শরণার্থীদের অধিকাংশই পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজার, গিনি, বুর্কিনা ফাসো এবং আইভরি কোস্ট থেকে আসা৷ তাঁদের সঙ্গে রয়েছে ইরিত্রিয়া আর সোমালিয়ার শরণার্থীরা, যারা ইউরোপে উন্নত জীবনের আশায় দেশ ছেড়েছেন৷ শরণার্থীরা সাধারণত বিভিন্ন দেশ থেকে এসে লিবিয়ায় জড়ো হন এবং সেখান থেকে সমুদ্রপথে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেন৷
আইভরি কোস্টে ফিরে যাওয়া শরণার্থী সুলাইমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘লিবিয়া ছিল এক জাহান্নাম৷'' তিনি দেশটিতে বেশ কয়েকমাস বন্দি ছিলেন৷ অভিবাসন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন আইওএমের চেষ্টায় তিনি ভাগ্যক্রমে ছাড়া পান৷ সুলায়মান বলেন, ‘‘আমি সেখানে থাকার সময় সবসময় ভয়ে থাকতাম যে, যেকোনো সময় হয়ত কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠী এসে আমাকে ধরে নিয়ে যাবে এবং দাস হিসেবে বিক্রি করে দেবে৷''
প্রতিবেদন: আন্তনিও কাসকাইস / এআই