লিবিয়ার গণতান্ত্রিক যাত্রায় বাধা অনভিজ্ঞতা
৩০ অক্টোবর ২০১১নতুন দেশ গড়ে তোলা
ত্রিপোলির ছোট্ট একটি পার্কে জড়ো হয়েছে কয়েকশত মানুষ৷ পার্কের খোলা জায়গায় পাতা চেয়ার টেবিলে বসে তারা সেখানে একটি পথনাটক উপভোগ করছে৷ তাদের আশেপাশে রয়েছে অনেক ফেরিওয়ালা৷ কেউবা পিৎজা বিক্রি করছে, কেউবা পানীয়৷ পথনাটকে অভিনেতাদের অভিনয়ে সকলেই বেশ মজা পাচ্ছে৷ তাদের মধ্যে আবার কেউ সাবেক স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে নিয়েও মজা করছে৷
এই পথনাটকে যেসব অর্থ আসবে সেগুলো ব্যয় করা হবে আহত বিপ্লবীদের জন্য৷ এটা হচ্ছে অনেক কাজের মধ্যে একটি৷ এরকম আরও অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে লিবিয়ার বিপ্লবীদের জন্য৷ এর উদ্দেশ্য একটাই, যুদ্ধ বিধ্বস্ত লিবিয়ার সমাজকে গড়ে তোলা৷ গোটা লিবিয়ার শহরে শহরে গড়ে তোলা হয়েছে নানা ধরনের সংগঠন ও তহবিল৷
নতুন লিবিয়া গড়ে তুলতে এখন যুবকরা তাদের ঘাম ঝরাচ্ছে, ছাত্র-ছাত্রীরা সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের সাহায্য করছে৷ এই ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তারা সকলেই সজাগ৷ যারা সরকারি কর্মকর্তা তারা তাদের সরকারি কাজে যোগদান করেছে৷ অনেকে নিজ উদ্যোগেই এগিয়ে এসেছে সরকারকে সহায়তা করতে৷ এই যেমন আলি আবদেল সালেহ, তিনি ত্রিপোলির বিমানবন্দরে একটি টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য বিপ্লবীদের বিনা পয়সায় সহযোগিতা করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যেকেই বিদ্রোহী সেনাদের সাহায্য করতে চায়৷ আমরা জানি তারা লিবিয়াকে মুক্ত করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়েছে৷ আমাদের সাহায্য তাদের প্রয়োজন৷ আমরা তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেওয়ার চেষ্টা করছি৷ এটা একটি নতুন আশার সঞ্চার করছে৷ এটা একটা নতুন অনুভূতি, যার সঙ্গে আমরা গত ৪২ বছর ধরে পরিচিত ছিলাম না৷''
রাজনৈতিক অনভিজ্ঞতা
লিবিয়ার অন্তর্বতীকালীন প্রশাসন এনটিসি ইতিমধ্যে দশ দফার একটি কার্যসূচি ঘোষণা করেছে৷ এর মাধ্যমে তারা সাধারণ মানুষকে তাদের ব্যবসা বাণিজ্য গড়ে তুলতে ঋণ দেবে৷ এছাড়া বিদেশে গাদ্দাফির আটকে থাকা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারও ইতিমধ্যে ছাড় দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মহল৷ এর ফলে লিবিয়ার অর্থনীতিকে দ্রুতই কিছুটা চাঙ্গা করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ তবে শুধু টাকা দিয়েই লিবিয়ার উন্নতি সম্ভব না৷ দেশটিতে একটি উন্মুক্ত বহুদলীয় রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তোলাটাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করা হচ্ছে৷ তবে এই ক্ষেত্রে লিবিয়ার জনগণের অভিজ্ঞতার অভাব একটি বড় সমস্যা৷ অনেকেই রাজনীতিতে আসতে চান, তবে রাজনৈতিক দল গঠনের ব্যাপারে তাদের কোন ধারণা নেই৷ তেমনই একজন বললেন, ‘‘আমরা বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দলকে চিঠি দিয়েছি যাতে তারা আমাদের পরামর্শ দিতে পারে কীভাবে আমরা রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করবো৷ কারণ আমরা অনেক কিছুই জানিনা৷ আমরা আশা করি ইউরোপের সংসদগুলো আমাদের সাহায্য করবে যাতে করে আমরা বুঝতে পারি কীভাবে কাজ করতে হবে৷''
লিবিয়ার অর্থনীতি মূলত তেল নির্ভর, তাই দেশটির অর্থনীতি দ্রুতই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে মনে হচ্ছে৷ কিন্তু বহুদলীয় গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরির জন্য দেশটিকে আরও অনেকদিন অপেক্ষা করতে হবে৷ এটি নির্ভর করছে লিবিয়ার জনগণের ওপরই৷
প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম
সম্পাদনা: আরাফাতুল ইসলাম