1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লাদাখ বৈঠকে কড়া অবস্থান ভারত ও চীনের

স্যমন্তক ঘোষ নতুন দিল্লি
১৩ অক্টোবর ২০২০

সাতবার বৈঠক হয়েছে। কিন্তু এখনও অধরা সমাধান সূত্র। ভারত এবং চীন কেউই সৈন্য সরাতে রাজি নয়।

https://p.dw.com/p/3jpn4
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/S. Hameed

জুন থেকে অক্টোবর, গত চার মাসে সাতবার বৈঠকে বসেও লাদাখ সমস্যার সমাধানসূত্র মিলল না। সোমবার সর্বশেষ বৈঠকেও ভারত এবং চীনের সেনা কম্যান্ডাররা একে অপরের দিকে শুধু আঙুলই তুললেন।

সোমবার লাদাখে ভারত-সীমান্তে চুসুলে বৈঠকে বসেছিলেন ভারত এবং পিপলস রিপাবলিক আর্মির সেনা অফিসররা। ভারত এবং চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রকের গুরুত্বপূর্ণ অফিসাররাও সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য এই প্রথম সেনা স্তরের বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রকের অফিসার পাঠালো চীন। ডয়চে ভেলেকে সেনা সূত্র জানিয়েছে, সোমবার সকালে বৈঠক শুরু হয়। সন্ধে পর্যন্ত সেই বৈঠক চলে। দুই দেশই সমাধান সূত্র বার করার মরিয়া চেষ্টা করে। কিন্তু শেষপর্যন্ত সেনা সরাতে রাজদি হয়নি কোনও পক্ষই।

সেনা সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে ভারত দাবি করেছে, এপ্রিল মাসের আগে সীমান্তের যে অবস্থা ছিল, সেই অবস্থায় ফিরে যেতে হবে। চীনকে সেনা সরিয়ে নিতে হবে। কিন্তু চীন সেনা সরাতে রাজি হয়নি। তাদের দাবি, গত কয়েক মাসে, বিশেষ করে অগাস্টে ভারত প্যাংগং লেকের দক্ষিণে যে অঞ্চল দখল করেছে, সেখান থেকে প্রথমে ভারতকে সেনা সরাতে হবে। তারপরেই চীন সেনা সরানোর কথা ভাববে।

কিন্তু চীনের এই প্রস্তাব ভারত মানতে রাজি হয়নি। কারণ, ভারতের দাবি, অগাস্টে ভারত প্যাংগংয়ের দক্ষিণে যে পাহাড়ে পোস্ট তৈরি করেছে, তা ভারতেরই জায়গা। কিন্তু চীনের বক্তব্য, ওই পোস্ট থেকে প্রকৃত সীমান্ত রেখার অন্য প্রান্তে চীনের সেনার অবস্থান স্পষ্ট দেখা যায়। ফলে ভারতকে ওই স্ট্র্যাটেজিক এলাকা ছাড়তে হবে। ভারত কোনো ভাবেই তাতে রাজি হয়নি। ফলে গত ছয়টি বৈঠকের মতো সোমবারের বৈঠকও ভেস্তে গিয়েছে।

ভারতীয় সেনার সাবেক লেফটন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্যের মতে, ভারত এবং চীনের এলএসি বা প্রকৃত সীমান্ত রেখা স্পষ্ট নয়। দুই তরফই নিজেদের মতো করে এলাকা চিহ্নিত করে। এবং সে কারণেই এ বারের সংঘাতের কোনও সমাধানসূত্র মিলছে না। বস্তুত, প্যাংগং লেক, গোগরা, হটস্প্রিং, ডেপসাংয়ে চীন প্রকৃত সীমান্ত রেখা উপেক্ষা করে সৈন্য মোতায়েন করেছে বলে ভারতের অভিযোগ। এবং সে কারণেই ভারত বার বার এপ্রিলের আগের অবস্থানে ফিরে যাওয়ার কথা বলছে। চীন যা মানতে চাইছে না।

সমস্যা রয়েছে আরো। এই মুহূর্তে ভারত এবং চীন দুই পক্ষই প্রায় ৫০ হাজার সৈন্য সীমান্তে জড়ো করেছে। কোনও কোনও মহলের বক্তব্য চীনের সেনা রয়েছে ৬০ হাজার। একই সঙ্গে এয়ার টু গ্রাউন্ড মিসাইল থেকে শুরু করে বিভিন্ন অস্ত্রও দুই পক্ষ সীমান্তে এনে রেখেছে। এখন যদি সেনা সরানোর প্রস্তাবে সায় দিতে হয়, তা হলে সীমান্ত থেকে অনেকখানি পিছিয়ে যেতে হবে। সরিয়ে নিতে হবে অস্ত্রও। কিন্তু তারপরেও সংঘাত বন্ধ না হলে শীতে সেই অস্ত্র এবং সেনার সরঞ্জাম ফের সীমান্তে নিয়ে যাওয়া অত্যন্ত কঠিন। কারও কারও মতে প্রায় অসম্ভব। কয়েক দিনের মধ্যেই লাদাখের বহু রাস্তা বরফে বন্ধ হয়ে যাবে। তখন আর বড় বড় সেনার গাড়ি সেখানে নিয়ে যেতে পারবে না। অস্ত্রও নেয়া যাবে না। ফলে কোনো পক্ষই সেনা সরাতে রাজি হচ্ছে না।

তা হলে কি লাদাখ সমস্যার সমাধান নেই? কোনও কোনও বিশেষজ্ঞের মতে, শীতে সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা কম। বরং উল্টোটা হতে পারে। সামান্য সমস্যাও এলাকাভিত্তিক লড়াইয়ের আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারে। অতীতেও যা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে সংঘাত আরও বাড়বে। যদি তা না হয়, তা হলে শীতের পরে দুই পক্ষই সেনা সরানোর প্রস্তুতি শুরু করতে পারে।

তবে একটি কথা স্পষ্ট। কূটনৈতিক স্তরে দুই দেশের মন্ত্রী বৈঠক করে যে সমাধানের রাস্তা তৈরি করেছিলেন, বাস্তবতা তার সঙ্গে মিলছে না। এবং সে কারণেই সেনা স্তরের বৈঠক আজ পর্যন্ত একটিও ফলপ্রসূ হয়নি।  

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ৷
স্যমন্তক ঘোষ ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷