1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশ থেকে পালাতে চাইছে রোহিঙ্গারা?

২১ জুন ২০১৭

মিয়ানমারে নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ থেকে পালিয়ে আসা শতশত রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে বাস করছে৷ তবে এখন এখান থেকেও পালাতে চাইছেন তাঁরা৷ বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এ বিষয়টি উঠে এসেছে৷

https://p.dw.com/p/2f7Tc
ছবি: picture-alliance/ANN/Greg Constantine/Provided to the Nation

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এজন্য নিজেদের যা কিছু আছে তা নিয়ে তাঁরা পাচারকারীদের শরণাপন্ন হচ্ছেন৷ বাংলাদেশে নতুন রোহিঙ্গা শরণার্থী আসার কথা অস্বীকার করেছে৷ সাগরপথে রোহিঙ্গাদের আসার সব পথ বন্ধ করে ফেলা হয়েছে বলে বাংলাদেশ সকারের দাবি৷

এএফপিকে শরণার্থী ক্যাম্পের স্থানীয় নেতা মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘‘ক্যাম্প ছাড়তে মরিয়া হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গারা৷ তাঁদের কাছে যে টাকা বা গয়না আছে, সেগুলো পাচারকারীদের দিয়ে বিমানে করে দেশত্যাগ করতে চাইছেন তাঁরা৷ যাঁদের সেই সম্বল নেই তাঁরা অন্য ব্যবস্থা খুঁজছেন৷''

এএফপি জানায়, কক্সবাজারে ক্যাম্পগুলোতে ৩ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মানবেতর জীবনযাপন করছে৷ গত বছরের অক্টোবরে মিয়ানমারে তাঁদের উপর নির্যাতন শুরু হওয়ার পর থেকে ৭০ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পালিয়ে আসে৷ উন্নত এবং নিরাপদ জীবনের আশায় এলেও বাংলাদেশ তাঁদের কাজ করার কোনো সুযোগ দেয়নি৷ তাঁদেরকে এমন একটি দ্বীপে আশ্রয় দিয়েছে, যেখানে প্রচুর মশা হয় ও নিয়মিতই বন্যা হয়৷

Younis Arman - MP3-Stereo

অনেকদিন ধরেই পাচারকারী চক্রের ফাঁদে পড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় সাগরপাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড যাওয়ার চেষ্টা করছে রোহিঙ্গারা৷ ২০১৫ সালে সাগরে ডুবে অনেকের মৃত্যুর পর বিষয়টিতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়৷ বিশ্বজুড়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা৷ পাচারকারীদের বিরুদ্ধেও অভিযান শুরু করে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো৷

তবে পাচারকারীরা বাংলাদেশ থেকে বের হওয়ার জন্য নতুন করে আকাশপথ ও স্থলপথের ব্যবস্থা করেছে৷ আন্তর্জাতিকভাবে কাজ করার জন্য তাঁরা মোবাইলের মাধ্যমে টাকা নিচ্ছেন৷ বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গা মোহাম্মদ এখন সৌদি আরবে বাস করছেন৷ আর এজন্য তাঁকে ৬ লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছে বলে জানান তিনি৷ ২০ বছর বয়সি এই তরুণ বলেন, ‘‘আমি পাসপোর্টসহ অন্যান্য কাগজপত্রের জন্য একজনকে টাকা দেই৷ তিনি আমাকে পরিবারের নাম ব্যবহার করতে নিষেধ করেন৷''

বাংলাদেশ ত্যাগ করা রোহিঙ্গাদের জন্য অনেক কঠিন হয়ে যাওয়ায় অনেকে অন্য স্থান বেছে নিচ্ছে৷ যাঁরা বিমানভাড়া দিতে সক্ষম নন, তাঁরা বাস কিংবা পায়ে হেটেই বাংলাদেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন৷ কেউ কেউ ভারত, নেপাল কিংবা পাকিস্তানে যাওয়ার চেষ্টা করছেন৷ অনেকে কাশ্মীর যাওয়ারও চেষ্টা করছেন৷ কিন্তু তাঁদের প্রথম পছন্দ বাংলাদেশই ছিল৷

Abdul Aziz - MP3-Stereo

মানবপাচারে কত টাকা খরচ হয়, সেটা নির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও ধারণা করা হয়, শুধু বাংলাদেশেই লাখ লাখ ডলার খরচ হয়৷ মানবপাচারকারী চক্রগুলো রোহিঙ্গাদের নকল বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও জন্মসনদ তৈরি করে দেয়৷ কয়েক প্রজন্ম ধরে মিয়ানমারে বাস করলেও সেই দেশ তাঁদের নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকার করেছে৷ আর পাসপোর্ট না থাকায় কোনো দেশেই যেতে পারছিলেন না তাঁরা৷ এই সুযোগ তাঁদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে পাচারকারী চক্র৷

অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রকল্পের প্রধান শাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য যে, তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে পাচারকারীরা দেশজুড়ে তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে৷''

অভিবাসন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ জালালুদ্দিন শিকদার বলেন, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টাকা লেনদেনের কারণে পাচারকারীদের কাজ অনেক সহজ হয়ে গেছে৷ তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে পাচার করা এখন শুধু একটি ফোনের ব্যাপার৷

গত বছরের একটি গবেষণা থেকে দেখা যায়, পাচারকারীরা বিশ্বজুড়ে লেনদেনে এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, যা সহজে নজরদারিতে আসে না৷ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের গবেষক সেলিম আহমেদ পারভেজ বলেন, ‘‘তারা এখন টাকা আদান-প্রদানে খুবই দক্ষ৷ আর এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে স্থানীয় পাচারকারী, পুলিশ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ ও মাদক ব্যবসায়ীরা৷''

র‌্যাব বার্তা সংস্থা এএফপির কাছে দাবি করেন, তাঁরা রোহিঙ্গাদের পাচার রোধে কাজ করে যাচ্ছেন৷ কক্সবাজারে র‌্যাব কমান্ডার নুরুল আমিন বলেন, ‘‘আমরা পাচারকারীদের ব্যবহৃত পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি৷ আমরা নৌকায় আসা সম্পূর্ণভাবে থামিয়ে দিয়েছি৷ এবার স্থলের অংশগুলোতে কড়া নজর রাখছি আমরা৷''

তবে তিনি মনে করেন, পাচারকারীদের থামালেই সম্পূর্ণ কাজ শেষ হয়ে যাবে না৷ তিনি বলেন, ‘‘কেউ যদি সত্যিই পালিয়ে যেতে চায়, তাকে কি থামানো সম্ভব?'' তিনি মনে করেন, কক্সবাজারের ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা এতটাই মরিয়া হয়ে উঠেছেন যে, তাঁরা সেখান থেকে পালানোর জন্য যে কোনো কিছু করতেই সক্ষম৷

এদিকে রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ ইউনূস আরমান বুধবার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখন আর কোনো রোহিঙ্গা শরণার্থী সমুদ্র বা অন্য কোনো পথে মালয়েশিয়া বা অন্য কোনো দেশে পালিয়ে যাচ্ছে এমন খবর আমাদের কাছে নেই৷ আর বাংলাদেশ সরকারের দিক থেকেও নজরদারি আগের চেয়ে অনেক বেশি৷ ফলে কেউ চাইলেও যাওয়ার সুযোগ নাই৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘ক্যাম্পে যেসব রোহিঙ্গা শরণার্থীআছেন, তাঁরা অনেক কষ্টে আছেন৷ বৃষ্টি এবং পানিতে তাঁদের জীবন অনেক কষ্টের৷ অনেকেরই মাথার ওপর ছাদ নেই৷ তবে এখন কিছু ত্রাণ সহায়তা এবং বৃষ্টির জন্য প্লাস্টিক পেপার দেয়া হয়েছে৷''

কক্সবাজারের স্থানীয় সাংবাদিক আব্দুল আজিজ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সাধারণত শীতকালে সাগর দিয়ে পাচারের ঘটনা ঘটে৷ এখন বর্ষাকাল সাগর উত্তাল৷ তাই সমুদ্রপথে পাচারের ঘটনা ঘটছে না৷ তাছাড়া থাইল্যান্ডে গণকবর আবিষ্কার হওয়ার পর কক্সবাজারের স্থানীয় পাচারকারীরা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে৷ তাদের একাংশ জামিনে ছাড়া পেলেও, তারা সক্রিয় নয়, তাঁরা পুলিশের নজরদারিতে আছে৷ এছাড়া মিয়ানমার থেকেও এখন আর রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আসছে না৷''

তবে তিনি বলেন, ‘‘আগে কিছু ধনী রোহিঙ্গা শরণার্থী বিমানে অস্ট্রেলিয়া ও সৌদি আরবে গেছে৷ কিন্তু এখন যাচ্ছে বলে কোনো খবর নাই৷'' আর কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের চেয়ারম্যান আবু সিদ্দিক মাঝি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কোনেভাবেই কেউ এখন আর ক্যাম্প ছেড়ে অন্য কোনো দেশে যেতে চান না৷ আমরা মিয়ানমারেই ফিরে যেতে চাই৷''

যাঁরা একটু ধনী বা যাঁদের টাকা পয়সা আছে, তাঁরা বিমানে বা অন্য কোনো পথে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো খবর নাই৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য