রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের প্রস্তাব
২ অক্টোবর ২০১৭প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ‘‘বাংলাদেশে যেসব রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে, তাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ একসাথে কাজ করবে৷’’ এই সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে তারা কাজ করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সার্বিক তত্ত্বাবধানে দুই দেশ একটি ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠনের প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘এই জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের কম্পোজিশন কী হবে- সেটা দুই দেশ মিলে ঠিক করবে৷’’
মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী নেত্রী অং সান সু চি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন বলেও জানান তিনি৷ তবে কীভাবে সেটা সম্ভব, সে ব্যাপারে বিস্তারিত জানাননি পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷ শুধু জানিয়েছেন, ‘‘সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে এবং মিয়ানমারই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার প্রস্তাবটি তুলেছে৷’’ দু'দেশই শরণার্থীদের চিহ্নিত করতে কাজ করবে, তবে এক্ষেত্রে জাতিসংঘের কোনো মধ্যস্থতা থাকবে না বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দেড় ঘণ্টার এই বৈঠকে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সেদেশের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির দপ্তরের মন্ত্রী কিউ টিন্ট সোয়ে৷ বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক৷
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘‘প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার জন্য বৈঠকে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তির প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ৷ মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলকে ওই চুক্তির খসড়াও হস্তান্তর করা হয়েছে৷’’ বাংলাদেশ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ পুনর্ব্যক্ত করেছে বলে মাহমুদ আলী জানিয়েছেন৷ এ বিষয়ে আরও আলোচনার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল শিগগিরই মিয়ানমার সফরে যাবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি৷
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া কবে শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘একটা বৈঠক দিয়ে তো সব সমাধান হবে না৷ জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপটা তৈরি করতে হবে৷’’ যে বিষয়গুলো বাকি রয়েছে, আলোচনার মাধ্যমে সেগুলোর সমাধান করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷ জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ কবে নাগাদ গঠন হবে জানতে চাইলে তিনি শুধু বলেন, ‘‘খুব শিগগিরই হবে৷’’ আনান কমিশনের সুপারিশের বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷
মিয়ানমারের মন্ত্রী আজ (সোমবার) রাতেই মিয়ানমারে ফিরে যাবেন৷
গত ২৫শে আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় সেনাবাহিনী৷ তখন থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে৷ জাতিসংঘ একে চিহ্নিত করেছে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান' হিসেবে৷
এপিবি/এসিবি (এপি, এএফপি, রয়টার্স, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...