‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের আশ্বাসে আশাবাদী হওয়ার সুযোগ নেই'
৫ জুলাই ২০১৯চীন সফররত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে এই প্রতিশ্রুতি দেন লি খ্য ছিয়াং৷
প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে৯টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে৷ ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় ২৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ-চুক্তি হয়৷ এই ঋণের টাকা জ্বালানি প্ল্যান্ট, সমুদ্র বন্দর এবং রেলওয়ে খাতে ব্যয় করার কথা৷ স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, চীনের ঋণের উপর বাংলাদেশ নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে কিনা৷
অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটাকে আমি নির্ভরশীলতা বলব না৷ চীনের শ্রমের মূল্য অনেক বেড়ে গেছে৷ ফলে অনেক বিনিয়োগকারী আমাদের মতো দেশসহ আশাপাশে বিনিয়োগ নিয়ে যেতে চাইছেন৷ এটা তো আমাদের জন্য সুযোগও৷ চুক্তিগুলো নিশ্চয়ই দুই দেশের স্বার্থ বজায় রেখেই হচ্ছে৷'' পাকিস্তানের গোয়াদার বা শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটার মতো আমাদের পায়রা বন্দর নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে জনাব বখত বলেন, ‘‘আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা তেমন নয় যে, তারা ফাঁদে ফেলে এটা নিয়ে নেবে৷ আমাদের নীতিনির্ধারকরা নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে সচেতন৷''
নতুন করে যে চুক্তি হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তার জন্য লেটার অব এক্সচেঞ্জ (এলওসি) এবং অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা, বিনিয়োগ, বিদ্যুৎ, সংস্কৃতি এবং পর্যটন সংক্রান্ত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক৷ এর মধ্যে চারটি চুক্তির আওতায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ১৪০ কোটি ডলার পাবে৷ একটি চুক্তির আওতায় পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) পাবে ২৮০ কোটি ৪০ লাখ ডলার৷ এছাড়া অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ ৭ কোটি ২৭ লাখ ডলার পাবে বলে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীরা জানিয়েছেন৷ তবে সবগুলো চুক্তি মিলেয়ে টাকার অংক সরকারিভাবে প্রকাশ করা হয়নি৷
এর আগে যে ২৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি হয়েছিল তার মধ্যে বরিশালের পায়রা বন্দরে চীনের যে ৬০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করার কথা, সেটা নিয়ে দেশে-বিদেশে নানা ধরনের সমালোচনা চলছে৷ অনেকেই বলছেন, এটা হলে পায়রা বন্দরের দখল নিতে পারে চীন৷ নিজের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে বাংলাদেশকে ঋণের ফাঁদে ফেলতে চাইছে চীন৷ পাকিস্তানের গোয়াদার, শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দরের পর বাংলাদেশের পায়রা বন্দরের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় বেইজিং৷ তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এ বিষয়ে তারা সচেতন রয়েছেন৷
বৃহস্পতিবার বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন লি খ্য ছিয়াং৷ বৈঠকের পর পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরানোর বিষয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য ওই এলাকার শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হচ্ছে৷যতদিন দিন যাবে এই চ্যালেঞ্জটা ততই বড় হবে৷ জবাবে চীনের প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়ে একমত যে, ফিরে যাওয়ার মধ্য দিয়েই এ সমস্যার সমাধান হবে৷ তারা চেষ্টা করবেন যে, দুই দেশ আলোচনার মাধ্যমেই যেন এই সমস্যার সমাধান খুঁজে পায় এবং চীন মিয়ানমারকে ওই ব্যাপারে রাজি করানোর চেষ্টা করবে৷''
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিষয়টি যদি আমরা কূটনৈতিকভাবে দেখি তাহলে এই ধরনের আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে৷ চীন যদি আন্তরিক হয় তাহলে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব৷ তবে চীনের আশ্বাসে এখনই আমাদের আশাবাদী হওয়ার সুযোগ নেই৷ তারা আশ্বাস দিলেও আমাদের দেখতে হবে বাস্তবে তারা কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে৷ রোহিঙ্গা সমস্যাটি যে বাংলাদেশের একার সমস্যা নয়, সেটিও ভালোভাবে চীনকে বোঝাতে হবে৷''