রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশের পরিকল্পনা কী?
৪ ডিসেম্বর ২০১৭নতুন গড়ে ওঠা রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে অনেককিছুই নেই৷ পরিষ্কার পানির ব্যবস্থা নেই, বিদ্যুৎ নেই, পর্যাপ্ত ল্যাট্রিন নেই, নেই প্রতিদিনের খাবারের নিশ্চয়তা৷ বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে চলা নালার গন্ধে সেখানেও ঘুমানোও কষ্টকর হওয়ার কথা৷ তারপরও শরণার্থীদের অভিযোগ তেমন একটা নেই৷ বরং জিজ্ঞাসা করলে অধিকাংশই বলেন যে তাঁরা ভালো আছেন৷ আরা যাঁরা কষ্টের কথা বলেন, তাঁদের অভিযোগ ত্রাণ নিয়ে৷ ত্রাণ এখনো সবার হাতে পৌঁছাচ্ছে না, বিশেষ করে যারা অনিবন্ধিত ক্যাম্পে আছেন, তাঁদের পক্ষে ত্রাণ পাওয়া একটু কঠিন৷ এর বাইরে অভিযোগ তেমন একটা শোনা যায় না৷
এত নোংরা পরিবেশের মধ্যে থাকা মানুষগুলো যখন বলেন তাঁরা ভালো আছেন, তখন বোঝাই যায় তাঁরা আসলে কতটা দুর্বিষহ জীবন পাড়ি দিয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন৷ রোহিঙ্গা শরণার্থীরা পরিষ্কার ভাষাতেই তাঁদের উপর নির্যাতনের কথা জানান৷ কেউ বাবা-মা হারিয়েছেন মগ কিংবা সেনাবাহিনীর হামলায়, কারো লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে কিংবা হয়েছেন ধর্ষণের শিকার৷ এ সব মানুষরা ফিরে যেতে রাজি এক শর্তে৷ মিয়ানমার সরকারকে তাঁদের রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকার করে নাগরিকত্ব দিয়ে ফিরিয়ে নিতে হবে, নিশ্চিত করতে হবে নিরাপত্তা৷
কিন্তু রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক স্তরে যে তৎপরতা চলছে তাতে এখন পর্যন্ত নাগরিকত্ব ইস্যুতে জোরালো কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি৷ বরং পশ্চিমা নেতারা বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা নিয়ে যতটা উচ্চকণ্ঠে কথা বলেন, মিয়ানমারে গিয়ে বা আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তাদের গলা ততটাই নরম হয়ে যায়৷
এমন পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা সংকটের আশু সমাধান আশা করছেন না অনেকেই৷ মিয়ানমার কিছুদিন আগে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার যে ঘোষণা দিয়েছে, তাতেও আশা দেখছেন না অনেকে৷ বরং নাগরিকত্ব ইস্যুতে সুনির্দিষ্ট কিছু না থাকায় এভাবে ফিরে যেতে অনীহা দেখেছিলেন অনেক রোহিঙ্গা৷ তাঁরা মনে করেন, নিজের দেশে ক্যাম্পে থাকার চেয়ে বাংলাদেশের ক্যাম্প অনেক ভালো৷
কক্সবাজারের সব রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা বাহিনীর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানালেন, আগামী দু'মাসে রোহিঙ্গারা ফিরে যাবে এমন আশা করার যৌক্তিকতা খুবই কম৷ তাই এই সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের দিকেই মনোযোগ দেয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি৷ সেক্ষেত্রে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে দেয়ার মতো উদ্যোগের পক্ষে তিনি৷ এশিয়ার দেশগুলো নিজেদের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে যেতে পারে বলে মত তাঁর৷
আনুষ্ঠানিকভাবে অবশ্য বাংলাদেশ এখনো শরণার্থী ইস্যুতে ইতিবাচক অবস্থানেই আছে৷ দেশ, বিদেশ থেকে সহায়তা আসছে প্রচুর৷ হঠাৎ করে ছয় লাখের বেশি শরণার্থী আসার ধকল সামাল দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী৷ বর্তমান সরকারও আন্তর্জাতিক সমাজে পাচ্ছে বাড়তি গুরুত্ব৷ কিন্তু চলমান এই সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের কথা আসলেই কি কেউ ভাবছে?
এ বিষয়ে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷