রোহিঙ্গাদের উপর হামলার ছবি
১৯ নভেম্বর ২০১২মিয়ানমারে রোহিঙ্গা-রাখাইন সংঘাত নতুন নয়৷ চলতি বছরের জুন মাসে এই সংঘাত আবারো ব্যাপক আকারে দেখা দেয়৷ এতে ব্যাপক হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে৷ সর্বশেষ অক্টোবরেও নতুন মাত্রা পায় এই সংঘাত৷ গত সপ্তাহে ভারত সফরকালে মিয়ানমারের গণতন্ত্রের মানসকন্যা অং সান সু চি এই বিষয়ে তাঁর মতামত জানিয়েছেন৷ ভারতীয় এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সু চি, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে গেছে, না মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে গেছে – এই প্রশ্ন তোলেন৷ রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের বিষয়ে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকতে চান সু চি, কেননা তিনি বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করতে চান৷
সু চি নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকলেও জাতিদাঙ্গা থেমে নেই৷ রবিবার এই দাঙ্গা সম্পর্কে কিছু নতুন তথ্য প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ৷ এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানিয়েছে, গত অক্টোবরের শেষের দিকে বৌদ্ধ রাখাইনরা রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর হামলা চালায় এবং তাদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে৷ এসময় সেদেশের নিরাপত্তা বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তারা রাখাইনদের পক্ষ নিয়েছিল বলে দাবি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের৷ সংগঠনটি এক্ষেত্রে কয়েকটি শহরের নামও উল্লেখ করেছে৷
মানবাধিকার সংগঠনটির বিবৃতিতে বলা হয়, রাখাইন রাজ্যের পাউকটাও এবং ম্রাউক-উ উপশহরে গত ২৩ এবং ২৪ অক্টোবর রোহিঙ্গাদের উপর হামলা চালায় রাখাইনরা৷ অক্টোবরের শেষের দিকে আরো সাতটি উপশহরে দুই পক্ষের মধ্যে সহিংসতার ঘটনা ঘটে৷
রাখাইন রাজ্যের চারটি উপশহরে সহিংসতার কিছু স্যাটেলাইন ছবিও প্রকাশ করেছে এইচআরডাব্লিউ৷ সংগঠনটি এসব ছবিতে কমপক্ষে ৪,৮৫৫টি ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থাপনা সনাক্ত করেছে৷ ছবিতে সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩৪৮ একর জায়গা সনাক্ত করা হয়েছে, যেখানে মূলত রোহিঙ্গা মুসলমানদের আবাস ছিল৷ সর্বশেষ জাতিদাঙ্গার ঘটনায় বেশ কয়েক হাজার রোহিঙ্গা স্থানচ্যুত হয়েছে বলেও জানায় সংগঠনটি৷
প্রসঙ্গত, সোমবার মিয়ানমার সফরে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ এই প্রথম কোন ক্ষমতায় থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট সেদেশ সফর করছেন৷ ওবামা তাঁর সফরকালে সেদেশের প্রেসিডেন্ট থিয়েন সেইন ও বিরোধী দলীয় নেত্রী অং সান সুচির সঙ্গে বৈঠক করবেন৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস মনে করেন, রোহিঙ্গাদের উপর হামলা বন্ধে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের উপর ওবামার চাপ প্রয়োগ করা উচিত৷
এইচআরডাব্লিউ'র তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গারা গত কয়েক দশক ধরেই মিয়ানমারে রাষ্ট্র সমর্থিত বৈষম্য এবং নিগ্রহের শিকার হয়ে আসছে৷ ১৯৮২ সালে প্রণীত মিয়ানমারের নাগরিক আইন অনুযায়ী, রোহিঙ্গারা সেদেশের নাগরিক নয়৷ সেহিসেবে তারা এক রাষ্ট্রহীন জাতি৷
উল্লেখ্য, মিয়ানমারে সহিংসতার কারণে গত কয়েক দশকে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছে৷ এর মধ্যে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার৷ আর অনিবন্ধিত ৪ লাখ৷ মিয়ানমারে সর্বশেষ জাতিদাঙ্গার সময় রোহিঙ্গারা পানিপথে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে চাইলে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাধা প্রদান করে৷ বাংলাদেশ আর কোন রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে রাজি নয়৷