1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন শুরু

১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের আওতায় আনার কাজ শুরু হয়েছে৷ এদিকে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়িতে নতুন করে আগুন দেয়ার খবর পাওয়া গেছে৷

https://p.dw.com/p/2jixW
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Armangue/AP

মিয়ানমারে নাফ নদীর তীরবর্তী এলাকায় নতুন করে আরও পাঁচটি গ্রামে রোহিঙ্গাদের ঘর-বাড়িতে আগুন দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী৷ সোমবার ভোর রাতে আগুনের পর হাজার হাজার রোহিঙ্গা নাফ নদী পাড়ি দিয়ে শাহপরী দ্বীপে প্রবেশ করছে৷ সোমবার সকালেও টেকনাফের শাহপরি দ্বীপ থেকে আগুন ও ধোঁয়া দেখা গেছে৷ সকালে শাহপরী দ্বীপে ছিলেন সাংবাদিক আমানুর রহমান রনি৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নাফ নদীর জেটি থেকে আমরা মিয়ানমারের গ্রামে আগুন এবং কালো ধোঁয়া দেখতে পাই৷ আগুনের কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় মিয়ানমারের নাফ নদীর তীরবর্তী এলাকার আকাশ৷ আগুনের পর ট্রলারে করে আসা আশ্রয়প্রত্যাশী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাঘগুনিয়া, গর্জনদিয়া, খুইন্যাপাড়া, সায়ড়াপাড়া, মাঝেরডিগি ও মংডুর পাহাড় অঞ্চলের সব গ্রামে আগুন দেওয়া হয়েছে৷’’

‘মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বোমাও ছুড়ে মারে’

তিনি বলেন, ‘‘হাজার হাজার রোহিঙ্গা ভোররাত থেকে ট্রলারে করে শাহপরী দ্বীপের দিকে আসে৷ তারা জানায়, আগুন দেয়ার আগে এক ধরনের গ্যাস ছড়িয়ে দেয়া হয়৷ ওই গ্যাসে চোখ জ্বলে৷ বাড়ির বাইরে বের হলেই বাড়ি ঘরে আগুন দেয়া হয়৷ মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বোমাও ছুড়ে মারে৷’’

রনি আরো জানান, ‘‘তারা (রোহিঙ্গা) তিনটি কথাই বলছেন, সেনাবাহিনী, আগুন, বোমা৷’’

এদিকে জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংস পরিস্থিতিতে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন৷ এতে করে আবারও অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে যাচ্ছে৷ সাধারণ মানুষদের জীবনের স্বার্থে আমি সব পক্ষকে সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই৷’’

তিনি বলেন, ‘‘এখন আসলে আক্রান্তদের দিকে মনোযোগ দেওয়ার সময়৷ মিয়ানমার সরকারের উচিত মানবাধিকার ও ত্রাণ সংস্থাগুলোকে মানবিক সহায়তা প্রদানের অনুমতি দেয়া৷’’ আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ত্রাণ কার্যক্রম চালাতে জাতিসংঘ ও রেডক্রসকে অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান তিনি৷

জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ‘‘গত কয়েকদিনে আমরা মিয়ানমার নিয়েই কথা বলছি৷ এই সময়ে ২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে আর এটি সামলানো বাংলাদেশের জন্য কঠিন৷ বাংলাদেশের এমন পদক্ষেপকে আমরা প্রশংসা করি ও স্বাগত জানাই৷’’

জাতিসংঘের সেন্ট্রাল এমার্জেন্সি ফান্ড (সিইআরএফ)-এর মাধ্যমে জার্মানিও এই রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে বলে জানান গ্যাব্রিয়েল। তিনি বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক এই সংকটে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে যে, রাখাইনে টেকসই পরিবর্তন দরকার৷’’ জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কোফি আনান কমিশনের দেওয়া প্রস্তাবগুলো জার্মান সরকার সমর্থন করে বলে তিনি অং সান সুচি’র প্রতি সেগুলো বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানান৷

সিগমার গাব্রিয়েল আরো বলেন, ‘‘জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারকে সমর্থন দিতে প্রস্তুত আছে৷’’

বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের আওতায় আনার কাজ শুরু করেছে৷ সোমবার বিকেল থেকে এই কাজ শুরু হয় বলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট খালেদ মাহমুদ ডয়চে ভেলেকে জানান৷ তিনি বলেন, ‘‘দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারনে সকালে কাজ শুরুর কথা থাকলেও শুরু হয়েছে বিকেলে৷ এই কাজে সহায়তার জন্য ঢাকা থেকে কক্সবাজারে একটি টিম গেছে৷’’

বায়োমেট্রিক রেজিষ্ট্রেশন কেমন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘তাদের নাম, ঠিকানা, ছবি এবং আঙুলের ছাপ নেয়া হবে৷ তবে এ কাজে এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো তাঁদের এক জায়গায় নেয়া৷ আমরা বালুখালিতে দুই হাজার একর জমির ওপরে একটি ক্যাম্প বানাতে শুরু করেছি৷ দু'টি নিবন্ধিত ক্যাম্পের ৩২ রাজার রোহিঙ্গা বাদে বাকি সবাইকে ওই ক্যাম্পে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে৷’’

‘আমরা বালুখালিতে দুই হাজার একর জমির ওপরে একটি ক্যাম্প বানাতে শুরু করেছি’

তিনি আরো বলেন, ‘‘রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ছে, তারা ট্রাকে করে বিভিন্ন জায়গায় চলে যাচ্ছে৷ তাদের এক জায়গায় নেয়া অনেক কঠিন কাজ৷ তাই বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের কাজ কবে শেষ হবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না৷’’

বাংলাদেশে এখন মোট সাত লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী আছে৷ এর মধ্যে তিন লাখ এসেছে ২৫ আগষ্টের পর থেকে৷ এর আগে গত বছরের ৯ অক্টোবরের পর থেকে রাখাইন রাজ্যে একইভাবে হামলার ঘটনা ঘটে৷ ওই সময় প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আসে প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা৷ ওই ঘটনার পর বাংলাদেশ একটি টাস্কফোর্স গঠন করে জরিপ করে মোট চার লাখ রোহিঙ্গা থাকার কথা জানিয়েছিল৷ এবার যোগ হলো আরো তিন লাখ৷ এবং প্রতিদিনই এই সংখ্যা বাড়ছে৷

বাংলাদেশে দু'টি নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প হলো উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের নয়াপাড়া৷ এর বাইরে আরো ১২টি অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প আছে৷

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে... 

১ সেপ্টেম্বরের এই ছবিঘরটি দেখুন৷