1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রেহানা মরিয়ম নূর: সাধারণের অসাধারণ

৭ জুলাই ২০২১

রেহানা যেন পাশের বাড়ির এক মেয়ে৷ ঢাকার মধ্যবিত্ত সমাজেরই চেনা একজন৷ কিন্তু এই সাধারণের মাঝেই অসাধারণ ক্ষমতা আছে- সাদের সেলুলয়েডে এই বার্তা পেলেন কানের দর্শকেরা৷

https://p.dw.com/p/3wAvV
ছবির প্রদর্শনীর পর ডয়চে ভেলের কাছে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ এর নাম ভূমিকার অভিনয় করা আজমেরী হক বাঁধন৷ছবি: Zbaer Ahmed/DW

একজন মানুষকে জীবনে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়৷ কোনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া সত্যিই কঠিন৷ কোনো সিদ্ধান্তের জন্য যদি তাকে কঠিন মূল্য দিতে হয় এবং তা জেনেও কেউ তার অবস্থানে অবিচল থাকলে তাকে দৃঢ় চরিত্রের বলতেই হয়৷ তেমনই এক চরিত্র রেহানা মরিয়ম নূর৷

আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের লেখা ও পরিচালিত ছবিটি এবার কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের আঁ সার্তে রিগা পর্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে ইতিহাস গড়েছে৷  

যার নামে ছবিটি, সেই রেহানা মরিয়ম নূর সিঙ্গেল মাদার৷ ৬ বছর বয়সী এক ফুটফুটে কন্যার মা৷ মেয়েকে একা বড় করা, বাবা, মা ও ভাইয়ের দেখাশোনা, খরচ জোগাড়- সবই করতে হয় তাকে৷ এমন মানুষকে দৃঢ়তো হতেই হয়৷ কিন্তু রেহানা কতটা অবিচল তা বোঝা যায় যখন তিনি তার স্বামীর দেয়া ঘড়ি সবসময় পরে থাকেন৷ মেডিক্যালে কলেজের এই শিক্ষকের জেদ প্রমাণ করতে গিয়ে পরিচালক দেখান, যে তিনি ছাত্রীর নকল ধরার জন্য গিয়ে বসে থাকেন তার পাশে৷ সফলও হন৷  

Cannes | Filmfestspiele | Film Rehana Maryam Noor
কান চলচ্চিত্র উৎসবে টিম ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ছবি: Zbaer Ahmed/DW

গল্পের প্রেক্ষাপট তৈরি করতে গিয়ে এসব দেখান পরিচালক৷ আসল বিপত্তি আসে যখন একজন ছাত্রী আরেক শিক্ষকের কাছে যৌন নিপীড়িত হবার সময় ঘটনাটির একটি অংশ দেখে ফেলেন রেহানা৷ এরপর প্রতিকার চাইতে বারবার বললেও সেই ছাত্রী রাজি হচ্ছিলেন না৷ এরপর রেহানা নিজেই নিজেকে বানান ভিক্টিম৷ মূলত এই ঘটনাকে আবর্তিত করেই ছবিটি৷ অন্যায়ের প্রতিকার চাওয়া আর নিজের জেদ, দুই মিলে রেহানাকে দাঁড় করায় এক ভীষণ কঠিন পরিস্থিতিতে৷

এক কথায় যদি বলি ‘রেহানা মরিয়ম নূর' ছবিটি আমাকে চরিত্রগুলোর কাছে টেনেছে৷ কাউকে সমাজের খুব দূরের মনে হয়নি৷ আরোপিত মনে হয়নি৷

বলা উচিত, মূল চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে অনেক পরিশ্রম করেছেন আজমেরী হক বাঁধন৷ তিনি একটু কুঁজো হয়ে রেহানাকে বাঁধনের থেকে আলাদা করেছেন৷ কাট কাট কথা বলা, প্রতিবাদী চোখ ও মুখের অভিব্যক্তি এসবে ভাল নম্বর পাবেন তিনি ৷  

অন্য যারা অভিনয় করেছেন তাদের মধ্যে আলাদা করে বললে বাঁধনের মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করা আফিয়া জাহিন জাইমার কথা আলাদাভাবে বলতে হবে৷ মা ও মেয়ের টোনাটুনির সম্পর্ক দর্শকদের আনন্দ দেবে৷ কিন্তু শিশুর প্রতি মাঝে মাঝে বেশিই নির্দয় মনে হতে পারে রেহানাকে৷ আবার তার বুক ভাঙা ভালবাসাও বোঝা যায় ভালমতই ৷

বাকি অভিনেতা অভিনেত্রীরাও ভালো করেছেন৷ তবে খুব বেশি ‘স্পেশাল’ কিছু মনে হয়নি৷  

এছাড়া প্রায় পৌণে দুই ঘন্টার ছবিটিতে প্রায় সবকিছু খুব সিনক্রোনাইজড মনে হয়েছে৷ অর্থাৎ অতিরিক্ত কোনো চরিত্র নেই, অতিরিক্ত কোনো বিষয় নেই৷ বাংলাদেশের শিক্ষিত সমাজেও নারীদের ও পুরুষদের ভূমিকা নিয়ে যে স্টেরিওটাইপিং কতটা, তা তুলে ধরতে গিয়ে হসপিটালে দুইজন চরিত্রকে নিয়ে আসা হয়েছে, যেটা না আনলেও খুব একটা ক্ষতি হতো না৷ মনে হয়েছে শুধু ওই কথাগুলো বলার জন্যই তাদের আনা হয়েছে৷  

সবচেয়ে আলাদাভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে চরিত্রগুলোর ব্লকিং-এর কথা৷ প্রতিটি চরিত্র ফ্রেম-এর কোথায় দাঁড়াবে, সেখানে ঠিক কী করবে, দু'একটা জায়গা ছাড়া বাকি সবকিছুই একেবারে পারফেক্ট মনে হয়েছে৷

সাদ-এর ছবির একটা বৈশিষ্ট্য হলো 'Abrupt Cut’ বা হুট করে কেটে অন্য শটে চলে যাওয়া৷ এটা কখনো  কখনো ঝামেলা মনে হতে পারে৷

ছবিটা যখন শুরু হয়, তখন প্রথমেই যেটা মনে হলো ক্যামেরাটা কি একটু বেশি নড়ানো হলো? ক্যামেরার কাজ সার্বিকভাবে ভালো লেগেছে৷ কোনো স্ট্যাটিক শট নেই৷ হাতে ধরে শুট করা হয়েছে৷ ছোট ফ্রেমেও ডেপথ অফ ফিল্ড নিয়ে কাজ করা হয়েছে৷  

সাদ-এর আরেকটা বৈশিষ্ট্য মনে হলো ফিল্মের কালার টোন৷ লাইভ ফ্রম ঢাকা-তে মোনোটোনে কাজ করেছেন তিনি৷ এখানে ব্যবহার করেছেন একটা ব্লুইশ টোন৷ পুরো ফিল্মটি শুট হয়েছে ইনডোরে৷

এছাড়া গল্পটি বলা হয়েছে চরিত্রগুলোর কাছ থেকে৷ বড় সেট তেমন একটা দেখা যায়নি৷ শুধু একটা হলরুমে পরীক্ষা হচ্ছে, এটিই ছিল সবচেয়ে বড় সেট৷  

এম্বিয়েন্স ও ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক অনেক কাজ করা হয়েছে৷ অনেক সাউন্ডের ভিজ্যুয়াল কোনো রেফারেন্স ছিল না৷    

সব মিলিয়ে ছবিটি কেমন হয়েছে তা বলবেন কানের জুরিরা৷ তবে ছবির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ারের সময় কানের ডেবুসি হলের দর্শকরা নীরবে দেখেছেন এবং ছবি শেষে দাঁড়িয়ে মুহুর্মুহ হাততালি দিয়েছেন৷ তাই এই ছবি নিয়ে আরো আশাবাদী হতেই পারেন সাদ গং৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান