1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রেশন দুর্নীতি নিয়ে বাম-তৃণমূল দড়ি টানাটানি

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৭ নভেম্বর ২০২৩

রেশন দুর্নীতির দায় বামেদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। তদন্ত করেননি কেন, পাল্টা প্রশ্ন বামেদের।

https://p.dw.com/p/4YVF6
রেশন দুর্নীতি নিয়ে তৃণমূল ও সিপিএমের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ চলছে।
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, বাম আমলের দুর্নীতির বোঝা বহন করতে হচ্ছে তাকে। ছবি: Payel Samanta/DW

রাজ্যের সাবেক খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক রেশন দুর্নীতিতে ইডি-র হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। আদালতের নির্দেশে তিনি এখন রয়েছেন ইডি হেফাজতে। এ নিয়ে চাপানউতোর চলছে তৃণমূল ও সিপিএমের।

মমতার অভিযোগ

জ্যোতিপ্রিয়র গ্রেপ্তারের পর থেকেই তার পাশে দাঁড়িয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বারবার তিনি আগের বামফ্রন্ট সরকারকে এই অনিয়মের জন্য দায়ী করছেন।

সোমবারও তিনি বলেন, ''উই আর ফেসিং দ্য লিগাসি। ৩৪ বছর চাষিদের থেকে চাল কেনা হত না। এটা ঠিক করতে আমার ১০ বছর লেগেছে। এক কোটি রেশন কার্ড আমরা বাদ দিয়েছি।'' 

মমতার দাবি, ''এক কোটি রেশন কার্ডে বাম জমানায় চাল তোলা হত। ওই রেশন কার্ডের সাহায্যে ভুয়ো ভোট পড়ত। ভুয়ো কার্ড বাদ দিতে সাত–আট বছর সময় লেগেছে। আমরা রেশন কার্ড সব ডিজিটাইড করে দিয়েছি।''

এ ব্যাপারে মমতা ব্যক্তিগত সততার প্রশ্নটিও টেনে আনেন। মুখ্যমন্ত্রী ও সাবেক সাংসদ হিসেবে বেতন-ভাতার প্রসঙ্গ তোলেন। মমতা বলেন, ''আমি কোনো পয়সা নিই না। আমার তো এতদিনে ৪০–৫০ কোটি টাকা জমার কথা। নিই না তো এক পয়সাও।  তবু আমরা চোর?''

রেশন দুর্নীতি নিয়ে বিজেপি-র খাদ্য ভবন অভিযান।
রেশন দুর্নীতি নিয়ে খাদ্য ভবন অভিযান করেছে বিজেপি। ছবি: Payel Samanta/DW

বামেদের জবাব

তৃণমূল নেত্রীর অভিযোগ খারিজ করেছে বামেরা। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ''এত বছর ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল। সিপিএমের একজন চোর মন্ত্রী বা নেতাকে তো খুঁজে বার করতে পারেননি! নিজেই বলেছিলেন, মদন চোর? টুম্পাই কুণাল চোর? মুকুল চোর? সবাই জেলে গিয়েছেন। আবার ‘আমরা চোর' বলে একটা তালিকা দিচ্ছেন!''

সোমবার সিপিএম জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিধানসভা এলাকায় প্রতিবাদ মিছিল ও সভা করে। এই কর্মসূচিতে অংশ নেয়া সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ''মদন মিত্রের গ্রেপ্তারির সময় আমরা সবাই চোর, এই বলে ব্যানার লিখে মিছিল করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এখন বালু'র পাশে থাকতে হলে, আমরা সবাই বালু, আমরা সবাই চাল, কয়লা চোর লিখে মিছিল করুক।''

রেশন ডিলারদের বক্তব্য

পশ্চিমবঙ্গের গণবণ্টন ব্যবস্থাকে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নিযুক্ত রয়েছেন রেশন ডিলাররা। ২০ হাজারের বেশি রেশন দোকানের মাধ্যমে চাল, গম বিলি করা হয় কোটি কোটি রাজ্যবাসীকে।

‘গম থেকে আটা তৈরি করায় অবৈধ কারবারের সূত্রপাত’

রেশন ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিশ্বম্ভর বসু মনে করেন, গম থেকে আটা তৈরি করায় অবৈধ কারবারের সূত্রপাত। তিনি বলেন, ''২০০৪ সালে বাম সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, রেশন দোকানে গমের বদলে আটা দেয়া হবে। এটাই দুর্নীতির উৎস। তৃণমূল সরকারও এই নিয়মে পরিবর্তন আনেনি। এর ফলে চাল ও আটাকলের রমরমা বাড়ে। শুধু মন্ত্রী নয়, খাদ্য দপ্তরের অনেকেই এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত।''

উত্তর দমদমে রেশন দোকান ডিলার শেখ আমিনুল ইসলামের। তিনি বলেন, ''এটা একেবারে অন্য স্তরের ব্যাপার। উপরের বিষয় আমরা আঁচ পাইনি। এখন যেটুকু শুনছি। তবে রেশনে আসা জিনিসপত্র সবসময় ভালো গুণমানের হয় না, এটা দেখেছি।'' এর সঙ্গে আটার প্যাকেজিংয়ের সমস্যা, ওজনে কারচুপির অভিযোগ উঠেছে রেশন দুর্নীতিতে।

বিশ্বম্ভর বলেন, ''আমাদের দোকানে পণ্য পৌঁছে দিয়ে যান রেশন ডিস্ট্রিবিউটাররা। তাদের উপরে থাকেন চাল, আটাকলের মালিকরা। তার উপরে খাদ্য দপ্তর ও এফসিআই। আমাদের যা জিনিস দেয়, আমরা তা বণ্টন করি। এর বেশি কিছু না। তাই কেন্দ্রীয় সংস্থা কোনো রেশন ডিলারকে তদন্তের প্রয়োজনে ডাকেনি।''

টাকা উদ্ধার

শিক্ষা দুর্নীতিতে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছিল। এ বার রেশন দুর্নীতিতে ম্যারাথন অভিযান চালিয়ে নগদ অর্থ বাজেয়াপ্ত করল ইডি। কলকাতার একটি প্যাকেটজাত আটা তৈরির সংস্থার অফিস থেকে এক কোটি টাকা মিলেছে। এ ছাড়া একাধিক জায়গায় তল্লাশিতে আরও ৪০ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে ইডি। তদন্তকারীদের দাবি, এর সঙ্গে রেশন দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নথিও উদ্ধার হয়েছে।

তদন্তে গতি বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। চাল, আটাকলের মালিক বাকিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করার পর এই দুর্নীতির বিপুল সাম্রাজ্য সামনে আসে। মন্ত্রীও গ্রেপ্তার হয়েছেন। পারস্পরিক দোষারোপের পালা চলছে। কিন্তু সঠিক মানের রেশন সামগ্রী বণ্টনের দাবি কি এই তরজায় পূরণ হবে?