1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
অপরাধভারত

রেল লাইনে ছাত্রীর মরদেহ: পশ্চিমবঙ্গে প্রশ্নে নারী নিরাপত্তা

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৯ নভেম্বর ২০২৪

‘‘ওরা আমাকে বাঁচতে দেবে না,’’ মাকে এই কথা বলে মারা গেলেন এক ছাত্রী৷ তার দেহ মিললো রেল লাইনে৷ কাদের হুমকির মুখে পড়েছিলেন মৃত ছাত্রী?

https://p.dw.com/p/4mpfu
আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে মোমবাতি ও দাবির প্ল্যাকার্ড হাতে মিছিলে নারীরা
আর জি করের ঘটনার পর একের পর এক এমন ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গে নারী সুরক্ষা প্রশ্নের মুখে পড়েছেছবি: Amlan Biswas/Pacific Press/picture alliance

আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের পর নাগরিক সমাজ পথে নেমেছে৷ নারী নিরাপত্তার দাবি জোরদার হয়েছে৷ তারা রাত দখলের আন্দোলন করেছেন৷ কিন্তু নারীর বিরুদ্ধে অপরাধের প্রবণতা কমছে না৷ পূর্ব বর্ধমানে ছাত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু তার আরও একটি নমুনা বলে মনে করা হচ্ছে৷

ছাত্রীর দেহ উদ্ধার

পূর্ব বর্ধমানের ধাত্রীগ্রামে বাড়ি মৃত ছাত্রীর৷ দ্বাদশ শ্রেণীর এই ছাত্রী কাছেই কালনা শহরে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে যেত৷ মায়ের সঙ্গে বাড়ি ফিরতো৷ শুক্রবার সন্ধ্যায় পড়া শেষ হওয়ার পর সে মাকে ফোন করে৷ ফোনে তার ভয়ার্ত কণ্ঠ শোনা যায় বলে মায়ের দাবি৷

মৃত ছাত্রীর মা বলেন, ‘‘আমাকে ফোন করলে আমি টিউশন থেকে বাড়ি নিয়ে আসি৷ কালকে ফোন করে বললো, ওরা আমাকে বাঁচতে দেবে না! এরপরই ফোনটা কেটে যায়৷ আর কল করে ওকে পাওয়া যায়নি৷'' পুলিশে খবর গেলে শুরু হয় অনুসন্ধান৷ রাতে জিউধারা এলাকার রেলগেট থেকে উদ্ধার হয় ছাত্রীর দেহ৷

শনিবার কালনা হাসপাতাল থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে ছাত্রীর দেহ৷ সেখানেই ময়নাতদন্ত হয়েছে৷ পুলিশ খতিয়ে দেখছে, কাদের কথা বলতে চেয়েছিল পড়ুয়া৷ কেউ কি তাকে হুমকি দিয়েছিল? কোনো চাপের মুখে পড়তে হয়েছিল তাকে?

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ছাত্রীটি কালনা স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে৷ প্লাটফর্মে উঠছে, আবার নেমে যাচ্ছে৷ এভাবে ইতস্তত ঘুরতে দেখা গিয়েছে তাকে৷ সেই সময় কি কারো সঙ্গে কথা বলেছিল সে? কারো জন্য অপেক্ষা করছিল? পুরো বিষয়টি ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের৷

মৃত ছাত্রীর মা জানিয়েছেন, তার মেয়ে ধাত্রীগ্রাম এলাকায় সেরা ফল করেছিল পরীক্ষায়৷ তার প্রতি কারো ঈর্ষা থাকতে পারে৷ কিন্তু এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে তিনি কিছু বলতে পারেননি৷ কেউ ছাত্রীকে চাপে রেখেছিল কি না, সে ব্যাপারেও তিনি অন্ধকারে৷ পুলিশ তদন্ত করে দেখছে, ছাত্রী আত্মহত্যা করেছিল, নাকি তাকে খুন করে লাইনে ফেলে দেয়া হয়েছে?

মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘ময়নাতদন্ত যাতে সঠিকভাবে হয়, সেজন্য আমি বর্ধমান মেডিক্যালে কথা বলেছি৷ পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে৷ অপরাধী যেই হোক, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷’’

প্রশ্নে নারী সুরক্ষা

আর জি করের ঘটনার পরএকের পর এক এমন ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গে নারী সুরক্ষা প্রশ্নের মুখে পড়েছে৷

দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলিতে এক চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রীর ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়৷ এক্ষেত্রে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ ওঠে৷ তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয় গ্রামে, হামলা চালানো হয় পুলিশ ফাঁড়িতে৷

নদিয়ার কৃষ্ণনগরে এক তরুণীর দগ্ধ দেহ উদ্ধার হয় দুর্গাপুজোর মণ্ডপের একাংশে৷ শহরের জমজমাট একটি এলাকায় এই ঘটনা ঘটে৷

পুরুলিয়ায় নদীর চর থেকে উদ্ধার হয় এক তরুণীর ক্ষতবিক্ষত দেহ৷ কাছেই ঝাড়খন্ড সীমানা৷ সেখান থেকে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকে দুষ্কৃতীরা অপরাধ করেছে বলে অনুমান করা হয়৷

মুর্শিদাবাদের ডোমকলে শিশুকে চকোলেট দেয়ার নাম করে ডেকে নিয়ে নিগ্রহ করার অভিযোগ ওঠে৷ উত্তরবঙ্গের ফালাকাটাতে ছয় বছরের এক নাবালিকাকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ ওঠে৷ অভিযুক্ত মারা যায় গণপ্রহারে৷

শুধু নাবালিকা, শিশু নয়, অন্যান্য নারীরাও এর শিকার হচ্ছেন৷ পূর্ব বর্ধমানের মেমারিতে এক প্রৌঢ়াকে ধর্ষণের চেষ্টা করে দুই যুবক৷

রাজনৈতিক দলগুলিরও দায়িত্ব আছে: শাশ্বতী ঘোষ

পরিসংখ্যান ও পরিস্থিতি

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, সারা দেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে কমছে নারী নিগ্রহের হার৷ যদিওএকটি ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে আর একটি ঘটনা সামনে আসছে

বিভিন্ন ধরনের যৌন অপরাধের যে হিসেব ব্যুরো-র কাছে রয়েছে, তার ২০২২ পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, দেশে এই ধরনের ঘটনা কমছে৷ এই নিম্নমুখী হার শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, অন্যান্য রাজ্যেও৷ এই হার নারীদের বিরুদ্ধে সব অপরাধ, হত্যা ও ধর্ষণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য৷ যদিও হ্রাসের হার অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় এখানে কম৷

এই তথ্য পরিসংখ্যানের সঙ্গে অভিজ্ঞতা মেলে না বলে অনেকের মত৷ তারা গভীরে গিয়ে কারণ অনুসন্ধান করেন৷

সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক সুহৃতা সাহা ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘মেয়েদের পণ্য হিসেবে দেখানো হয়৷ সেটা পাল্টানো দরকার৷ রাষ্ট্র, সমাজ, ব্যক্তি মানুষের মানসিকতা বদলের প্রয়োজন৷ শিক্ষাই একমাত্র সেটা বদলাতে পারে৷ মানুষকে শুধু মানুষ হিসেবে ভাবা ও তার লিঙ্গ পরিচয় দিয়ে না ভাবা প্রয়োজন৷''

নারী সুরক্ষা কতটা আইনশৃঙ্খলার সমস্যা, কতটা সামাজিক ব্যাধি, তা নিয়ে বিতর্ক আছে৷

সমাজকর্মী, অধ্যাপক শাশ্বতী ঘোষ বলেন, ‘‘এটাকে অনেকেই সামাজিক ব্যাধি বলছেন৷ কিন্তু এ কথা বলে দায়িত্ব শুধু সামাজিক সংগঠনগুলির উপর ঠেলে দিলে হবে না৷ এখানে রাজনৈতিক দলগুলিরও দায়িত্ব আছে৷ তাদেরও দেখতে হবে, যাতে এ ধরনের সামাজিক অপরাধ প্রশ্রয় না পায়৷’’

পুলিশের ভূমিকা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন সাবেক পুলিশকর্তা নজরুল ইসলাম৷ ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘পুলিশের একটা ওয়ার্ক কালচার তৈরি হয়ে গিয়েছে৷ শাসক দলের লোকেরা বললে তবে পুলিশ ছুটতে শুরু করবে, কিন্তু তার আগে তারা কিছু করবে না৷ এমনটা চললে অপরাধীরা প্রশ্রয় পাবে৷ অপরাধ কমানো যাবে না৷ অভিযোগ পেলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য