রুপালি পর্দায় একাত্তরের দুঃসময়ের বন্ধুদের কথা
১২ ডিসেম্বর ২০১১ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মহারানী একাত্তরে তাঁর রাজপ্রাসাদের দরজা খুলে দিয়েছিলেন, উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ থেকে আসা শত শত শরণার্থী যেন আশ্রয় পায় তাঁর প্রাসাদে৷ কিংবা সেই দরজির অবদানই বা কম কিসে, যিনি নির্বাসিত বাংলাদেশ সরকারের জন্য পতাকা বুনেছিলেন বিনা খরচায়৷ সেটা ছিল প্রবাসী সরকারের প্রথম পতাকা৷ কলকাতার এক শিক্ষকও একাত্তরে রাস্তায় নেমেছিলেন বাংলাদেশি শরণার্থীদের সহায়তায়৷ একাত্তরে বন্ধুপ্রতিম ভারতের সাধারণ মানুষের এরকম নানা ঘটনা রুপালি পর্দায় জড়ো করেছেন শাহরিয়ার কবির৷ মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা শাহরিয়ার কবির'এর সর্বশেষ সৃষ্টির নাম ‘দুঃসময়ের বন্ধু'৷ ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই প্রসঙ্গে শাহরিয়ার বলেন, ‘‘কোন মুক্তিযুদ্ধে এরকম দেখা যায়নি যে, এক কোটি মানুষকে অন্য একটি দেশ আশ্রয় দেয়৷ একটি দেশকে স্বাধীন করার জন্য অন্য একটি দেশের সতেরো হাজার সৈন্য জীবন দেয়৷ এটা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ঘটেছে''৷
দুঃসময়ের বন্ধু প্রামাণ্যচিত্রটি তৈরি করতে গিয়ে ভারতের অনেকের সঙ্গে কথা বলেছেন শাহরিয়ার কবির৷ রাজনীতিবিদ, লেখক, সংগীতশিল্পী, অভিনয়শিল্পী থেকে শুরু করে একাত্তরের সমরনায়কদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তিনি৷ প্রামাণ্যচিত্রটি তৈরির জন্য ভারতের ত্রিপুরা, মেঘালয়, পশ্চিম বঙ্গ, ঝারখান্ড, নতুন দিল্লী, মহারাষ্ট্রে দীর্ঘদিন ঘুরে বেড়িয়েছেন শাহরিয়ার৷ তিনি বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধে বহু বিষয় এখনো অজানা, অজ্ঞাত রয়ে গেছে৷ যেমন আমাকে মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা বললেন, তাঁর বাবা-মায়ের কথা৷ যুদ্ধ শুরুর পর তাদের গ্রাম যখন শরণার্থীতে ভরে গেল, কেউ গাছতলায়, কেউ রাস্তার উপর আশ্রয় নিতে শুরু করল, অনেকের থাকার জায়গা ছিল না৷ ভারত সরকার তখনও শরণার্থীদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়নি৷ তখন বকুল শর্মা'র মা তাদের জমিতে শরণার্থীদের জন্য ছাউনি তৈরি করে দিলেন৷ তাঁর মা নিজে রান্না করে শরণার্থীদের খাওয়াতেন৷ এমনকি তারা যাতে বিড়ম্বিত বোধ না করেন, সেজন্য সাংমা পরিবার তাদের সঙ্গে একত্রে খেতেন''৷
গত ৬ ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার চল্লিশ বছর পূর্তিতে ঢাকায় প্রদর্শন করা হয় ‘দুঃসময়ের বন্ধু'৷ আগামী আঠারোই ডিসেম্বর কলকাতায় ছবিটি প্রদর্শন করা হবে৷
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক