জিহাদিদের অনলাইন কার্যক্রম যেভাবে প্রকাশ হয়
২৭ অক্টোবর ২০১৫বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা বাড়ছে কিনা – তা নিয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদন দেশে বিদেশে প্রকাশ হচ্ছে নিয়মিত৷ বিশেষ করে গতমাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনকে এই বলে সতর্ক করেন যে, ব্রিটিশ জিহাদিরা বাংলাদেশে উগ্রবাদকে উসকে দিচ্ছে৷ একই সময়ে তাঁর অন্যতম উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জামায়াতকে ‘টেরোর গ্রুপ' হিসেবে ঘোষণা দিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়ে একটি নিবন্ধ লেখেন ওয়াশিংটন টাইমসে৷
বাংলাদেশের সরকার প্রধানের বক্তব্য নিয়ে আলোচনার মধ্যেই বিদেশি হত্যা শুরু হয় দেশটিতে৷ পরপর দু'টি হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে ‘ইসলামিক স্টেট', এমন দাবি তোলে ‘সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ'৷ জিহাদিদের অনলাইন কার্যক্রমের দিকে নজর রেখে আলোচিত গ্রুপটির পরিচালক রিটা কাৎস এই নিয়ে বেশ কয়েকটি টুইট করেন৷
বাংলাদেশের পুলিশ ইতোমধ্যে সে'সব দাবি ভুয়া বলে উড়িয়ে দিয়েছেন৷ পাশাপাশি রিটা কাৎসের উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে৷ প্রশ্নগুলো এমন, তিনি সম্ভবত উদ্দেশ প্রণোদিতভাবে এটা করছেন, বাংলাদেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য৷ তিনি তাঁর দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাননি, এটাও অনেকের দাবি৷
রিটা কাৎসের উদ্দেশ্য বোঝার আগে চলুন দেখে নেই সাইট ইন্টিলিজেন্ট গ্রুপের মতো গ্রুপ বা সংস্থাগুলো কিভাবে কাজ করে৷ এই গ্রুপের মতোই আরেকটি সংস্থা রয়েছে নাম স্টোরিফুল৷ তারা নিজেদের বলে বিশ্বের প্রথম সামাজিক যোগাযোগভিত্তিক সংবাদসংস্থা৷ এই গ্রুপটি কোথাও কোনো বোমা হামলা হলে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে কিংবা অনলাইনে আলোচিত যে কোনো বিষয়ের সত্যতা খোঁজে এবং এ সংক্রান্ত যাকিছু অনলাইনে প্রকাশ হচ্ছে, তা আসল কিনা এবং আসল হলে কারা ‘পোস্ট' করলো তা খুঁজে বের করে৷ পাশাপাশি সেসব প্রকাশের সত্ত্বও তারা সংগ্রহ করে৷ এরপর সিএনএন, বিবিসি বা ডয়চে ভেলের মতো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর মধ্যে যারা ‘স্টোরিফুল'-এর গ্রাহক তারা সেসব কনটেন্ট আইনি অধিকারসহ ব্যবহার করতে পারে৷
বলাইবাহুল্য, এ ধরনের সেবার গ্রাহক হতে ভালো টাকা খরচ করতে হয়৷ স্টোরিফুলের কাজের ধরন আমার নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের সুযোগ হয়েছে৷ ফলে বুঝতে পারে, পেছনের কাজটা কতটা জটিল এবং সময়সাপেক্ষ৷ অনেক বেশি মানসিক চাপ সহ্য করার ক্ষমতাও থাকতে হয়৷ আমি নিজে কয়েকবার কনটেন্ট ভেরিফিকেশনের কাজ করেছি৷ এ ধরনের কাজ করার পর তা বিনামূল্যে বিতরণ করলে কোন সংস্থারই পোষাবে না৷
একটা উদাহরণ দেই৷ সিরিয়ায় গোলাগুলির মাঝে এক ছেলে তার বোনকে রক্ষা করছে, উপরের এই ভিডিও গত বছর গোটা বিশ্বে আলোড়ন তোলে৷ আপাত দৃষ্টিতে ভিডিওটি দেখলে যেকারো বিশ্বাস হবে৷ কিন্তু ভিডিওটা ছিল বানানো৷ স্টোরিফুল প্রথম সন্দেহ প্রকাশ করে যে, এটা নকল ভিডিও৷ পরে বাকিরা জানতে পারে৷ এধরনের কন্টেন্ট ভেরিফিকেশনের জন্য বিবিসির একটি পুরো টিম রয়েছে৷ তাদের কাজের ধরন সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন নিচের লিংকে:
স্টোরিফুলের কথা এজন্য লিখলাম যে, সাইট ইন্টিলিজেন্ট গ্রুপের সঙ্গে তাদের কাজের মিল আছে৷ তবে রিটা কাৎসের গ্রুপটি স্টোরিফুলের চেয়েও যে বেশি শক্তিশালী এবং তথ্যসমৃদ্ধ সেটা তাদের কাজের ধরন দেখলে বোঝা যায়৷
গত কয়েকদিনের শুধু বাংলাদেশে ‘ইসলামিক স্টেট'-এর হামলা নিয়েই আলোচনায় নেই তারা৷ ২৬শে অক্টোবর সৌদি আরবের রিয়াদে বোমা হামলার সঙ্গে ‘ইসলামিক স্টেট'-এর সম্পৃক্ততার দাবি তাদের মাধ্যমে জেনেছে সংবাদমাধ্যম৷ ১২ই অক্টোবর জিহাদিদের সঙ্গে সংঘর্ষে দুই টিউনেশীয় সেনা নিহতের দায় স্বীকার করেছে আল-কায়েদা, সেটা জানিয়েছে তারা৷ ১০ অক্টোবর ফিলিপাইন্সে বিদেশি জিম্মির ভিডিও প্রকাশের খবরও জানিয়েছে সাইট৷ এরকম উদাহরণ অসংখ্য৷ অনেকক্ষেত্রে তারা মার্কিন গোয়েন্দাদেরও পেছনে ফেলেছে৷
শুরুতে লিখেছিলাম, সম্ভবত নারী বলেই রিটা কাৎসকে নিয়ে আলোচনা একটু বেশি হচ্ছে৷ একথা বলার কারণ হচ্ছে, সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ ছাড়াও আরো একটি গ্রুপ, মিডেলইস্ট মিডিয়া রিসার্চ ইন্সটিটিউট, বিদেশি হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে ‘ইসলামিক স্টেট', এমন দাবির কথা জানায়৷ কিন্তু সেই গ্রুপ নিয়ে কোথাও আলোচনা দেখছি না৷ বাংলাদেশে সব আলোচনা এখন রিটা কাৎসকে ঘিরে৷ অথচ বাংলাদেশের কেউ তার সাইটে ঠিক কী বিস্তারিত তথ্য আছে তা পরখ করে দেখার প্রয়োজন মনে করছে না, যেটা বিশ্বের অনেক দেশ, গোয়েন্দা সংস্থা করছে৷
এই বিষয়ে আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷