রাহুল পারেননি, কেজরিওয়াল পারলেন
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০টানা ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিজেপি এবার দিল্লি দখলের স্বপ্নে বিভোর ছিল। তাদের স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে ছেড়েছে আম আদমি পার্টি। অথচ রাজনীতির সমস্ত মাপকাঠিতে ভারতের সবচেয়ে বড় দলের কাছে কেজরিওয়ালের ‘আপ' নেহাতই চুনোপুটি। গত লোকসভা নির্বাচনেও তা প্রমানিত হয়েছে। কিন্তু, এবার বিধানসভা ভোটে কামাল করলেন কেজরিওয়াল। ৭০ আসনের মধ্যে দখল করে নিলেন ৬২টি আসন। যা চমকপ্রদ ঘটনাই বটে। এরপর দলমত নির্বিশেষে কেজরিওয়ালকে অভিনন্দন জানানোর ঢল নেমেছে। বাদ যাননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, ‘‘বিজেপি'র বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রাহুলের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে, চৌকিদার চোর হ্যায়—শ্লোগান থেকে দূরে থেকে হ্যাটট্রিক করেছেন কেজরিওয়াল।''
রাহুল গান্ধী যা পারেননি, বিজেপি'কে ধরাশায়ী করে তা-ই করে দেখালেন কেজরিওয়াল। কী ভাবে? গত লোকসভা নির্বাচন হোক বা তার আগের বিধানসভা নির্বাচন, সব ক্ষেত্রেই কংগ্রেস এবং রাহুল গান্ধী সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করেছিলেন। রাফাল ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীকে ‘চোর' অপবাদ দিতেও ছাড়েননি। বলা যেতে পারে, প্রধানমন্ত্রীকে ব্যক্তিগত নিশানা করেছিলেন কংগ্রেসের তৎকালীন সর্বেসর্বা। বিজেপি-তে এই মুহুর্তে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা নরেন্দ্র মোদী। তাই এই সব ভালোভাবে নেয়নি সাধারণ মানুষ। মোদীর বিশ্বাসযোগ্যতার কাছে ধোপে টেকেনি রাহুলের ফাঁকা আওয়াজ। এইসবই ছিল রাহুলের ভুল। যা থেকে শিক্ষা নিয়েছেন কেজরিওয়াল। রাহুলের পথে পা-বাড়াননি তিনি। নিজে ব্যক্তিগত আক্রমণের শিকার হলেও প্রতিপক্ষের কোনো নেতার প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ করেননি তিনি। শত আক্রমণের জবাব দিয়েছেন শান্ত থেকে। একমাত্র উন্নয়নের বার্তার মধ্যে দিয়ে।
ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাতকারে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ সুগত হাজরা বলেছেন, ‘‘অরবিন্দ কেজরিওয়াল অত্যন্ত বুদ্ধিমান মানুষ। তিনি নিজের উপর আক্রমণকে কৌশলে এড়িয়ে গেছেন। বিজেপি'র হিন্দুত্বের প্রভাবকে কমাতে হনুমান চল্লিশা আওড়েছেন। শাহিনবাগের ধর্ণা নিয়ে বিজেপি'র ছোঁড়া অস্ত্রকে অমিত শাহর দিকেই ছুঁড়ে দিয়েছেন। আসলে রাহুল গান্ধী অনেক ওপর তলা থেকে রাজনীতি করতে অভ্যস্ত। কেজরিওয়াল মোটেই সেটা করেননি। তিনি তৃণণূল স্তর থেকে মানুষের নিত্যদিনের সমস্যা নিয়ে ভেবেছেন।''
গত লোকসভার আগে কংগ্রেস কৃষকদের মাসে ছয় হাজার টাকা ভর্তুকি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল। মোদী সরকার বছরে ছয় হাজার টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেই চার হাজার টাকা কৃষকদের হাতে তুলে দিয়েছিল। কৃষকরা আর রাহুল গান্ধীর প্রতিশ্রুতির দিকে ফিরে তাকাননি। ভোটের মুখে রাহুল মন্দিরে মন্দিরে ঘুরে পুজো দেওয়া শুরু করলেন।
এদিকে, শাহিনবাগ-সহ নানা ইস্যু তুলে ধরে দিল্লিতে বিজেপি যখন কট্টর হিন্দুত্ববাদের প্রচার করেছে, কেজরিওয়াল তখন ‘হনুমান চালিশা' পাঠ করেছেন। কৌশলে মাত দিয়েছেন প্রতিপক্ষকে। সাম্প্রদায়িকতা, বিদ্বেষ, ধর্মীয় মেরুকরমের তাস খেলেছে বিজেপি। সুকৌশলে সেইসব ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন আপ প্রধান। সামনে রেখেছিলেন শুধুই উন্নয়নকে। আর তাতেই ঝাড়ু-ঝড়ে সাফ হয়ে গিয়েছে পদ্ম শিবির।
এবার দিল্লি নির্বাচনে ৫৩.৭ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয়বার ক্ষমতায় ফিরেছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি। কেজরিওয়াল প্রথমবার দিল্লির মসনদ দখলের সময় ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস। তারপর থেকে প্রতিবারই ক্রমশ প্রাপ্ত ভোট কমেছে কংগ্রে