রাস্তায় নামাই একমাত্র রাস্তা
১৪ অক্টোবর ২০১৯অনলাইনে ভোটার পরিচয়পত্র সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ তার পাশাপাশি চলছে ভোটার পরিচিতির সঙ্গে আধার পরিচয়পত্রের সংযুক্তির কাজ৷ আর এই সবই হচ্ছে আসামের মতো পশ্চিমবঙ্গেও সংশোধিত নাগরিকপঞ্জি তৈরি করার প্রক্রিয়া৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থেকে শুরু করে বিজেপির রাজ্য নেতারাও বারে বারে হুমকি দিচ্ছেন, এবার পশ্চিমবঙ্গ থেকে অবৈধ অভিবাসীদের তাড়ানো হবে৷ এবং অবৈধ বলতে নির্দিষ্টভাবে এই রাজ্যের মুসলিম জনগোষ্ঠীকেই বোঝাচ্ছে কেন্দ্র সরকার৷ বিজেপি নেতাদের বক্তব্যে সেই উদ্দেশ্য আর গোপন থাকছে না৷ অমিত শাহর শেষ বক্তব্যে, বৌদ্ধ, জৈন, খ্রিষ্টান, ইত্যাদি বাদবাকি ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নাম করে করে বলা হয়েছে, যে ওঁদের কোনও ভয় নেই৷ ওঁরা থাকতে পারবেন৷ অর্থাৎ বেছে বেছে মুসলিমদেরই তাড়ানো হবে৷
ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের সংবিধানের একেবারে গোড়ার কথাই হল, ধর্মের ভিত্তিতে এদেশে কোনও আইন প্রণয়ন করা যাবে না৷ অথচ কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ঠিক সেটাই করছে, ডয়চে ভেলেকে বললেন গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতির সম্পাদক রঞ্জিৎ শূর৷ তিনি মেনে নিচ্ছেন, যে এই এনআরসি, সিএবি, ইত্যাদি নাগরিকত্ব যাচাইয়ের যাবতীয় পদ্ধতির স্বরূপ বুঝতে ওঁদের কিছুটা দেরি হয়ে গেছে৷ যতক্ষণ না অসমে প্রায় ৪০ লাখ নাগরিকের নাম বাদ পড়েছে নাগরিকপঞ্জি থেকে, ততদিন কারও টনক নড়েনি৷ তবে নাগরিকত্বের মৌলিক অধিকার রক্ষায় তাঁরা যেমন সচেতন হয়েছেন, তেমন সরকারপক্ষও সতর্ক হয়েছে৷
আসামে চূড়ান্ত খসড়া তালিকা থেকে যে ১৯ লাখ বাসিন্দার নাম শেষ পর্যন্ত বাদ গেছে, তাঁদের মধ্যে ১২ লাখই হিন্দু৷ পশ্চিমবঙ্গে সেই ভুল যাতে ফের না হয়, সেই পরিকল্পনা চলছে৷ রঞ্জিৎ শূর বলছেন, এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সবকটি বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলের একজোট হয়ে রাস্তায় নামা ছাড়া দ্বিতীয় কোনও রাস্তা নেই৷ একসময় এই পশ্চিমবঙ্গেই সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে জমি অধিগ্রহণ-বিরোধী আন্দোলনের জেরে যেমন দেশের অধিগ্রহণ আইনই বদলাতে বাধ্য হয়েছিল সরকার, এক্ষেত্রেও সেই একই চাপ তৈরি করতে হবে৷
বস্তুত সেই কাজই শুরু হয়ে গেছে৷ সামাজিক মাধ্যমে তৈরি হয়েছে গোষ্ঠী, যারা এনআরসি-র বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হয়েছে৷ ‘নো এনআরসি'নামে এক অরাজনৈতিক ফেসবুক গ্রুপের সদস্যসংখ্যা এক মাসের মধ্যে ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে৷ লেখক, শিল্পী, সমাজকর্মী, সবাই গ্রুপের সদস্য হচ্ছেন এবং সেখানেও রাস্তায় নামারই ডাক দেওয়া হচ্ছে৷ ওঁরাও বুঝছেন, রাস্তায় নেমে তীব্র গণ আন্দোলন গড়ে তোলা, জনমতের প্রবল চাপ তৈরি করা ছাড়া গতি নেই৷ একমাত্র এভাবেই বর্তমান কেন্দ্র সরকারের বিদ্বেষী নীতিকে রুখে দেওয়া যাবে৷