রাশিয়ার ভ্যাকসিন কি ভারতে তৈরি হবে?
২৬ আগস্ট ২০২০স্পুটনিক কি ভারত এবং রাশিয়াকে ফের কূটনৈতিক ভাবে কাছাকাছি নিয়ে আসতে পারবে? করোনা-কালে রাশিয়ার স্পুটনিক ফাইভ ভ্যাকসিন সেই সম্ভাবনা তৈরি করেছে। বস্তুত এর আগে ১৯৫৭ সালে রাশিয়া যখন মহাকাশে স্পুটনিক রকেট পাঠিয়েছিল, তখনও ভারত তার প্রশংসা করেছিল। ভারতের সঙ্গে তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার সম্পর্কও তখন অত্যন্ত মধুর ছিল।
গত ১১ অগাস্ট রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন করোনা ভ্যাকসিন স্পুটনিক পাঁচ জনসমক্ষে নিয়ে আসেন। পুটিন প্রথমে দাবি করেছিলেন, সব রকম পরীক্ষার পরে তা বাজারে ছাড়া হচ্ছে। এবং এটিই পৃথিবীর প্রথম করোনা ভ্যাকসিন। পুটিনের মেয়ে প্রথম ভ্যাকসিনটি নিয়েছেন বলেও জানানো হয়েছিল। তবে পরবর্তী সময়ে রাশিয়া জানায় ভ্যাকসিনটির তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা শুরু হয়েছে।
বুধবার ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রক রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক করে জানায়, স্পুটনিক পাঁচ নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের আলোচনা শুরু হয়েছে। রাশিয়া চায়, ভারতে এই ভ্যাকসিনের উৎপাদন হোক। ভ্যাকসিনটি ভারতের সঙ্গে রাশিয়া যৌথ ভাবে উৎপাদন করতে চায়। ভারত বিষয়টিতে আগ্রহ দেখালেও এখনই সবুজ সংকেত দেয়নি। ভ্যাকসিনটির বিষয়ে সমস্ত তথ্য রাশিয়ার কাছে চাওয়া হয়েছে।
ভারতে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি করোনা ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষা চলছে। তার মধ্যে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন এবং ভারতের গবেষকদের তৈরি ভ্যাকসিন রয়েছে। আর ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে ভারত অগ্রণী দেশ। তাই ভারতীয় সংস্থায় তাঁদের ভ্যাকসিন বিপুল সংখ্যায় তৈরি করতে চাওয়াটা রাশিয়ার কাছে অস্বাভাবিক নয়। তবে গোটা বিশ্বেই করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে এক ধরনের নতুন কূটনীতি শুরু হয়েছে। রাশিয়া যে ভাবে প্রথম করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কারের কথা জানিয়েছে, তা নিয়ে অ্যামেরিকা এবং ইউরোপে রীতিমতো আলোড়ন হয়েছে। ভ্যাকসিনটির ভিত্তি নিয়েও বহু প্রশ্ন উঠেছে ওয়াকিবহাল মহলে। বস্তুত, সেই প্রশ্নের মুখে রাশিয়াকে স্বীকার করতে হয়েছে যে তাদের ভ্যাকসিনটি চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষায় যায়নি এবং সেটি এখন করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ভারত যদি রাশিয়ার আহ্বান গ্রহণ করে, তা হলে কূটনীতিতে তার প্রভাব পড়বে।
এক সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় ছিল। জওহরলাল নেহরু ১৯৫৫ সালে রাশিয়া গিয়ে বলেছিলেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতের অন্যতম বন্ধু। রাশিয়া মহাকাশে স্পুটনিক পাঠানোর পরে ভারত তার উচ্চ প্রশংসা করেছিল। অন্য দিকে রাশিয়াও প্রথম পঞ্চ বার্ষিকী পরিকল্পনার সময় ভারতকে প্রভূত সাহায্য করেছে। ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধীর আমলেও দুই দেশের সম্পর্ক নিছক কূটনৈতিক ছিল না, তার চেয়েও বেশি কিছু ছিল।
স্পুটনিক ভ্যাকসিন সেই সম্পর্ক আবার ফিরিয়ে আনবে কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। যদিও অনেকরই বক্তব্য, ভারত এখন ভারসাম্যের নীতিতে চলে। অ্যামেরিকা এবং রাশিয়ার ক্ষেত্রেও সেই নীতিই গ্রহণ করা হবে। কূটনৈতিক স্তরে চীন এবং পাকিস্তানকে কাউন্টার করার জন্য এই দুই দেশকেই ভারতের প্রয়োজন।
এসজি/জিএইচ (পিটিআই)