রাশিয়া ইস্যুতে বিভক্ত জার্মানির পূর্ব-পশ্চিম
১২ জুন ২০১৯রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা হিসেবে দেশছেন বিশ্লেষকরা৷ ১৯৬২ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত কমিউনিস্ট শাসনের অধীনে থাকা জার্মানির পূর্বের রাজ্যগুলোতে স্থানীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে৷ এর মধ্যেই রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নেয়ার দাবি জানালেন রাজ্যগুলোর রাজনৈতিক নেতারা৷
সাক্সনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সিডিইউ দলের সদস্য মিখায়েল ক্রেটসমারের মন্তব্যে জার্মানিতে বেশ বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে৷ রাশিয়ার সেইন্ট পিটার্সবুর্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাডিমির পুটিনের সঙ্গে এক অর্থনৈতিক ফোরামে সাক্ষাতের পর তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবরোধ তুলে নেয়ার আহ্বান জানান৷
বৈঠকের পর এক টুইটে ক্রেটসমার বলেন, ‘‘রাশিয়া আমাদের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী৷ আরো ভালো সম্পর্কের জন্য আমাদের অবরোধ তুলে নেয়া উচিত৷''
তবে ক্রেটসমারের নিজের দল থেকেই এসেছে প্রতিবাদ৷ অনেকেই বলছেন, জার্মান সরকারের আনুষ্ঠানিক অবস্থানের বাইরে গিয়ে তাঁর এ মন্তব্য করা ঠিক হয়নি৷ জার্মানির সমর্থন নিয়ে সম্প্রতি ৩১ জুলাই পর্যন্ত অবরোধের সীমা বাড়িয়েছে ইইউ৷
জার্মান পত্রিকা বিল্ড আম সনটাগকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সিডিইউ প্রধান ও ম্যার্কেলের উত্তরসূরী আনেগ্রেট ক্রাম্প-কারেনবাউয়ার সাফ জানিয়েছেন, 'ইউক্রেনে রুশ হস্তক্ষেপ যতোদিন থাকবে অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই৷''
তবে অনেকে ভূ-রাজনীতি বিষয়ে ক্রেটসমারের জ্ঞান নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন৷ মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সের প্রধান ভোল্ফগাং ইশিংগার ক্রেটসমারকে ইঙ্গিত করে একটু ব্যাঙ্গাত্মক সুরেই বলেছেন, ‘‘মিস্টার স্টেট প্রিমিয়ার, আপনার কি কোনো পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আছেন? থাকলে তাঁকে এখনই বরখাস্ত করুন৷''
২০১৪ সালে জার্মানি ও ইইউভুক্ত অন্যান্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে রাশিয়ার ওপর একটি বড় ধরনের অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে৷ এর ফলে বিদেশের বাজারে রুশ পণ্যের সরবরাহ প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ে৷ একই সঙ্গে বেশ কিছু রুশ প্রভাবশালী ব্যক্তির সম্পদও বাজেয়াপ্ত করা হয়৷
মিনস্ক শান্তি চুক্তির বিপক্ষে গিয়ে ২০১৪ সালে ইউক্রেনে সরকারবিরোধী আন্দোলনে মস্কোর অযাচিত হস্তক্ষেপ এবং ক্রাইমিয়া দখল করে নেয়ার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ অবরোধ আরোপ করা হয়েছিল৷ ফলে জার্মানি ও রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সালে কমেছে ৪০ শতাংশ৷
আর একারণে পূর্ব জার্মানির ছয় রাজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশি৷ মস্কোর সঙ্গে টানাপড়েন সত্ত্বেও এই ছয় রাজ্যের সঙ্গে রাশিয়ার অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও মতাদর্শিক সম্পর্ক গভীর৷
মতাদর্শিক দ্বন্দ্ব
পূর্ব জার্মানির বিভিন্ন রাজ্যের রাজনৈতিক নেতারা ক্রেটসমারের পক্ষে তাঁদের মত জানিয়েছেন৷ জার্মান পত্রিকা বিল্ডকে ব্রান্ডেনবুর্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডিটমার ভোইডকে জানিয়েছেন, ‘‘রাশিয়া বিষয়ে পশ্চিম জার্মানদের সঙ্গে আমাদের পূর্ব জার্মানির মানুষদের ভিন্নমত রয়েছে৷'' ভোইডকে ম্যার্কেলের জোট সরকারের দল এসপিডির সদস্য৷
জার্মান দৈনিক ডি ভেল্ট এ বিষয়ে সম্প্রতি এক জরিপ চালিয়েছে৷ জরিপে দেখা গেছে, জার্মানির প্রায় ৫৮ শতাংশ মানুষ রাশিয়ার সঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে চান৷ কিন্তু সাবেক পূর্ব জার্মানির রাজ্য মেকলেনবুর্গে এ হার ৮০ শতাংশে গিয়ে পৌঁছেছে৷
অস্টিন ডেভিস/এডিকে