1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘রাজনৈতিক দলগুলোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে’

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৭ মে ২০২২

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জাতীয় সরকারে বড় কোনো রাজনৈতিক দলের কেউই এখনো সাড়া দেয়নি৷ উল্টো তারা এই প্রস্তাবের সমালোচনা করছেন৷ তবে জাফরুল্লাহর কথা, কেউ সাড়া না দিলে তার কিছু করার নেই৷

https://p.dw.com/p/4BQNn
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীছবি: DW

রাজনৈতিক দলগুলোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে৷ এখানকার রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থা শ্রীলঙ্কার মত হবে৷ তাদের কপালে দুঃখ আছে৷

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা এবং ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সংবাদ মাধ্যমে প্রেস রিলিজ পাঠিয়ে তার জাতীয় সরকারের প্রস্তাব তুলে ধরেন রোববার দিবাগত রাত ১২টার পরে৷ তিনি তার প্রস্তাবিত জাতীয় সরকারে রাষ্ট্রপতি হিসেবে অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান বা ড. কামাল হোসেন এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম প্রস্তাব করেছেন৷ তার প্রস্তাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ছাড়াও তিনি কয়েকটি দপ্তরের দায়িত্বে কারা থাকবেন তাদের নামও উল্লেখ করেছেন৷ তাতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের নামও রয়েছে৷ রয়েছে পেশাজীবীদের নাম৷ তার এই প্রস্তাবের শিরোনাম হলো, ‘‘জাতির সংকট নিরসনে জাতীয় সরকার৷'' 

দেশের যে কোনো নাগরিক তার প্রস্তাব দিতে পারেন: সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স

তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই জাতীয় সরকারকে গণভোটের মাধ্যমে বৈধতা দেয়া হবে৷ তারা দুই বছর দায়িত্বে থাকবেন৷ সংস্কার প্রক্রিয়া এই সময়ের মধ্যে শেষ করে একটি নির্বাচনের মাধ্যমে তারা  নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন৷''

জাতীয় সরকারকে ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে এবং পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে৷ দুই বছরের বেশি মেয়াদ হলে মনে হবে যেন তারা ক্ষমতা দখল করতে এসেছে বলে মনে করেন ডা. জাফরুল্লাহ৷

জাতীয় সরকারের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘‘দেশে লুটপাটে ভরে গেছে, ভোটাধিকার নাই৷ তাই এটা ঠিক করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য জাতীয় সরকার এখন খুবই দরকার৷''

এ নিয়ে তিনি প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে কথা বলবেন কী না জানতে চাইলে বলেন, ‘‘তারা না চাইলে আমি তো আর জোর করে কথা বলতে পারব না৷ তারা যদি গায়ের চামড়া বাঁচাতে চায় তাহলে তো তাদের এই পথে যেতে হবে৷ তারা যদি শ্রীলঙ্কা দেখে না শেখে, পাকিস্তান দেখে না শেখে তাহলে কপালে দুঃখ আছে৷''

তারা বিরাজনীতিকরণের পক্ষে কাজ করছে: মাহবুব উল আলম হানিফ

রাজনৈতিক দলগুলো সাড়া দিচ্ছে কী না? এর জবাবে তিনি বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলগুলোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে৷ এই প্রস্তাবের পর কেউ চক্রান্ত থিওরি বের করেছে৷ কেউ বলছে এটা আর্মি আমাকে দিয়ে করিয়েছে৷ কেউ বলছে আওয়ামী লীগ করিয়েছে৷ আমার কোনো বুদ্ধি নাই! তাদের ভাবসাব দেখে মনে হয় তাদের বুদ্ধিতে আমি চলি৷'' 

তার কথা, তিনি তার প্রস্তাব নিয়ে নিজ উদ্যোগে আলোচনা করতে যাবেন না৷ কেউ চাইলে কথা বলতে পারেন৷

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ডা. জাফরুল্লাহর এই প্রস্তাব নিয়ে বলেন, ‘‘দেশের যে কোনো নাগরিক তার প্রস্তাব দিতে পারেন৷ জাফরুল্লাহ সাহেবও তার প্রস্তাব দিয়েছেন৷ সেটা তার স্বাধীনতা৷ জাফরুল্লাহ সাহেব যা ভালো মনে করেছেন তাই বলেছেন৷ তবে আমাদের দলের অবস্থান হলো নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে৷ সেই নির্বাচনের পর আমরা সরকার পরিচালনায় জাতীয় সরকার গঠন করব৷ সেটা হবে একটা নির্বাচিত সরকার৷ দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান মেরামত করার প্রয়োজন পড়বে, সংস্কার করতে হবে তাই আমরা জাতীয় সরকারের প্রস্তাব করছি৷'' 

আমরা জাতীয় সরকার কথাটি ব্যবহার করি না: মাহমুদুর রহমান মান্না

তার কথা, ‘‘জাফরুল্লাহ সাহেব তো কোনো রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম থেকে কথা বলেননি৷ ব্যক্তিগতভাবে বলেছেন৷ ব্যক্তি হিসেবে তিনি বলতে পারেন৷ আমাদের দল হয়তো পরে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবে৷''

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি ও নতুন রাজনৈতিক জোট সাত দলের শরিক মাহমুদুর রহমান মান্নার কথা, ‘‘আমরা জাতীয় সরকার কথাটি ব্যবহার করি না৷ সাত দলও করে না৷ একটি অনির্বাচিত সরকারকে অপসারণ করে আরেকটি গ্রহণযোগ্য সরকার হবে নির্বাচনকে সামনে রেখে৷ আমরা বলি নির্বাচনের আগে একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার৷ তারা কতদিন থাকবে, কী কী কাজ করবে তা আমরা ঠিক করে দেব৷ তাদের মূল কাজ হবে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা৷ জাফরুল্লাহ সাহেব যা বলেছেন তা দিয়ে তিনি তার নিজের একটা ইচ্ছা বা অভিব্যক্তির প্রকাশ ঘটিয়েছেন৷ এটা তিনি করতেই পারেন৷ এটা তিনি ব্যক্তি হিসেবে করেছেন৷ আমাদের সাত দলের সাথে তার কোনো মিল নাই৷ তার মতের সাথে আমাদের মত যায় না৷''

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ মনে করেন, ডা. জাফরুল্লাহ যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা অনির্বাচিত সরকারের ধারায় ফিরে যাওয়ার মত যা ওয়ান ইলেভেনের সময় হয়েছিলো৷ বাংলাদেশে কোনো অনির্বাচিত সরকারের সুযোগ নেই৷ 

আমি এটাকে রাজনৈতিক ফান মনে করি: ড. শান্তনু মজুমদার

তার কথা, ‘‘যারা জনগণের ভোটে কখনো নির্বাচিত হতে পারবেনা তারাই এই ধরনের সরকারের প্রস্তাব করে৷ তারা বিরাজনীতিকরণের পক্ষে কাজ করছে৷ আর যে লোকটি বার বার বিরাজনীতিকরণের পক্ষে কাজ করেছেন ঘুরে ফিরে তার নামটিই তিনি প্রস্তাব করেছেন৷ বাংলাদেশের যা কিছু অর্জন তা রাজনীতিবিদদের হাত দিয়েই এসেছে৷ এটা মনে রাখতে হবে৷''

তিনি জাতীয় সরকারের এই প্রস্তাব দেয়ায় ডা.জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অথরিটি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. শান্তনু মজুমদার মনে করেন, এটা কোনো সিরিয়াস রাজনৈতিক প্রস্তাব নয়৷ তবে নির্বাচনের আগে একটা ব্রেইন ষ্ট্রমিং৷ 

তার কথা, ‘‘এটার মাধ্যমে নির্বাচনকে যেন আমরা এগিয়ে আনার চেষ্টা করছি৷ তবে ভেবে দেখতে হবে এখনই জাতীয় সরকার বা এইসব বিষয় নিয়ে আলোচনার সময় এসেছে কী না৷ তবে তিনি আইন বা সংবিধান বিরোধী কিছু করেননি৷ যদিও আমি এটাকে রাজনৈতিক ফান মনে করি৷''

তারেক জিয়ার জাতীয় সরকার নিয়ে আওয়ামী লীগের ভাবনা কী?